ভূমিকা: পাতাহীন ডেনড্রোবিয়াম বা ফাসিয়া মাছ (চাকমা) (বৈজ্ঞানিক নাম: Dendrobium aphyllum) এক প্রকারের অর্কিড জাতীয় ভেষজ লতা। শোভা বর্ধনের জন্য লাগানো হয়।
পাতাহীন ডেনড্রোবিয়াম বা ফাসিয়া মাছ-এর বর্ণনা:
উদ্ভিদ বৃক্ষাশ্রয়ী। কান্ড ৯০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, চেপটা, শায়িত, প্রায় মুষলাকার, সর্বত্র পত্রময়। পাতা ডিম্বাকার-বল্লমাকার, ১৫ × ৪ সেমি, দীর্ঘগ্র। পুষ্প পর্বে ২-৩টি, ফ্যাকাশে গোলাপী, সুগন্ধিময়, বৃত্যংশ এবং পাপড়ি গোলাপী থেকে ফ্যাকাশে বেগুনি। বৃত্যংশ আয়তাকার-বল্লমাকার। পাপড়ি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত, আয়তাকার। লিপ হলুদ, বর্তুলাকার, রোমশ, শীর্যের দিকটা সিলিয়াযুক্ত, পা বেঁকে গিয়ে পাদদেশ নলাকার। কলাম পদসহ ৬-৭ মিমি লম্বা। ফল মুষলাকার।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩৮ (Abrahar) and Vatsala, 1981).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
অরণ্যের বৃক্ষ। ফুল ধারণ ঋতু এপ্রিল-মে (Hooker, 1890). বংশ বিস্তার হয় কান্ডসহ মূলাকার কান্ড পৃথকীকরণের মাধ্যমে। এই প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য টিস্যু কালচার পদ্ধতি সর্বোত্তম।
বিস্তৃতি: ভারত এবং মায়ানমার। বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি বান্দরবান, চট্টগ্রাম, ঢাকা, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং সিলেট জেলায় পাওয়া যায়।
ব্যবহার: এই প্রজাতির সুদৃশ্য পুষ্পের উদ্যানতাত্বিক এবং ভেষজ গুণাবলী বিদ্যমান।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা আদিবাসীরা বিকৃত মাথা বিশিষ্ট সদ্যজাত শিশুর চিকিৎসায় এই প্রজাতির পাতা ব্যবহার করে থাকে। প্রথমে তারা সঠিত ভাবে পাতার পেষ্ট তৈরি করে এবং তারপর মাথার অস্বাভাবিক বা বিকৃত অংশে ঐ পেষ্ট ব্যবহার করে। এই চিকিৎসা দীর্ঘদিন ধরে চালাতে হয় (Huda, 2000).
পাতাহীন ডেনড্রোবিয়াম বা ফাসিয়া মাছ-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১২ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ফাসিয়া মাছ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত; কারণ উদ্যানতাত্বিক ব্যবহারের জন্য মাত্রাতিরিক্ত আহরণ এবং পোষক বৃক্ষ কর্তনের ফলে আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। বাংলাদেশে ফাসিয়া মাছ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি বর্তমানে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম কে হুদা (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪০-৪১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: lienyuan lee
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।