দাঁতের সমস্যা সমাধানে ১৯টি ঘরোয়া পদ্ধতি

দাঁতের নানাবিধ সমস্যার সমাধানের জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি-

১. সুপারি: সুপারি ভস্ম দিয়ে দাঁত মাজলে মাড়ির ব্যথা কমে যায়। যাঁরা পায়োরিয়ায় রোগে ভুগছেন তাঁরা মাজনের মতো গুড়া দিয়ে দাঁত মাজবেন। এটাতে উপকার হবে। ইহার কষায় ধর্মিত্বের জন্য মাড়ির রক্তক্ষরন বন্ধ করে।

সুপারিতে ফেনোল জাতীয় রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা দাঁতের ক্যারিস ও পায়োরিয়া সারাতে সাহায্য করে। এছাড়াও অনেক সময় দেখা যায় যন্ত্রণার সঙ্গে সঙ্গে দাঁতে একপ্রকার কালো দাগ পড়তে থাকে, যাকে মনে হয় পোকায় খাওয়া দাঁত। সেইসঙ্গে দাঁতের গোড়াটা ফোলাও থাকে; এইরকম যে ক্ষেত্র, সেখানে সুপারি গাছের শিকড় ও কাঁচা সুপারি (শুকনো) সমভাগে নিয়ে অন্তধমে পড়িয়ে (হাঁড়ির মধ্যে দ্রব্য রেখে মুখটা সরা দিয়ে ঢেকে পোড়াতে হবে) সেই ছাই দিয়ে দু’বেলা দাঁত মাজলে যন্ত্রণাটা চলে যাবে, দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে কালো দাগটাও চলে যায়। [১]

২. মালতী: দাঁতের মাড়ি ফোলা, দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমলে, ছোপ পড়লে প্রতিদিন মালতী গাছের ডাটা দিয়ে দাঁতন করলে নিরাময় হয়। [২]

৩. দেশি পেটারি: দাঁতের ব্যথা বা মাড়ির প্রদাহে পাতার ক্বাথকে মাউথওয়াশ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। [২]

৪. জায়ফল: জায়ফলের তেলে ভেজানো তুলে দাঁতে রাখলে দাঁতের পোকা মরে যায় এবং দাঁতের ব্যথা কমে এবং পাইয়োরিয়া সেরে যায়। [১]

৫. জোয়ান: আর একটি কথা, এই যোয়ান সম্পর্কে হারীত সংহিতায় বলা হয়েছে— দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়তে থাকলে যোয়ান বেটে দাঁতের গোড়ায় খানিকক্ষণ লাগিয়ে রাখতে হবে, তারপর ১০/১৫ মিনিট বাদ যোয়ানের ক্বাথ করে এ ক্বাথ দিয়ে গরগরা (Sargle) করতে হবে। আর তাতেও যদি রক্ত পড়া বন্ধ না হয় তাহলে যোয়ান বাট ক্ষাণিকক্ষণের জন্য লাগিয়ে রাখতে হবে। [১][৩]

৬. লবণ বা নুন: দাঁতের ব্যথা হলে মাড়ি ফুলে গেলে নুন জলে কুলি করলে আরাম পাওয়া যায়।  মিহি নুন আর সর্ষের তেল মিশিয়ে দাঁত মাজলে পাইয়োরিয়ায় উপকার হয়।  নুনের পুটলি তৈরি করে সেঁক দিলে দাঁতের ব্যথা গাল ফুলে ওঠা ইত্যাদিতে আরাম পাওয়া যায়। [৩]

