ডিকামালী গাছ (Gardenia gummifera Linn. f) প্রধানভাবে কাজ করে মনোবহ স্রোতে এবং কোষ্ঠে। নাড়ীহিঙ্গুর ব্যবহার বাংলার আয়ুর্বেদ চিকিৎসকবৃন্দ করেনই না বলা যেতে পারে। তবে মধ্য ও পশ্চিম ভারতের অনেক চিকিৎসক এটির ব্যবহার করে থাকেন।
ডিকামালী গাছ-এর প্রয়োগ
১. অরুচিতে: অরুচি শুনলেই মনে হবে, এ আর এমন কি না, তা ঠিক নয়। অরুচি রোগটা একবার প্রবেশ করলে ওটা সহজে যায় না, কারণ ওটা মনোরোগ থেকেও হয়, আবার শারীর-রোগ থেকেও হয়। শোকে, ভয়ে, ক্রোধে এবং অপবিত্র গন্ধ থেকেও হয়ে থাকে, তখন হঠাৎ করে কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, সবেতেই অরুচি, এইটাই মনোরোগ থেকে অরুচি। আর শারীর রোগ যেমন পিত্ত-প্রধান ব্যাধি থেকেও অরুচি হয়, আবার শ্লেষ্মপ্রধান রোগ থেকেও অরুচি হয়। তাছাড়া বায়ুবিকার থেকেও অরুচি হয় মুখে। কষা কষা রসাস্বাদ, সামান্য কিছু খেলেই দাঁত শিরশির, শরীর শিউরে ওঠা, টক খাওয়ার স্বাদের অনুভূতি—এগুলি বায়ু হলে হয়।
এক্ষেত্রে প্রত্যহ দুপুরে ও রাত্রে খাওয়ার সময় পুরনো তেঁতুল জলে গুলে আধ কাপ মতো নিয়ে (খুব গাঢ় নয়, আবার হালকাও নয়) তাতে অল্প একটু লবণ (পরিমাণমত) ও নাড়ীহিংগু আন্দাজ সিকি গ্রাম মিশিয়ে অল্প গরম করে, ঠাণ্ডা হলে খেতে হবে। প্রথমে ২/৩ দিন একবার করে খেয়ে দেখতে হবে। অল্প রুচি ফিরে এসেছে বুঝলে দিনে ২ বার। করে কয়েকদিন খেতে হবে। তবে একটা কথা জানিয়ে রাখি– নাড়ীহিংগু কাঁচা খেলে যদি পেটে বায়ু হয়, তাহলে হিং সামান্য জলে গুলে একটু ঘিয়ে ফোঁড়ন দেওয়ার মতো দিয়ে তাতে ঐ তেঁতুল গোলা জল মিশিয়ে (সাঁতলে নিয়ে) ব্যবহার করতে হবে।
২. আধ্মানে: নানা কারণে পেটে বায়ু জমে, কোন কোন ক্ষেত্রে অল্পস্বল্প পেটব্যথাও হয়, মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়; এ অবস্থায় একটা পাতিলেবুকে মাঝামাঝি কেটে আধখানা নিয়ে তাতে নাড়ীহিংগু আন্দাজ সিকি গ্রাম লাগিয়ে, একটু ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দিয়ে আগুনের উপর রেখে গরম করতে হবে, লেবুর রস ফুটছে দেখলে নামিয়ে, ঠাণ্ডা হলে, সেটিকে চুষে চুষে খেতে হবে। সারাদিনে ২ বার এভাবে কয়েকদিন খেলে পেটফাঁপা চলে যাবে।
৩. হৃদরোগে: যাঁরা বেশি মাত্রায় তেতো খেয়ে থাকেন অথবা ভাল হজম হয় না, অনবরত হজমের ওষুধ খাওয়ার অভ্যেস, তাছাড়া প্রস্রাব চেপে রাখা, দুঃশ্চিন্তা, ভয় প্রভৃতি কারণে বুক ধড়ফড় করে, এক্ষেত্রে ঘিয়ে ভাজা নাড়ীহিংগু সিকি গ্রামের সঙ্গে সমপরিমাণ লবণ মিশিয়ে দু’বেলা আহারের পূর্বে দিনে দুবার করে খাওয়া উচিত। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে পেটে সামান্য বায়ু জমতেও দেখা যায়। তেমন অবস্থা হলে না খাওয়াই ভাল।
CHEMICAL COMPOSITION
Gardenia gummifera Linn. Dikamali contains: resin 89.9%, volatile oil 0.1% and colouring matter, gardenin 1.4%.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ১৬৯-১৭০।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।