আমি কখনও ভুলি না
কিভাবে
তুমি আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিলে
এক শশাকের রাত্তির।
আকাশের চোখ ধুলো দিচ্ছিল
বাইরে
মরুভূমির হাওয়া।
অন্ধকারে রিনটিন রিনটিন করে
একদল উট
বেশ একটু নাকউঁচুভাবে
শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে যাচ্ছিল।
রাস্তার ওপাশে ওটা কী গাছ
আমি জানি না
বাগানে ফুটে আছে ওটা কী ফুল
আমি জানি না।
আমি পরদেশী,
এ শহরে
নতুন।
কিছুটা দূরে
মাটি থেকে একটু উঠে
গাড়ির আলোগুলো
সারাক্ষণ উর্ধ্বশ্বাসে
নিজেদের মধ্যে কাটাকুটি খেলছিল।
যেন কোনো পোড়-খাওয়া মানুষের
কপালের রেখা।
হঠাৎ আমার চোখের জল পাথর হয়ে গিয়ে
ভয়ঙ্কর ভারী করে তুলেছিল
আমার কাঁধের ওপর চেপে বসা
এক অদৃশ্য শবাধার।
আমি সেইদিন বুঝেছিলাম।
জীবনের ভার মৃত্যুর চেয়ে হালকা।
আমার মনে পড়ছিল
এক নিষ্ফল জীবনের কথা
নিজের দেশ, নিজের কালের কথা
আমার মন কেমন করছিল।
হাতের ঘড়িতে
ধরে রেখেছিলাম আমার দেশের সময়।
আমি পরদেশী,
এ শহরে
নতুন।
আমার দিকে
গড়িয়ে গড়িয়ে আসছিল সহানুভূতির শব্দ,
হাত বাড়িয়ে দিয়ে
তার একটিকেও আমি ধরতে পারছিলাম না।
হঠাৎ উঠে এসে
তুমি আমার হাত ধরেছিলে
নিঃশব্দে।
কোনো কথা না বলে
কিভাবে
আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিলে সেই শকের রাত্তির –
তুমি ভুলে গেলেও আমি কখনও ভুলিনা ॥
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।