আরো পড়ুন:  ব্রণ ও মেছতা সারানোর ভেষজ চিকিৎসা

৭. বকুল ( Mimusops elengi): দাঁতের পোকা হলে দাঁতের মাঝখানে গর্ত হয়ে যায় অথচ ধার ঠিক থাকে, সেক্ষেত্রে বকুল ছাল ১০ গ্রাম নিয়ে থেঁতো করে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করতে হবে, এক কাপ অবশিষ্ট থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে সকালে ও বিকালে অথবা রাতে প্রতিদিন ২ বার কবল ধারণ করতে হবে অর্থাৎ ক্বাথ মুখে ভরে নিতে হবে, ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ফেলে দিতে হবে। প্রতিবার ৭ থেকে ৮ চা চামচ করে নিলেও চলবে। এই রকম ১৫ থেকে ২০ দিন নিয়মিত ব্যবহার করলে বা করালে পোকায় আর দাঁত নষ্ট করবে না।

অকালে দাঁত নড়ায় বা সে যে কোনো কারণেই হোক, ২০ থেকে ২৫ গ্রাম বকুল ছাল ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে নিতে হবে। আর ২ থেকে ৩ টিপ বা নস্যির মতো, পরিমাণ পিপুল চূর্ণ ১০ থেকে ১৫ ফোঁটা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে প্রথমে দাঁতের গোড়ায় লাগিয়ে দিতে হবে। এইটা লাগাবার ৫ থেকে ৭ মিনিট বাদে, যে ক্বাথ তৈরী করা আছে সেই ক্বাথকে নিয়ে ৭ থেকে ৮ মিনিট করে মুখে রাখতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় ১০ থেকে ১২ দিন বকুল ছালের ক্বাথ ব্যবহার করলে নড়া দাঁত বসে যাবে।

অল্প বয়সে যাদের দাঁত নড়ে যাচ্ছে বা পড়ে যাচ্ছে, তারা কাঁচা বকুল ফল কিছুদিন চিবিয়ে দেখন, দাঁতের গোড়া শক্ত হয়ে যাবেই, তা না হলে কাঁচা ফলকে পেড়ে শুকিয়ে সেই শুকনো ফলের শাঁসের গুঁড়া দিয়ে দাঁত মাজলে অকালে দাঁত নড়বেও না, আর পড়বেও না। [১]

৮. লতাকস্তুরী: দাঁতের গোঁড়া ফোলা, মুখে দুর্গন্ধ হওয়া, ভিতরে হেজে যাওয়া, ঢোক গিলতে ব্যথা লাগা প্রভৃতি মুখের রোগের লক্ষণ। এ সমস্যায় ১৫ থেকে ২০টি বীজ থেঁতলিয়ে আধকাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে ঐ পানি দিয়ে ভালোভাবে গড়গড়া করলে উপকার হয়। গড়গড়া করার সময় পানিটা কিছুক্ষণ মুখের ভিতর ধরে রাখলে উপকার অধিক এবং দ্রুত হয়। প্রাচীন কবিরাজবৃন্দ অবশ্য লতাকস্তুরী গাছ-এর বীজচূর্ণ অল্প ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে মুখের ভেতর লাগানোর পরামর্শ দেন। [২]

আরো পড়ুন:  পায়ের সমস্যা সমাধানে পাঁচটি ঘরোয়া চিকিৎসা

৯. দারুচিনি:  দারুচিনি তেল বা আরক তুলায় নিয়ে যে দাঁতটা ব্যথা করছে তাতে লাগিয়ে রাখলে দাঁতের সমস্যা থেকে আরাম পাওয়া যায়। [৩]

১০. ছোট এলাচ: খোসা মিহি গুঁড়া করে সেই গুঁড়া দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়, মুখে জল আসা বন্ধ হয়। [৩]

১১. শাহজিরা: শাজিরার ক্বাথ দিয়ে কুল্লি করলে দাঁতের ব্যথা কমে। [৩]

