মেঘেদের হাত ধরে আমার উধাও যাত্রা গ্রহ হতে গ্রহে,
আমার চক্রান্ত শুধু ট্রামের চাকার নিচে দুর্ঘটনা আনে
চন্দ্রাহত যুবকের; আমার অক্লান্ত গান নক্ষত্র বিরহে;
নির্জন মাঠের চিন্তা ছুঁড়ে দিয়ে বিকালের মিছিলের পানে,
শহর বিস্বাদে ঢেকে, ডাকি: ‘ঝাউ-ঝুমঝুমির ছায়ায় এসো হে,
প্রজাপতি পায় নাকো এরােপ্লেনের শব্দ বাতাসের কানে,’
মর্তের আকাঙ্ক্ষাদল ছিঁড়ে দিয়ে পরীদের পাখার পিছনে,
অদৃষ্টের অন্ধ খাদে জীবনকে ছেড়ে এসে অবসাদভরে,
বিষাদের বিষলিপ্ত কবিতাকন্যারে ধার দিই জনে জনে,
প্রণয়ের কাহিনীকে প্রবৃত্তির হাতে বেঁধে মুহূর্তের জ্বরে
মহৎ প্রচ্ছদ দেওয়া; তাবপর পিঠ রেখে সম্মুখ জীবনে
বিশ্বস্ত হৃদয় খোঁজা,—সকল শূন্যতা যাতে প্রেম হয়ে ঝরে;
পশ্চিমের লাল মেঘ অন্ধ হয় পৃথিবীর আশ্চর্য খামারে,
হলুদ ঘাসের প্রান্তে ট্রামের নিস্ফল সুর দীর্ঘমান তারে।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।