শোল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিপদমুক্ত জনপ্রিয় স্বাদুপানির মাছ

মাছ

শোল

বৈজ্ঞানিক নাম: Channa striata (Bloch, 1793) সমনাম: Ophiocephalus striatus Bloch, 1793, Asarad. Fislike: 141; Ophiocephalus vagus Peters; paicopials ahl Laceyede, 1802, Hist. Wat. Poi.s.s. 3: 552. onlinar/tali4s c/ila Hamilton, 1822. Fis/hes of | Gates, p. 62; 0p/il(Op/ials planiceps | Cuwier, 1831, Hist. Mat. Poi.ss. 7: 424; Channa astriatus Kalawar and Kelkar, 1841, J. Bonubay Nat. Hist. Sox. 53(1): 674, ইংরেজি নাম: Snakehead Murrel, Stripped Snakehead. স্থানীয় নাম: শোল 
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস 
জগৎ: Animalia পর্ব: Chordata শ্রেণী: Actinopterygii বর্গ: Perciformes পরিবার: Channidae গণ: Channa প্রজাতি: C. striata

বর্ণনা: দেহ সম্মুখে প্রায় চোঙাকৃতির এবং পশ্চাতে কিছুটা চাপা। সম্মুখ নাসারন্ধ নালীর ন্যায় প্রসেসে পরিণত হয়। প্রাক-পায়ু অনুপস্থিত। মাথায় অনেক গর্ত থাকে। মাথা প্লেটের ন্যায় বড় বড় আঁইশ দ্বারা আবৃত। অক্ষিকোটর ও প্রাক-কানকো কোণের মাঝে ৯টি, তুন্ড ও পৃষ্ঠীয় পাখনা ভিত্তির মাঝে ১৫টি আঁইশ বিদ্যমান। মুখের চিরটি গভীর; ম্যাক্সিলা। অক্ষিকোটরের পিছনে চক্ষুব্যাস বা তার অর্ধেক পর্যন্ত প্রসারিত চোয়াল এবং তালুতে ভিলি আকৃতির দাঁত থাকে, ভোমারে একটি ছোট মোচাকৃতির দাঁত এবং ম্যান্ডিবলের পিছনে অন্য পার্শ্বে ৬ থেকে ৭টি ছেদন দাঁত থাকে। পার্শ্বরেখা অঙ্গে আঁইশের সংখ্যা ৫৪ থেকে ৬০টি। পার্শ্বরেখা অঙ্গ প্রথমে ১৬ থেকে ১৮টি আঁইশ পরিমান দূরত্ব অগ্রসর হয়ে ২ থেকে ৩ সারি নীচে নেমে সোজা পুচ্ছ পাখনার মধ্য পর্যন্ত অগ্রসর হয়; পার্শ্বরেখা অঙ্গ এবং পৃষ্ঠীয় পাখনা ভিত্তির মাঝে ৬.৫ সারি এবং পার্শ্বরেখা অঙ্গ থেকে পার পাখনা ভিত্তি পর্যন্ত ৯.৫ থেকে ১০ সারি আঁইশ বিদ্যমান। শ্রেণীপাখনা বক্ষদেশে অবস্থিত এবং পুচ্ছপাখনা এলাকার এদের দেহের রং বয়স ও বাসস্থান অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হয়।

দেহের উপরের দিকে গাঢ় ধূসর কিন্তু নীচের দিকে হলুদ বর্ণের। পার্শ্বরেখা অঙ্গ কালচে বর্ণে পরিবেষ্টিত ও ক্রমাণয়ে হলুদ বর্ণের দিকে বিস্তৃত হয়।  একটা কালো ডোরা তুন্ড থেকে ফুলকা ঢাকনার কিনারা পর্যন্ত তির্যকভাবে উপরের দিকে যায় । বক্ষপাখনা সাধারণ কিন্তু পুচ্ছপাখনার গোড়ায় দুটি স্পষ্ট কালো উলম্ব ডোরা থাকে। এদের পোনাগুলি দেখতে কমলা-লাল বর্ণের। এরা প্রায় ৬০ থেকে ৭৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে সাধারণ দৈর্ঘ্য ৩০ থেকে ৪০ সেমি (Rahman, 1989)।

