আফগানিস্তান সাম্রাজ্যবাদ পীড়িত পুঁজিবাদ অনুসারী শোষণমূলক রাষ্ট্র

আফগানিস্তান বা আফগানিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্র (ইংরেজি: Islamic Republic of Afghanistan) দক্ষিণ এশিয়াস্বৈরতন্ত্র শাসিত পর্বতময় দেশ। রাশিয়া, ইরান, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে তার সাধারণ সীমান্ত রয়েছে। রাশিয়া থেকে ভারতে এবং ইউরােপ থেকে এশিয়ায় যাওয়ার সংক্ষিপ্ততম পথটি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে।

আফগানিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী সুপ্রতিবেশীসুলভ ও সহযােগিতার সম্পর্ক রয়েছে। আফগানিস্তানের অর্থনীতি ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় এই উভয় খাতেই বিন্যস্ত এবং এদের পারস্পরিক সুবিধাজনক সহযােগিতা তার অর্থনীতিতে উদ্দীপনা যোগায়।

সাবেক সােভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সাহায্যে অনেকগুলি বৃহৎ শিল্পপ্রকল্প নির্মাণ সহ আফগানিস্তান তার পরিবহণ ও জলসেচ ব্যবস্থা উন্নত করেছিল। এই প্রসঙ্গে সােভিয়েত সাহায্যে নির্মিত তুরগুন্দি ও কান্দাহার সংযােজক পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ মােটর সড়ক এবং আমুদরিয়া তীরের শিরখান ও রাজধানী কাবুলের মধ্যেকার ট্রান্স-হিন্দুকুশ হাইওয়ে উল্লেখ্য। এই শেষােক্ত সড়কের জন্য কাবুলের সঙ্গে উত্তরের প্রদেশগুলির দুরত্ব অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে তৈল এবং গ্যাসের সন্ধান ও নিষ্কাশনে সােভিয়েত বিশেষজ্ঞরা সাহায্য দিয়েছিল।

নতুন শিল্পপ্রকল্পগুলি আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে মজবুত করেছে। কিন্তু কৃষি আজও অর্থনীতির প্রধান শাখা এবং এতেই দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ কর্মরত। শস্য, প্রধানত গমই এখানকার মূল ফসল। তাছাড়া ধান, ভুট্টা ও বার্লিই উল্লেখ্য। আফগানিস্তান ফল ও আঙুরে সমদ্ধ। মেষপালনই পশুপালনের প্রধান শাখা এবং এ থেকেই প্রচুর আস্ত্রাখান, চামড়া ও পশম উৎপন্ন হয়।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম ও শহরের সাংস্কৃতিক মানও উন্নীত হচ্ছে। এখানকার ১০ শতাংশ মানুষ শহরবাসী। ২০১৫ সালের হিসাব অনুসারে রাজধানী কাবুলের  জনসংখ্যা ৪৬ লক্ষ ৩৫ হাজার। কাবুল দেশের বৃহত্তম শিল্প ও সংস্কৃতি কেন্দ্র। এখানকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় কর্মীরা প্রশিক্ষণ লাভ করে।

দেশে গণতান্ত্রিক জাতীয় বিপ্লব জয়লাভের পর আফগানিস্তান গণপ্রজাতন্ত্র ঘােষিত হয়েছে। আফগানিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম গণসরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সরকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আরো পড়ুন:  তুরস্ক প্রজাতন্ত্র পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদ অনুসারী শোষণনির্ভর এশিয়ার স্বৈরতন্ত্রী রাষ্ট্র

আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা দূরীকরণ, স্বাধীন জাতীয় অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা, দেশের শিল্পায়ন সহ জনগণের জীবিকার মানােন্নয়নের লক্ষ্যে মেহনতি কৃষকদের স্বার্থে গণতান্ত্রিক কৃষিসংস্কার সাধিত হয়নি এবং শিল্পে রাষ্ট্রীয় খাত মজবুত করার উপর বিশেষ জোর দেয়া হয়নি।

বিপ্লবী জাতীয় সরকারের গৃহীত গুরত্বপূর্ণ ব্যবস্থাদির মধ্যে সমাজজীবনের গণতন্ত্রীকরণ, জাতীয় সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান বিশেষ উল্লেখ্য ছিল। কিন্তু আফগানিস্তানের উপর সাম্রাজ্যবাদী হামলা ও সেখানে দস্যুদল পাঠানাের ফলে এইসব সমস্যার সমাধান কঠিন হয়ে উঠছে। সােভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বন্ধুত্ব, সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক ও সহযােগিতা চুক্তির ভিত্তিতে দেয় সােভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্যে আফগানিস্তান প্রতিবিপ্লবী দঙ্গলদের হামলাগুলি সাফল্যের সঙ্গে প্রতিহত করতে পারলেও মার্কিন হামলাগুলিও আফগানিস্তান প্রতিহত করে চলেছে।

তথ্যসূত্র:

১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১৩৭-১৩৮।

Leave a Comment

error: Content is protected !!