ব্রেস্ত চুক্তি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত

চতুর্থ সারা রুশ জরুরি সোভিয়েত কংগ্রেস ১৪-১৬ মার্চ ১৯১৮
ব্রেস্ত চুক্তি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত

ব্রেস্ত-লিতোভস্কে আমাদের প্রতিনিধিরা ১৯১৮ সালের ৩রা মার্চ যে শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করেছে তা কংগ্রেস সমর্থন (অনুমোদন) করছে।

আমাদের সৈন্যবাহিনীর অবর্তমানতা হেতু এবং বুর্জোয়া শ্রেণি ও বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীরা যে জনগণের ভাগ্যে কোনো সহায়তা দেয় নি বরং তা ব্যবহার করেছে নিজেদের স্বার্থপর শ্রেণি-লক্ষ্যে, যুদ্ধে সেই জনগণের শক্তির চূড়ান্ত ক্ষয়হেতু অবিশ্বাস্য রকমের দুর্বিষহ জবরদস্তিমূলক অবমাননাকর ঐ শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করার নির্দেশদানে কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি ও জনকমিশার পরিষদের কার্যাবলী সঠিক বলে কংগ্রেস স্বীকার করছে।

জার্মান শান্তি চুক্তির শর্ত আমাদের উপর চরমপত্রের আকারে ও অনাবৃত জবরদস্তির সঙ্গে চাপিয়ে দেওয়ায় যে শান্তি প্রতিনিধিদল এসব শর্তের বিশদ আলোচনায় নামতে অস্বীকার করেছে; তাদের কার্যাবলীও নিঃসন্দেহেই সঠিক বলেই কংগ্রেস স্বীকার করছে।

সমস্ত শ্রমিক, সৈনিক ও কৃষকদের সামনে, সমস্ত মেহনতী ও নিপীড়িত জনগণের সামনে অত্যন্ত জোর দিয়ে কংগ্রেস বর্তমান মুহূর্তের সবচেয়ে প্রধান, আশু ও জরুরি এই কর্তব্য হাজির করছে: মেহনতীদের শৃঙ্খলা ও আত্মশৃঙ্খলার উন্নয়ন করতে হবে, যথাসম্ভব সমস্ত উৎপাদন ও দ্রব্যের সবকিছু বণ্টন নিয়ে সর্বত্র সদৃঢ় ও সুশৃঙ্খল সংগঠন গড়তে হবে; প্রাণান্তকর যুদ্ধের পরিণাম হিসাবে ঐতিহাসিকভাবে যা অপরিহার্য, কিন্তু সমাজতন্ত্রের চূড়ান্ত বিজয় ও সমাজতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি সংহতিতে যা প্রধান প্রতিবন্ধক সেই লণ্ডভণ্ড অবস্থা, বিশৃঙ্খলা ও ধংসের বিরুদ্ধে নির্মম সংগ্রাম চালাতে হবে।

এখন অক্টোবর বিপ্লবের পর, রাশিয়ায় বুর্জোয়াদের রাজনৈতিক ক্ষমতার উচ্ছেদের পর, সমস্ত গোপন সাম্রাজ্যবাদী চুক্তি নাকচ ও প্রকাশের পর, বৈদেশিক ঋণ বরবাদের পর, বিনা ব্যতিক্রমে সমস্ত জাতির নিকট শ্রমিক কৃষক সরকারের ন্যায়সঙ্গত শান্তি প্রস্তাবের পর, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের কবল থেকে বেরিয়ে আসা রাশিয়ার এ ঘোষণা করার অধিকার আছে যে সে পরের দেশ লুণ্ঠন ও দমনের অংশীদার নয়।

আরো পড়ুন:  সোভিয়েত সরকারের সাফল্য ও বিঘ্ন

এখন থেকে রুশ সোভিয়েত ফেডারেটিভ প্রজাতন্ত্র একবাক্যে লুঠেরা যুদ্ধের নিন্দা করার সঙ্গে সঙ্গে যে-কোনো সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পক্ষ থেকে আক্রমণের সমস্ত সম্ভাবনার বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক পিতৃভূমিকে রক্ষা করা নিজের অধিকার ও কর্তব্য বলে গণ্য করে।

তাই আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মানবৃদ্ধির জন্য, সমাজতান্ত্রিক মিলিশিয়া এবং নরনারী উভয় অংশের সমস্ত নাবালক ও সাবালক নাগরিকদের সামরিক জ্ঞান ও সামরিক বৃত্তির সার্বজনীন তালিমের ভিত্তিতে দেশের সমরশক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা সমস্ত মেহনতী জনগণের দ্বিধাহীন কর্তব্য বলে কংগ্রেস মনে করে।

কংগ্রেস এই অটল বিশ্বাস ঘোষণা করছে যে পুঁজির জোয়ালের বিরুদ্ধে ও সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে সমস্ত দেশের মজুরদের আন্তর্জাতিক সংহতির সমস্ত দায়িত্ব অটলভাবে পালনকারী সোভিয়েত সরকার ভবিষ্যতেও আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সহায়তার জন্য, পুঁজির জোয়াল থেকে ও মজুরি দাসত্ব থেকে মানবজাতির মুক্তি ঘটিয়ে যে পথ গেছে, সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও জাতিসমূহের মধ্যে দৃঢ় ন্যায়সঙ্গত শান্তির সে পথ নিশ্চিত ও ত্বরান্বিত করার জন্য সাধ্যায়ত্ত সবকিছুই করে যাবে।

কংগ্রেস এই গভীরতম বিশ্বাস রাখে যে আন্তর্জাতিক শ্রমিক বিপ্লব দূরে নয় এবং সর্ব দেশের সাম্রাজ্যবাদীরা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে সর্বাধিক পাশবিক পন্থা গ্রহণে দ্বিধা না করলেও সমাজতান্ত্রিক প্রলেতারিয়েতের পরিপূর্ণ বিজয় নিশ্চিত।

লিখিত: ১৩ই বা ১৪ই মার্চ, ১৯১৮
প্রকাশিত: ‘প্রাভদা’
(সৎসিয়াল-দেমোক্রাৎ’), ৪৭ নং
১৬ই (৩রা) মার্চ, ১৯১৮
ভ. ই. লেনিন, রচনাবলী
পঞ্চম রুশ সংস্করণ।
৩৬শ খণ্ড, পঃ ১২২-১২৩

বি দ্র: এখানে প্রকাশিত নিবন্ধটি লেনিনের ব্রেস্ত শান্তি চুক্তির প্রশ্নে বামপন্থী কমিউনিস্টদের ভুল নিয়ে লিখিত প্রবন্ধ ও বক্তৃতার সংকলন বিপ্লবী বুলি, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো ১৯৭০ গ্রন্থের ১৫০-১৫১ পৃষ্ঠা থেকে নেয়া হয়েছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!