পেস্তা বাদাম-এর আটটি ভেষজ গুণাগুণ ও ব্যবহার পদ্ধতি

পেস্তা বাদাম (Pistacia vera) মাঝারী ধরনের ঝাড়ীদার গাছ। সাধারণতঃ ৮/১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে দেখা যায়। চির সবুজ গাছ নয়, বৎসরে একবার সম্পূর্ণ পাতা ঝরে যায়। পাতা পরস্পর বিপরীতমুখী নয়, এলোমেলো পাতা ক্রমশ সরু অথচ কিছুটা ডিম্বাকৃতি, চামড়ার মত মোটা ও খসখসে। ফুল ছোট ছোট গুচ্ছাকৃতি, তাতে নানা রঙের সংমিশ্রণ। পেস্তার খোসার উপরিভাগের রঙ সাদাটে ধূসর, খোসা শক্ত। এর মধ্যে থাকে হালকা হলদে ও গাঢ় সবুজের সঙ্গে লালচে আবরণযুক্ত শাঁস। প্রতি ২ বছরে একবার ফল হয়।

পেস্তা বাদাম-এর ব্যবহার

পেস্তার শাঁসের উপরের পাতলা আবরণ:— অগ্নিবর্ধক, বলকর, দাঁত, মাড়ি, হৃদয় ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক, স্তম্ভনকারক, কাস, অতিসার, গলশোথ, মুখপাক, বমন, হিক্কা, কোষ্ঠবদ্ধতা, পিপাসা প্রভৃতি নষ্ট করে।

পেস্তা বাদাম-এর ফুল:— শীতল, শুষ্ক, স্তম্ভনকারক, অগ্নিবর্ধক; কাস, অতিসার ও কোষ্ঠবদ্ধতা নাশক; গলশোথ ও মুখপাক প্রভৃতিতে এর বটী মুখে রেখে চুষতে থাকলে উপকার হয়।

পেস্তার উপরের আবরণহীন পিস্তা (মুজির):— পিস্তার উপরের লালচে আবরণ বাদ দিয়ে অধিক মাত্রায় খেলে আমাশয় ও বৃক্কের ক্ষতি হয়, শরীরে পিত্তের আধিক্য দেখা যায় এবং পিত্তজ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

পেস্তা বাদাম-এর তৈল:— ১০০ গ্রাম পিস্তা থেকে ৬০ গ্রাম সবুজ রঙের গাঢ় মিষ্টস্বাদযুক্ত সুগন্ধ তেল পাওয়া যায়। এটি উষ্ণবীর্য সম্পন্ন। আধকপালিতে কপালের দু’ধারে বাষ্পস্বেদ (গরম জলে কাপড় ভিজিয়ে নিংড়ে সেঁক দিতে হবে) দেওয়ার পর এই তেলের নস্যি নিলে উপকার হয়। এই তেল মদের সঙ্গে পরিমাণমত মিশিয়ে খেলে মদের বিষক্রিয়া নষ্ট হয়। এটি স্মৃতিবর্ধক, হৃদ্দৌর্বল্যনাশক, বমন বা বমি বমি ভাব নষ্ট করে। কাস, উন্মাদ, মুখক্ষত, রক্তদুষ্টি ও যকৃতের ক্রিয়া হ্রাসে ব্যবহার্য।

ইউনানি মতে:— পিস্তা উষ্ণবীর্য, তীক্ষ্ণ, শুষ্ক, স্মরণশক্তিবর্ধক, হৃদয়-মস্তিষ্ক-আমাশয়ের শক্তিবর্ধক, কামোদ্দীপক, ক্ষীণ ব্যক্তিকে মোটা করে। কাস, উন্মাদ, বমন, বমনেচ্ছা, পেট কামড়ানি, যকৃৎ বৃদ্ধি ও বৃক্কের ক্রিয়া হ্রাসে ব্যবহার্য। পিস্তা চিবুলে মাড়ি মজবুত হয়। শুষ্ক কণ্ডুতে (চুলকানিতে) পেস্তা গাছের ছাল ও পাতা সিদ্ধ জল দিয়ে শরীর ধুলে ভাল কাজ হয়। ঐ জলে মাথা ধুলে চুল মজবুত হয় ও উকুন মরে যায়।

আরো পড়ুন:  মিশ্রিদানা বা চিনিপাতা-এর উপকারিতা

পেস্তা বাদাম-এর উপকারিতা

১. অগ্নিমান্দ্যে:— যেক্ষেত্রে শাক-সবজী খাওয়া অগ্নিমান্দ্যের কারণ হয়, অথচ মাছ, মাংস খাওয়ার প্রতিবন্ধকতা আছে, সেক্ষেত্রে পেস্তা (শাঁসের বহিরাবরণ পাতলা আবরণসহ) ৫ গ্রাম জলে বেটে সরবতের মত সকালে খালি পেটে খেতে হবে, প্রয়োজনে এভাবে বৈকালেও আর একবার খাওয়া চলে। নিয়মিতভাবে মাসখানেক খেলে লিল প্রায় ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হয়ে যায়।

২. অপুষ্টিতে:— খায়-দায়, ঘোরে-ফেরে, কোন রোগের লক্ষণ নেই, অথচ অপুষ্টিতে ভুগছে, ভালভাবে খবর নিলে দেখা যাবে; তারা সুষম খাদ্য না পেলেও একেবারে অসার খাদ্যও খায় না, আর এই ধরনের অবস্থাটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কৈশোরের প্রারম্ভেই দেখা। এক্ষেত্রে ৩ গ্রাম পেস্তা জলে বেটে সরবতের মত করে সকালে খালি পেটে একবার ও একইভাবে বৈকালে একবার করে কিছুদিন খেতে হবে। অবস্থার পরিবর্তন হলে প্রত্যহ একবার করে আরও কিছুদিন খাওয়ার দরকার।

