পাতি চকাচকি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]বিপদ নাম: Tadorna tadorna সমনাম: Anas tadorna Linnaeus, 1758 বাংলা নাম: পাতি চকাচকি, শাহ চখা (আলী) ইংরেজি নাম: Common Shelduck জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Anatidae গণ/Genus: Tadorna, Oken, 1817; প্রজাতি/Species: Tadorna tadorna (Linnaeus, 1758)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Tadorna গণে ২টি প্রজাতি রয়েছে এবং পৃথিবীতে রয়েছে ৭টি প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশের প্রজাতি দুটি হচ্ছে ১. খয়রা চকাচকি ২. পাতি চকাচকি। আমাদের আলোচ্য পাখিটি হচ্ছে পাতি চকাচকি।

বর্ণনা: পাতি চকাচকি বা শাহ চখা বা সাচ্কা হচ্ছে টকটকে লাল ঠোঁট আর সাদা বুকে লাল ফিতা পরা হাঁস (দৈর্ঘ্য ৬২ সেমি, ওজন ১কেজি, ডানা ১১.৫ সেমি, ঠোঁট ৩.২ সেমি, পা ৫.২ সেমি, লেজ ১১.৫ সেমি)। এর মাথা ও ঘাড় চকচকে সবুজ কালোয় মেশানো; সাদা দেহ জুড়ে তিনটি প্রশস্ত কালো লাইন; বুকে তামাটে রঙের ফোটা; চোখ বাদামি; ঠোঁট মেটে লাল থেকে প্রবাল-লাল; ঠোঁটের আগা প্রায় বাদামি; পা ও পায়ের পাতা মেটে পাটল বর্ণ থেকে মেটে লাল, ও নখর কালো। পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারা ও আকারে পার্থক্য আছে; পুরুষপাখির ঠোঁটের গোড়ায় লাল স্ফীত গোল পুটলি আছে; পুরুষপাখির চেয়ে স্ত্রী আকারে ছোট, এবং এর বুকে তামাটে বর্ণের দাগের প্রান্ত কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি, গলার পিছন ও পিঠ কালচে-বাদামি; দেহতল, কপাল, গাল, গলার উপরিভাগ সাদা; এবং বুকে ফেটা নেই।

স্বভাব: পাতি চকাচকি উপকূলের কাদামাঠ, নতুন জেগে ওঠা চর, হ্রদ ও মোহনায় বিচরণ করে; সাধারণত বড় বড় দলে দেখা যায়। কাদা পানিতে ঠোঁট ডুবিয়ে অথবা অগভীর জলে মাথা ডুবিয়ে এরা আহার খোঁজে; খাদ্যতালিকায় আছে শামুক, চিংড়ি ও কাঁকড়া-জাতীয় প্রাণী, পোকামাকড়, কেঁচো, শৈবাল, বীজ, পাতা, ইত্যাদি। পুরুষপাখি পরিষ্কার গলায় শিস দেয় ও স্ত্রীপাখি অতিপ্লত ডাকে: গ্যাগ-অ্যাগ-অ্যাগ-অ্যাগ। মে-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে মধ্য-এশিয়ায় এদের প্রজনন হয়; মাটির প্রাকৃতিক ফাটল বা খাড়া উঁচু পাহাড়ের গর্তে বা মাটির গর্তে পালকের বাসা বেঁধে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো গজদন্তের মত সাদা, সংখ্যায় ৬-১০টি; মাপ ৬.৫-৪.৫ সেমি। ৩০ দিনে ডিম ফোটে।

আরো পড়ুন:  বৈকাল তিলিহাঁস বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি

বিস্তৃতি: পাতি চকাচকি বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি; শীতে বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের সমুদ্রপোকূল ও নদ-নদীতে বিচরণ করে। উত্তর আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বহু দেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, ইরান, মালয়েশিয়া, চীন, তিব্বত, ইরাক ও জাপানে বিস্তৃত।

অবস্থা: পাতি চকাচকি বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]

বিবিধ: পাতি চকাচকির বৈজ্ঞানিক নাম Tadorna -এর অর্থ চকাচকি (ফ্রেঞ্চ: tador = চকাচকি)।

তথ্যসূত্র:

১. মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম কাম্রুজ্জামান, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা -১৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Tadorna tadorna“, http://www.iucnredlist.org/details/22680024/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ২৩ আগস্ট ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৪৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!