আরো পড়ুন:  কাতলা দক্ষিণ এশিয়ার বিপদমুক্ত স্বাদুপানির মাছ

স্বভাব ও আবাসস্থল: শোল মাছ মাংসাশী এবং বিভিন্ন প্রকার জীবিত প্রাণী যেমন-ছোট ছোট মাছ, ব্যাঙ, সাপ পোকামাকড়, কেঁচো এবং ব্যাঙাচী খেয়ে বেঁচে থাকে (Rahman, 1989)। এই গণের অন্যান্য সদস্যের মতোই এরা শুষ্ক মৌসুমে যখন পানি শুকাতে থাকে তখন পুকুর, ডোবা বা জলাধারে তলায় কাদার মধ্যে বাস করে। যেহেতু তাদের ত্বক এবং শ্বসন অঙ্গ আদ্র থাকে তাই তারা কয়েক মাস পর্যন্ত পানি ছাড়া বাঁচতে পারে। এ সময় এরা শক্ত মাটির অভ্যন্তরে গর্তে থাকে, গর্তটি প্রায় ১ মিটার পর্যন্ত গভীর হয় এবং পরবর্তী বর্ষা মৌসুম শুরু না হওয়া পর্যন্ত  সঞ্চিত চর্বি থেকে শক্তি গ্রহন করে (Smith, 1945)।

প্রজননের সময় পুরুষ মাছ অগভীর পানির কিনারায় জলজ খড়কুটো ছিড়ে বাসা তৈরি করে এবং ডিম পাড়ে যা পানির  উপরিতলে একটা পাতলা আবরণ তৈরি করে। পুরুষ ও স্ত্রী উভয় মাছ ডিম পাহারা দেয় এবং তিন দিনের মধ্যেই ডিমগুলি ফুটে বাচ্চা বের হয়। পোনা মাছগুলি ঝাঁক বেঁধে ভাসমান অবস্থায় সাঁতরাতে আর পুরুষ ও স্ত্রী মাছ পানির নিচে লুকিয়ে থেকে পাহারা দেয়। এরা পুকুর, জলাশয় এবং নদীতে বাস করে, তবে স্থির ও কর্দমাক্ত পানিই বেশি পছন্দ করে (Menon, 1999)। প্রধানত, জলাধারে বাস কষ্ট করে তবে অগভীর নদীতে ও এদের দেখা যায়।

বিস্তৃতি: পাকিস্থান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, মায়ানমার, মালয় দ্বীপপুঞ্জ, থাইল্যান্ড এবং দক্ষিন চীন। সমগ্র বাংলাদেশে বিল, হাওড়, পুকুর, ডোবা এবং জলাধারে প্রায় প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: C. striatus একই গণভুক্ত অন্যান্য। প্রজাতির ন্যায় বানিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট মৎস্য সম্পদে এদের অবদান শতকরা ৩.৪ ভাগ বা ৭১, ৫৮৩ মেট্রিক টন (FRSS, 2004-05)। এই মাছের মাংসের দৃঢ়তা বেশি। সাদা কাঁটাবিহীন এবং সহনীয় গন্ধ থাকে। সম্ভবত থাইল্যান্ড, ইন্দো-চীন এবং মালয়েশিয়াতে খাদ্য তালিকায় এটি প্রধান মাছ। এর গাঢ় কালো ত্বক সূপ তৈরির জন্য উত্তম এবং প্রায়ই বাজারে আলাদা ভাবে বিক্রি হয় (Davidson, 1975)। ভারত, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডে এই মাছের চাষ হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন:  মলা পুঁটি জনপ্রিয় অ্যাকুরিয়াম মাছ

বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা: এটি শিকারী মাছ হওয়ায় জলজ বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: IUCN Bangladesh (২০০০) এর লাল তালিকায় C. striatus আশংকাজনক প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত নয়। সর্পমাথা মাছের মধ্যে এই মাছটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। পলি জমাট এবং বিল ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়াই এই প্রজাতির জন্য প্রধান হুমকি।  সেজন্য এই মাছের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে অভয়ারণ্য তৈরির মাধ্যমে এদের আবাসস্থল রক্ষা করা প্রয়োজন। পুকুরে এই মাছের চাষ করা, এমনকি প্রজনন উভয়ই সম্ভব।

মন্তব্য: শীতকালে শোল মাছের সিলোমিক গহ্ববরের চারিদিকের মাংস ট্রিমেটোড লার্ভা (Isoparorchis | hypsilobargi) দ্বারা আক্রান্ত হয়। অন্যান্য পরজীবির মধ্যে Pallisentis ophicephali মাছের অন্ত্রে এবং Neocamalanus ophicephali মাছের পাইলোরিক সিকায় আক্রমন করে। বাংলাদেশ এবং ভারতে এই মাছের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪০ পাওয়া গিয়েছে। C. |striatus মাছের মাংস থেকে তৈরি ক্রীম ত্বকের ক্ষতস্থান পূরণেও ব্যবহৃত হয় বলে জানা যায়।

তথ্যসূত্র:

১.কিবরিয়া, মোঃ মনজুরুল (অক্টোবর ২০০৯)। “স্বাদুপানির মাছ”। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমাদ, মোনাওয়ার। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪১–৪২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Wie146

Leave a Comment

error: Content is protected !!