ত্বকের যত্ন নিতে আটটি ঘরোয়া পদ্ধতি

মানুষের প্রথম দর্শনে মুখমণ্ডল দেখে বুঝা যায় শরীরের কী অবস্থা। তাই ত্বকের যত্ন সবসময় নিতে হয়। প্রাচীন কাল থেকেই আয়ুর্বেদ বা ভেষজ উপাদান দিয়ে রূপচর্চা করা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আসছে। কর্মজীবন বা আধুনিক সমাজের নানা ব্যস্ততায় ছেলে মেয়েরা পার্লারে যেতে পারেন না। নানা কারণে মানসিক অসুস্থতার জন্য ত্বক জীর্ন, অবসাদ, অনুজ্জ্বল হয়ে যায়। এই সব সমস্যার সমাধান আমরা হাতের আশেপাশে উপাদান দিয়ে সহজেই সমাধান করা যায়।

নানা প্রকার উপাদানে ত্বকের যত্ন:

১. সয়াবীন : সুষম ব্যবস্থা ঠিক থাকলে শরীরের সৌন্দর্য ভালভাবেই বজায় থাকতে পারে, কিন্তু স্বাভাবিকভাবে তা কি সম্ভব ? অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হয় না। সমগ্র শরীরের মূল মূল যন্ত্রাংশকে ঠিক রেখে দেহে লাবণ্য রক্ষার ক্ষেত্রে সয়াবীনের জুড়ি নেই । তাই সয়াবীনের দুধ অথবা দই ব্যবহার করা উচিত । [১]

২. গাজর: গাজর খেলে রং ফরসা হয়, মুখে সৌন্দর্য বাড়ে কারণ গাজরে আছে রক্ত পরিষ্কার করবার গুণ। রূপচর্চায়ও এর তুলনা নেই। রুক্ষ আর খসখসে ভাব দূর করে, গাজর ত্বককে রাখে সজীব, সতেজ। এজন্য গাজর ছেঁচে রস বের করে সারা শরীরে মাখতে হবে। এভাবে কমপক্ষে ১৫/২০ মিনিট রেখে পরে গোসল করা উচিত। মুখ ও শরীরের কালো দাগ দূর করার জন্য গাজর কেটে শুকিয়ে গুঁড়া করে এর সঙ্গে পরিমাণমতো ময়দা ও দুধের সর মিশিয়ে সাবানের মতো ব্যবহার করতে হয়। [২]

৩. লেবু: সামান্য পাতি বা কাগজী নেবুর রসে ৪-৬ ফোঁটা ও ১০-১৫ ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে রাত্রে শোয়ার সময় হালকা করে মুখটা মুছে নিন এবং পরদিন সকালে ঠাণ্ডা জলে ভালভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে লাবণ্য বৃদ্ধি হয় । [১]

৪. নুন বা লবণ: চোখ, চুল ও মুখের রোগে এবং হাত-পা ফাটলে লবণ জলের প্রলেপ লাগালে উপকার পাওয়া যায়। [৩]

আরো পড়ুন:  দাঁতের সমস্যা সমাধানে ১৯টি ঘরোয়া পদ্ধতি

৫. পাতি লেবু বা কাগজি লেবু: চুলকুনিতে, গায়ে সূর্যে বেশি তাপ লেগে গেলে যে কষ্ট হয় তাতে লেবুর রস বিশেষ উপকারী। লেবু চিরে তাতে নুন ভরে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। একেবারে শুকিয়ে গেলে পিষে গুড়া করতে হবে। এই গুঁড়া লাগালে চুলকুনি এমনকী কুষ্ঠব্যাধিতেও আরাম পাওয়া যায়। লেবুর খোসা লেবুর রসে পিষে পুলটিস তৈরি করে গরম করে। বাঁধলে বা লেবুর রস ঘষলে নানা কারণে ত্বকে যে দাগ পড়ে তা দূর হয়। লেবুর রসে তেঁতুলের বীজ পিষে লাগালে দাদ সারে।  লেবুর রস ও নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে মালিশ করলে ত্বকের শুষ্কতা, চুলকুনি, দাদ প্রভৃতি ত্বকের বা চামড়ার রোগে উপকার হয়। লেবুর রসে সমপরিমাণ সর্ষে বা তিলের তেল মিশিয়ে গায়ে মালিশ করুন। ফের গরম জলে স্নান বা গোসল করুন। জামা-কাপড় প্রতিদিন সাবান ও গরম জলে কেচে স্নানের পরে পরবেন। শুকনা চুলকুনি সারবে। এক বালতি গরম বা ঠাণ্ডা জলে একটি লেবু গেলে নিয়ে সেই জলে স্নান করলে চামড়া নরম ও উজ্জ্বল হয়। [৩]

৬. দুধ: দুধের মালাই দশ মিনিট ধরে মুখে মালিশ করুন । পরে দশ মিনিট আর মুখ ধুবেন না। তার পরে বেসন দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মুখের ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। [৩]

৭. তিল: তিল তেল একটু গরম করে রোজ মালিশ করলে এক মাসের মধ্যেই নিষ্প্রভ বা জৌলুষহীন ত্বকে উজ্জ্বলতা এসে যায়, সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, চুলকানি সেরে যায়। তিলের তেল সারা শরীরে তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে এবং তাড়াতাড়ি হজম হয় এবং শরীরকে নিরোগ রাখে। [৩]

৮. মসুর ডাল: লোকে একসময় সন্দুরী বলতো, কিন্তু আজ কালোর পর্যায়ে, লিভার যে খারাপ তাই বা বলি কি করে, অথচ গায়ের ও মুখের রঙটা চেপে গিয়েছে এমতাবস্থায় মসুর ডাল খোসা বাদ দিয়ে ও এক টুকরো কাঁচা হলুদ এক গাঁটের মতো একসঙ্গে বেটে ওর সঙ্গে একটু দুধের সর মিশিয়ে মাখতে হবে, এর দ্বারা ঐ ঝাঁই দাগটা উঠে যায়।

আরো পড়ুন:  অ্যালার্জি থেকে আরাম পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

এছাড়াও মুসুরির ডালের গুড়ো জলে মেখে বা মুসরির ডাল বেটে মুখে যতক্ষণ পর্যন্ত না জল শুকোচ্ছে লাগিয়ে মাখলে মেছতা বা মুখে ছোপ ছোপ দাগ ভাল হয়।

মুসুরির ডাল বর্ণ সংশোধক বা বর্ণ প্রসাধক একথা আগেই বলা হয়েছে। মুসুরির ডাল বাটার রূপটান খুব প্রচলিত। বিশেষত অবাঙালিদের মধ্যে এই ডাল বেটে জল শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত মুখে প্রলেপ লাগালে এবং তার পরে ঠাণ্ডা হলে ধুয়ে ফেললে মুখের ক্লান্তির উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়। মুসুরির ডাল ঘিয়ে ভেঙ্গে দুধ দিয়ে বেটে মুখে প্রলেপ লাগালে ছুলি সারে। [১] [৩]

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি , আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।

২. নাহিদ বিন রফিক, শাকসবজির পুষ্টি ও ভেষজগুণ, তারিখহীন, কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস), http://www.ais.gov.bd/site/view/krishi_kotha_details/১৪২৪/অগ্রহায়ণ/শাকসবজির পুষ্টি ও ভেষজগুণ

৩. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!