বৈজ্ঞানিক নাম: Firmiana colorata (Roxb.)
সমনাম: Sterculia colorata (Roxb.) Erythropsis colorata (Roxb.) Burk. Firmiana rubriflora Kosterm. Erythropsis roxburghiana Schott & Endl.
বাংলা ও স্থানীয় নাম: নাইচিচা উদাল, পাতা-গোটা (ঢাকা-ময়মনসিংহ), সামাররী, পিসি, ফিউবান (মগ), বল অজুন (গারো)।
ইংরেজি নাম: Bonfire tree, Colored Sterculia and Indian Almond, ইত্যাদি।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants
শ্রেণী: Eudicots
উপশ্রেণি: Rosids
বর্গ: Malvales
পরিবার: Malvaceae
উপপরিবার: Sterculiaceae
গণ: Firmiana
প্রজাতি: Firmiana colorata
বিবরণ: নাইচিচা উদাল মাঝারি আকৃতির ডালপালায় বিস্তৃত পাতাঝরা বৃক্ষ, উচ্চতায় ১৫-২০ মিটার এবং গাছের বেড় ১ মিটার পর্যন্ত হয়। এদের গুঁড়ি কাণ্ড সরল, সোজা, গোলাকার এবং প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত গুঁড়ি কাণ্ড ডালপালা বিহীন। গুঁড়ি কান্ড একাধিক গভীর খাঁজ ও ভাঁজযুক্ত (fluted)। বাকল কালচে ধূসর বা ছাই বর্ণের, পুরু, মসৃণ ও আঁশযুক্ত। এই গাছের ডালপালার আগায় পাতাগুলো গুচ্ছাকারে সজ্জিত। পাতার বোটা ৭-১৫ সেন্টিমিটার লম্বাটে এবং পত্রফলক হাতের তালুর মতো, প্রশস্ততায় ১০-২৫ সেন্টিমিটার। পাতার কিনারা ত্রিকোণাকৃতিভাবে ৩-৫ খন্ডে বিভক্ত। মার্চ-এপ্রিল মাসে ডালপালার মাথায় গুচ্ছাকারে নলাকার কমলা-লাল বর্ণের ঝুলন্ত ফুল ফোটে। নলাকার ফুলগুলো লম্বায় প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার এবং মখমল লোমশযুক্ত। এদের ফল চ্যাপ্টা থলে আকৃতির, লম্বায় ৫-৮ সেন্টিমিটার এবং গুচ্ছাকারে সজ্জিত। এপ্রিল-মে মাসে ফল পরিপক্ক হয়। প্রতিটি ফলের প্রান্তদেশে দুটি করে গোলাকার হলুদ বর্ণের মসৃণ বীজ থাকে। প্রতিটি ফলে ৯-১৪ টি করে বীজ থাকে। বীজগুলো গাঢ় বাদামি থেকে হলুদাভ বর্ণের এবং আকারে ৬-৭ মিলিমিটার লম্বা ও ৭-৮ মিলিমিটার চওড়া। প্রতি কেজিতে বীজের সংখ্যা ৫,৬০০-৬,০০০টি। সাধারণ তাপমাত্রায় বীজ ২০-২৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
ভৌগোলিক বিস্তৃতি: নাইচিচা উদাল গাছ বাংলাদেশ, ভারতের আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ, নেপাল, ভূটান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও চীন পর্যন্ত বিস্তৃত।
প্রজনন ও বংশবিস্তার: বন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে বীজ থেকে নাইচিচা উদাল চারা ও গাছ জন্মায়। এ ছাড়া নার্সারিতে সংগৃহীত বীজ পলিব্যাগে বপন করে চারা উৎপাদন করা যায়। বীজের অঙ্কুরোদগমের হার শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ। চারা গজাতে সময় লাগে ১০-১৫ দিন। বর্ষার শুরুতে জুন মাসে এক বছর বয়সী নাইচিচা উদাল চারা লাগানো যায়।
বাংলাদেশে অস্তিত্বমূলক অবস্থা: বাংলাদেশে নাইচিচা উদাল গাছটি খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। ২০১২ সালের প্রণীত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে নাইচিচা উদাল গাছ রক্ষিত উদ্ভিদ (Protected Plant) হিসেবে অভিহিত।
বাংলাদেশে বিস্তৃতি ও প্রাপ্তিস্থান: চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটের মিশ্র চিরসবুজ বনে এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শাল বনে বিক্ষিপ্তভাবে এ গাছ দেখা যায়।
গুরুত্ব ও ব্যবহার: নাইচিচা উদালের তাজা বীজ আগুনে পুড়ে বা ভেজে খাওয়া যায় এবং স্বাদে বাদামের মতো। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে আঁশযুক্ত বাকল থেকে দড়ি/রশি বানিয়ে গরু-ছাগল বেঁধে রাখা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বাকল থেকে বানানো ফিতা দিয়ে আদিবাসীরা বাঁশের ঝুড়িকে কপালে বেঁধে মালামাল পরিবহন করে থাকে।
সংরক্ষণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ: আরণ্যক ফাউন্ডেশন-এর সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে নাইচিচা উদালের চারা লাগিয়ে প্রজাতিটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।