[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Anser anser সমনাম: Anas anser Linnaeus, 1758 বাংলা নাম: মেটে রাজহাঁস, ধূসর রাজহাঁস (অ্যাক্ট) ইংরেজি নাম: Greylag Goose জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Anatidae গণ/Genus: Anser, Brisson, 1760; প্রজাতি/Species: Anser anser (Linnaeus, 1758)[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Anser গণে ৩টি প্রজাতি রয়েছে এবং পৃথিবীতে রয়েছে ১০টি প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশের প্রজাতি তিনটি হচ্ছে ১. বড় ধলাকপাল রাজহাঁস, ২. মেটে রাজহাঁস, ৩. দাগি রাজহাঁস। আমাদের আলোচ্য পাখিটি হচ্ছে বড় মেটে রাজহাঁস।
বর্ণনা: মেটে রাজহাঁস পাটলবর্ণের ঠোঁট ও পা এবং লম্বা গলার বড় জলচর পাখি (দৈর্ঘ্য ৮২ সেমি, ওজন ৩ কেজি, ডানা ৪৫ সেমি, ঠোঁট ৬.২ সেমি, পা ৭ সেমি, লেজ ১৩.৫ সেমি)। প্রাপ্ত—বয়স্ক পাখির মাথা ও গলা হালকা ছাই রঙের; কালচে কোমর ও উপরের লেজ-ঢাকনি সাদা; দেহতল ধূসর বাদামি; তলপেট সাদা; ওড়ার সময় ডানার ফ্যাকাসে সম্মুখভাগ স্পষ্ট চোখে পড়ে। এর চোখ বাদামি; ঠোঁট লালচে সাদা থেকে পাটল বর্ণের, ঠোঁটের আগা হালকা খয়েরি ও সাদায় মেশানো; পা ও পায়ের পাতা প্রায় পাটল বর্ণের। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারায় পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্ত—বয়স্ক পাখির হালকা খয়েরি পিঠ ও পেটের পালকের বেড় অস্পষ্ট। এই প্রজাতির ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে A. a. rubrirostris বাংলাদেশে দেখা গেছে।[১]
স্বভাব: মেটে রাজহাঁস নদ-নদী, হ্রদ, নিচু জলাবদ্ধ জমি, আর্দ্র তৃণভূমি ও সদ্যকাটা শস্যখেতে বিচরণ করে; সাধারণত দলবদ্ধভাবে থাকতে দেখা যায়। অগভীর জলে হেঁটে, সাঁতার কেটে বা পানির নিচে ঠোঁট ডুবিয়ে খাবার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় আছে ঘাস, জলজ আগাছা, শস্যের কচি ডগা, শামুক, গুগলি ইত্যাদি। এরা প্রধানত দিনের বেলা বিচরণ করে, আবার পূর্ণিমা রাতেও সক্রিয় থাকে; অন্য সময় এক পায়ে দাঁড়িয়ে বা মাটিতে বুক লাগিয়ে বিশ্রাম নেয়। এদের গভীর নাকি সুরের পরিচিত ডাক: অ্যাবঙ-অ্যাবঙ….। এপ্রিল মাসে এশিয়া ও সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের জলাশয়ে এরা প্রজনন শুরু করে এবং নলবনে ও ঝোপের মধ্যে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো পীতাভ ও সাদায় মেশানো; সংখ্যায় ৮-৬টি; মাপ ৮.৫দ্ধ ৫.৮ সেমি। স্ত্রীপাখি একাই ডিমে তা দেয়; ২৭-২৮ দিনে ডিম ফোটে; ছানাগুলো বাসা ছেড়ে স্ত্রীপাখির পিছু পিছু মাটিতে ও পানিতে চরে বেড়ায়; শীতের পরিযায়নেও তারা একে অনুসরণ করে।[১]
বিস্তৃতি: মেটে রাজহাঁস বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি; প্রধানত শীতে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের সমুদ্র-উপকূলে বিচরণ করে; তা ছাড়া ঢাকা ও সিলেট বিভাগের বড় জলাশয়গুলোতেও পাওয়া যায়। এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: মেটে রাজহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে শতকরা ১০ ভাগ, দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তবে এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]
বিবিধ: মেটে রাজহাঁসের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ রাজহাঁস (ল্যাটিন : anser = রাজহাঁস)।
তথ্যসূত্র:
১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও মো: শাহরিয়ার মাহমুদ, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা -১৩-১৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।
২. “Anser anser“, http://www.iucnredlist.org/details/22679889/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ২৩ আগস্ট ২০১৮।
৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৪৯।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।