মার্কিন মানবাধিকার নিয়ে চিন প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করছে

চীন কয়েক বছর ধরেই গণহত্যাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভয়াবহ মানবাধিকার সংকটের’ কঠোর সমালোচনা করে আসছে। মার্কিন অভিবাসন নীতিসহ সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সমালোচনায় মুখর রয়েছে বেইজিং।

২০১৭ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে চীনের বিরুদ্ধে নির্যাতন, যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ না করেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, রাজনৈতিক অধিকার দলন, জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন ও অন্যান্য অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।

চীনের মন্ত্রিসভা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের জবাবে বলেছে, যেখানে সেখানে বন্দুকজনিত সহিংসতা ও উচ্চমাত্রার নিপীড়নের মতো সমস্যায় ভুগছে যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন বিমান হামলা হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে তারা। চীনা মন্ত্রিসভা আরো বলেছে, ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টির আড়ালে মানুষের কানে বাজতে থাকা বন্দুকের আওয়াজ, বর্ণবাদী বৈষম্য ও অর্থের দাপটে ভুগতে থাকা নির্বাচনী প্রহসন — সবকিছু মিলিয়ে মানবাধিকারের স্বঘোষিত প্রবক্তা নিজেই তার আপন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানবাধিকার নামের কুহককে স্পষ্ট করেছে।’

চীনা মন্ত্রিসভা মার্কিন ড্রোন হামলার কথা উল্লেখ করে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র বহুবার অন্যান্য দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে তারা নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে।’ জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার জাইদ রাদ আল-হুসেইন গত বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, অভিবাসী, মেক্সিকান ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য ‘ক্ষতিকর ও বর্ণবাদী নিপীড়নে ইন্ধন জোগায়’। চীনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে বেইজিং বলেছে, কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে চীন মানবাধিকারকে সমুন্নত রেখেছে।[১] 

২০১২ সালেও মার্কিন সরকার ও তার পদলেহি প্রচারমাধ্যমের ধারাবাহিক সমালোচনার জবাব দিয়েছিল চীন সরকার। চীন ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্রমাগত ধারাবাহিক সমালোচনা করে থাকে মার্কিনপন্থি প্রচারমাধ্যম। গত ২৫ মে, ২০১২ তে “ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০১১” নামে এক বিস্তারিত প্রতিবেদন চিন সরকার প্রকাশ করেছে।

আরো পড়ুন:  মেহনতি ও শোষিত মানুষের অধিকার ঘোষণা

চিনের প্রতিবেদন মার্কিন সরকারের এবং সেদেশের প্রচারমাধ্যমের তথ্য ও উৎসের উপর নির্ভর করেই তৈরি। এই প্রতিবেদন মূলত মানবাধিকারের বিভিন্ন নীতি যেমন মার্কিনিদের বিশাল আয় বৈষম্য, বিশাল কারাভোগের হার, জাতিগত বৈষম্য, কর্মহীন ও গৃহহীনতার উচ্চহার, স্বাস্থ্যসেবার অভাবের হার, অকুপাই আন্দোলনে তীব্র দমন-পীড়ন, অভিবাসীদের উপর পীড়ন, জাতীয় নিরাপত্তা খাতে ব্যায় বৃদ্ধি, অন্য জাতির উপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ ইত্যাদির ভিত্তিতে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল জনগণ প্রতিবেদনটিকে স্বাগতম জানিয়েছে। চিনের এই প্রকাশ্য সমালোচনা মার্কিনের কপটতাকে উচ্চে তুলে ধরেছে।

২৪ মে মার্কিন সরকারের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পরই চিনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিল তথ্য অফিস এই প্রতিবেদন প্রকাশ করলো। চিন এ প্রতিবেদনে সঠিকভাবেই তুলে ধরেছে যে ওয়াশিংটন ২০০ রাষ্ট্রের সমালোচনা করলেও তার নিজ দেশের যন্ত্রণাকর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নিরব থেকেছে। চিনারা সারা পৃথিবীর জনগণের সামনে প্রকাশ করেছে মার্কিন জনগণের মানবাধিকারের করুণ অবস্থা এবং তারা আশা করে মার্কিন সরকার তার নিজস্ব ব্যাপারে মনোযোগ দেবে।

মার্কিন সরকারের প্রতিহিংসামূলক মানবাধিকার প্রতিবেদন অনবরত মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে। এছাড়াও মার্কিন সরকার চীনের জনসাধারণের যে সমালোচনা করে তা অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান আক্রমনাত্মক অবস্থানের কারণে চীনের নেতাদের প্রতি একরকম চাপ থাকলেও মার্কিন গণশত্রু সরকার চীনের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না। যদিও চীনের এই প্রতিবেদন মার্কিন জনগণের পরাধীনতাকে তুলে ধরেছে।

চীন সঠিকভাবে দেখিয়েছে যে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২০০টি দেশ ও অঞ্চলের মানবাধিকারের সমালোচনা করার দম্ভ দেখায়, তখন মার্কিন রক্তপিপাসু সরকার “নিজের দুর্নীতিপরায়ণ মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি কথা বলে না এবং নিজেদের সম্পর্কে নীরব থাকে।” চীনারা তাদের নিজস্ব রিপোর্ট প্রকাশ করেছে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকার মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে তাদের নিজের অপকর্ম ও গণহত্যাগুলোকে খেয়াল করার জন্য।”[২]

আরো পড়ুন:  বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার

তথ্যসূত্র:

১. ডেস্ক বণিক বার্তা. “যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার সংকটের সমালোচনায় মুখর চীন.” বণিক বার্তা , 10 Mar. 2017, bonikbarta.net/bangla/news/2017-03-10/109525/–যুক্তরাষ্ট্রে-মানবাধিকার-সংকটের-সমালোচনায়-মুখর-চীন/.
২. Griswold , Deirdre. “China’s Report on U.S. Human Rights.” Workers World, 30 May 2012, www.workers.org/2012/world/china_0607/.

Leave a Comment

error: Content is protected !!