১২. জাম: যাঁদের মাড়ি আলগা হয়ে গিয়েছে, একটুতে রক্ত পড়ে, তাঁরা জাম গাছের ছালের গুড়া দিয়ে দাঁত মাজলে উপকার নিশ্চয়ই হবে; তবে দাঁতে একটু ছোপ পড়ার সম্ভাবনা আছে। অবশ্য ২ থেকে ১ দিন অন্তর মাজলে এ দাগ হয় না। অনেক বৃদ্ধ বৈদ্য এর সঙ্গে পাতার গুড়োও সমান পরিমাণ মিশিয়ে ব্যবহার করতে বলেন। [১]

১৩. তুলসি: দাঁতের রোগে উপশমকারী বলে টুথপেস্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। [১]

১৪. শেওড়া: দাঁতের গোঁড়ায় পাথুরী জমে যাঁদের, তাঁরা শেওড়া গাছের ছাল চূর্ণ অন্য কোনো মাজনের সঙ্গে দাঁত মাজলে এর দ্বারা দাঁতের গোড়ার পাথরগুলি ক্ষয়ে উঠে যাবে দাঁতের সমস্যা কমে যায়।

১৫. দাঁতের মাড়ির ক্ষত: সরষে তিন ভাগ ও সৈন্ধব লবণ এক ভাগ একসঙ্গে পিষে গুঁড়ো করে রাখতে হবে। সেইটা দিয়ে দাঁত মাজলে ঐ মাড়ির ক্ষতের উপশম হয়ে থাকে, অবশ্য এটিও হারীত সংহিতায় বলা হয়েছে।

এছাড়াও জানা যায়, প্রতিদিন স্নানের সময় সর্ষের তেল কিছুক্ষণ মুখে রেখে সেই তেল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত শক্ত হয়। সর্ষের তেল ও মিহি নুন দিয়ে দাঁত মাজলে মুখের ক্লেদ বেরিয়ে যায়, দুগন্ধি দূর হয় এবং মুখের ভেতরটা পরিষ্কার হয়। সপ্তাহে একদিন অন্তত নুন ও সর্ষের তেল দিয়ে দাঁত মাজা উচিত। [১][৩]

১৬. ছোলা: যাঁদের দাঁতের গোড়া মাঝে মাঝে ফুলে যায়, তাঁরা ছোলা সিদ্ধ যুষ দিয়ে কুলকুচি করে দেখবেন, ওটা কমে যাবে, তবে কারণটা যদি উর্ধ্ব শ্লেষ্মাজনিত হয় তা হলে তাঁর উচিত বাসক পাতার রস ৪ থেকে ৫ চামচ একটু গরম করে প্রত্যহ সকালে খাওয়া। [১]

আরো পড়ুন:  মুখের অভ্যন্তরে নানাবিধ সমস্যার আটটি ঘরোয়া উপায়

১৭. ভৃঙ্গরাজ: দাঁতের মাড়ির দুর্বলতা সারাতে ভৃঙ্গরাজের পাতার গুড়ো দিয়ে দাঁত মাজলে মাড়ি শক্ত হয়। [১]

১৮. গাজর: শিশুদের গাজরের রস খাওয়ালে দাঁত বেরোতে কোনো কষ্ট হয় না আর দুধও ঠিক মতো হজম হয়। [১]

১৯. পাতি লেবু বা কাগজি লেবু: ডিপথিরিয়া রোগে বা মুখে ঘা হলে যবক্ষার (কবিরাজি দোকানে পাওয়া যায়) ও মধু মিশিয়ে লেবুর রসে দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে অনেক সময় উপকার হয়। স্কার্ভি ও অস্থিসংক্রান্ত রোগে টাটকা লেবুর রসই মহৌষধ। লেবুর রসে সম পরিমাণ জল মিশিয়ে সেই জলে কুলকুচো করলেও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া সারে। লেবুর রস আঙুলে লাগিয়ে দাঁতের মাড়িতে মালিশ করলে দাঁত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। [৩]

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।

২. ড. সামসুদ্দিন আহমদ: ওষুধি উদ্ভিদ (পরিচিতি, উপযোগিতা ও ব্যবহার),  দিব্যপ্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা।

৩. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!