ফ্রান্সিস হারবার্ট ব্রাডলে (ইংরেজি: Francis Herbert Bradley; ৩০ জানুয়ারি ১৮৪৬-১৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৪) ছিলেন ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের ব্রিটিশ ভাববাদী দার্শনিক। ব্রাডলের ‘এ্যাপিয়ারেন্স এ্যাণ্ড রিয়ালিটি’ বা ‘প্রকার ও সত্তা’ একখানি বিখ্যাত দার্শনিক গ্রন্থ। রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রেও ব্রাডলে একজন উল্লেখযোগ্য চিন্তাবিদ। উল্লিখিত কালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক, যেমন কেয়ারড (১৮৩৫-১৯০৮), টমাস হিল গ্রিন (১৮৩৬-১৮৮২), বারনার্ড বোসানকোয়েট (১৮৪৮-১৯২৩) এঁরা ‘অক্সফোর্ড ভাববাদী’ বলে পরিচিত হন।
উনিশ শতকের পূর্বে ইংল্যাণ্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে এবং রাজতন্ত্রের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যক্তি স্বাধীনতার আন্দোলনের মাধ্যমে যে চরম ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের বিকাশ ঘটেছিল অক্সফোর্ড ভাববাদীদের মধ্যে তার একটা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের প্রাধান্যের কালে যেখানে ব্যক্তির জীবনে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকে মূলতই অবাঞ্ছিত বলে গণ্য করা হয়, সেখানে এই ব্রাডলে এবং উল্লিখিত চিন্তাবিদগণ ব্যক্তির জীবনে রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক হস্তক্ষেপের যে প্রয়োজন রয়েছে, তার উল্লেখ করেন।
অক্সফোর্ড ভাববাদীদের মতে মানুষ যেমন একটি নৈতিক প্রাণী এবং তার কার্যের মূল বিচার তার নীতি বা লক্ষ্যের ভিত্তিতে, রাষ্ট্রের বিচারও তার লক্ষ্যের ভিত্তিতে। রাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের নৈতিক উন্নতি সাধন। এ লক্ষ্যে ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রকে পরস্পরবিরোধী শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা অযৌক্তিক। ব্যক্তিকে নিয়ে যেমন রাষ্ট্র এবং ব্যক্তির উন্নতিতেই রাষ্ট্রের উন্নতি, তেমনি রাষ্ট্র বা সমাজের বাইরেও ব্যক্তির কোনো অস্তিত্ব থাকতে পারে না।
ফ্রান্সিস হারবার্ট ব্রাডলে এই দৃষ্টিভঙ্গির উপর জোর প্রদান করে তার ‘এথিক্যাল স্টাডিস’ গ্রন্থে বলেন যে, নৈতিক প্রাণী হিসাবে পরিবার এবং সমাজের বাইরে ‘ব্যক্তি’ হিসাবে ব্যক্তির কোনো অস্তিত্ব নাই। পিতামাতার কাছ থেকে প্রাপ্ত দৈহিক এবং মানসিক গুণাবলী যেমন ব্যক্তির অস্তিত্বের মৌল উপাদান তেমনি যে সমাজে সে বর্দ্ধিত হয় এবং জীবন ধারণ করে সেই সমাজের ভাসা, আচার-আচরণ, সংস্কার, বিশ্বাস এবং প্রতিষ্ঠানই তার সামাজিক অস্তিত্বকে তৈরি করে। কাজেই ব্যক্তি বনাম সমাজ বা রাষ্ট্র, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের এমন চরম চিন্তার কোনো বাস্তব ভিত্তি থাকতে পারে না। অক্সফোর্ড ভাববাদী বলে কথিত চিন্তাবিদদের এই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীন গ্রিক চিন্তাবিদ এ্যারিস্টটলের রাজনৈতিক চিন্তার বেশ কিছুটা পুনঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ৯৩।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।