৩. দৌর্বল্যে:— দুর্বলতা নানা কারণে আসতে পারে— খাওয়া-দাওয়ার স্বাভাবিকতা না থাকলে এবং জীবনযাত্রায় ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে যেমন দুর্বলতা আসে, তেমনি বহু রোগের উপসর্গ হিসেবেও দেখা দেয়। যে জন্যই হোক না কেন, পেস্তা ৫ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে সকালে ও বৈকালে দু’বেলা সরবতের মত করে খেতে হবে। মাসখানিক খেলে বুঝতে পারবেন।

৪. শুক্রাল্পতায়: বয়স কাল বা ঋতুর স্বভাব না মেনে অত্যধিক যৌনজীবন যাপন শুরু করার ফলে যেকোন লোকের যেকোন বয়সে এ অবস্থা আসাটা খুবই স্বাভাবিক। তবে যৌবনে এ অবস্থা হঠাৎ করে আসে না বলে বেশির ভাগ লোকেই ভুল করেন। আর যখন অনুভব করা যায়, তখন হায় হায় করা ছাড়া পথ থাকে না। এ অবস্থায় ঘাবড়ে যাবার কারণ নেই। বয়সটা যদি বার্ধক্যের কোঠায় না গিয়ে থাকে, তাহলে তো প্রায় পুনর্যৌবন লাভের মতই অবস্থা হতে পারে। যদি ৫ গ্রাম মাত্রায় পেস্তা জলে বেটে খানিক হালকা গরম দুধ ও ২ চা-চামচ চিনির সঙ্গে মিশিয়ে সকালে একবার এবং বিকালে একবার—এভাবে মাস তিন-চারেক খাওয়া যায়।

আরো পড়ুন:  পাহাড়ি জাতা কানশিরা দক্ষিণ এশিয়ার ভেষজ বিরুৎ

৫. উত্তেজনাহীনতায়:— বয়সটা কাঁচা, জীবনযাত্রার মানও উঁচু দরের, কিন্তু সব থেকেও যেন কিছু না থাকার অবস্থা, এটা আসে অনেক কারণে; এক্ষেত্রে উপরিউক্ত পদ্ধতিতে পেস্তার ব্যবহার মাস তিনেক করলে পর দু’জনেই বুঝতে পারবেন দ্রব্যটির গুণের রহস্য।

৬. স্মৃতিহ্রাসে:— সব ঠিকঠাক, কিন্তু বড় ভুলোমনা, কিছুতেই স্মৃতিতে ধরে রাখা যাচ্ছে না, এক্ষেত্রে উপরিউক্ত পদ্ধতিতে পেস্তা খেতে হবে ২/৩ মাস। ছোটদের মাত্রা বয়স অনুপাতে হবে, ওটি বড়দের মাত্রা। অবশ্য বেশি বয়সে বা কোন রোগের কারণবশতঃ স্মৃতি হ্রাস হলে দ্রুত কাজ হয় না, কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারেই হয় না।

৭. বাতরোগে:— দুর্বলতা, হজমও ভাল হয় না, কোষ্ঠবদ্ধতা, জীবনীশক্তির হ্রাস, সেই সঙ্গে গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা, অথচ ফোলা বা জ্বর নেই; এক্ষেত্রে ৫ গ্রাম পেস্তা জলে বেটে সরবতের মত করে সকালে একবার এবং বিকালে একবার এভাবে কিছুদিন খেতে হবে। ধীরে ধীরে সব উপসর্গগুলো চলে যাবে।

৮. অতিসারে:— পাতলা দাস্ত, পেটে বায়ু জমা, ক্ষিদে ঠিক মতো হয় না, অরুচি, কখনো কখনো হিক্কা, বমনেচ্ছা, পিপাসা থাকে; এক্ষেত্রে পেস্তার ছিলকা (শাঁসের উপরের পাতলা আবরণ) ১ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে জলে বেটে এভাবে সকালে, বিকালে ও রাত্রে প্রত্যহ তিনবার করে খেতে হবে। ২/৩ দিন খেলে ঠিক হয়ে যাবে। অবশ্য এক্ষেত্রে পিস্তেকা ফুল ২ গ্রাম মাত্রায় জলে বেটে দিনে তিনবার করে খেলেও কাজ হয়।

CHEMICAL COMPOSITION

Pistacia vera Linn.

Pista kernels contain: moisture 5.6, protein 19.8, fat 53.5, carbohydrates 16.2, fibre 2.1, mineral matter 2.8, calcium 0.14 and posphorus 0.43%; iron 13.7 mg., carotene (as vitamin A) 240 i.u.; thiamine 0.67, reboflavin 0.03; nicotinic acid 1.4 mg., low melting fatty oils 50%, unsapon matter 0.4-1.0%, fatty acids (myristic 0.6, palmitic ৪.2, stearic 1.6, oleic 69.6 and linoleic 19.8%). Nuts and Seeds contain: pectin as calcium salt. Galls contain: tannins 50%. 1.paras contain. shilmiracid

আরো পড়ুন:  কালা ডাঁটি ঢেকিয়া গ্রীষ্মমন্ডলী দেশের ভেষজ প্রজাতি

Tree contains: resin

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ৭০-৭২।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Safa.daneshvar

Leave a Comment

error: Content is protected !!