পালাবার পথে ধুলো-ওড়ানোর দঙ্গলে, ভাই
আমিও ছিলাম একজন; আজ প্রাণপণে তাই
ভীরুতার মুখে লাথি মেরে লাল ঝান্ডা ওঠাই।
গা থেকে পাঁকের গলিত গন্ধ ধুয়ে মুছে দাও
স্বপ্নজড়িত জীবনের দ্বিধা চাবুকে ছোটাও
হাঁটু ছিঁড়ে যাক, দুপায়ে রক্তকদম ফোটাও।
বিপদ তাড়ানো আওয়াজে আজকে হাঁকো হৈ হৈ
ফাঁসিতে দিয়েছি জীবন, মরতেও পিছপাও নই
গৃহকলহকে দূরে ঠেলে এসো একজোট হই।
চাপা বিদ্যুতে খেলে দুশমন বজ্রমুষল;
অভুক্তদের মৃতদেহ; চোরগুদামে ফসল—
ঝঞ্ঝায় মাথা উঁচু রাখি; জানি যাত্রা কুশল।
হতাশার কালো চক্রান্তকে ব্যর্থ করার
শপথ আমার; মৃত্যুর সাথে একটি কড়ার—
আত্মদানের; স্বপ্ন একটি পৃথিবী গড়ার।
চোরাবালি টানে তাদের মুগ্ধ সমাধির দিকে
ফিরল না যারা; স্মরণে আমার তারা সব ফিকে।
শুধু ভুলি নাকো ক্রান্তিকালের সাথী সঙ্গীকে।
প্রতিরোধ চাই! অগ্নিফলকে কাটে কুজ্ঝটি
মুক্তি নিশান হাতে নিয়ে ওঠে চল্লিশ কোটি
বীরবিক্রমে দ্বার আগলাবে লক্ষ করোটি!
পালাবার পথে ধুলো-ওড়ানোর দঙ্গলে ভাই
আমিও ছিলাম একজন; আজ প্রাণপণে তাই
ভীরুতার মুখে লাথি মেরে লাল ঝান্ডা ওঠাই।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।