কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের প্রথম প্রতিষ্ঠা কংগ্রেসে বিভিন্ন পার্টির তৃতীয় আন্তর্জাতিকে অন্তর্ভুক্তির সুনির্দিষ্ট সর্ত রচিত হয় নি। প্রথম কংগ্রেস বসার সময় অধিকাংশ দেশেই শুধু কমিউনিস্ট ধারা ও গ্রুপ বর্তমান ছিল।
কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় বিশ্ব কংগ্রেস বসছে ভিন্ন পরিস্থিতিতে। এখন অধিকাংশ দেশে শুধ কমিউনিস্ট প্রবণতা ও ধারাই নয়, কমিউনিস্ট পার্টি ও সংগঠন বর্তমান।
এখন কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের কাছে ক্রমেই ঘন ঘন এমন সব পার্টি ও গ্রুপ আবেদন জানাচ্ছে, যারা কিছু কাল আগেও ছিল দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের অন্তর্ভুক্ত, এখন তৃতীয় আন্তর্জাতিকে যোগ দিতে চায়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখনো কমিউনিস্ট হয়ে ওঠে নি। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চুড়ান্ত রূপেই ভেঙে গেছে। অন্তর্বর্তী পাটি ও মধ্যপন্থী গ্রুপগুলি দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের পরিপূর্ণ দেউলিয়াপনা দেখে ক্রমশক্তিশালী কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের দিকে ভর দিতে চাইছে, কিন্তু সেই সঙ্গে এমন একটা ‘স্বায়ত্তপরিচালন’ বজায় রাখার আশা করছে যাতে তারা আগের সুবিধাবাদী বা ‘মধ্যপন্থী’ নীতি চালিয়ে যাবার সুযোগ পায়। কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক কিছুটা পরিমাণে ফ্যাশন হয়ে উঠছে।
‘মধ্যপন্থী’ কতকগুলি প্রধান গ্রুপের বর্তমানে তৃতীয় আন্তর্জাতিকে যোগদানের ইচ্ছা থেকে পরোক্ষে এইটে সমর্থিত হচ্ছে যে, কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক সারা বিশ্বের সচেতন শ্রমিকদের বিপুল সংখ্যাগুরু অংশের সহানুভূতি জয় করেছে ও দিন দিন ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে।
টলায়মান ও অর্ধপক্ক যেসব গ্রুপ এখনো দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের ভাবাদর্শ পরিত্যাগ করে নি, তাদের পক্ষ থেকে কতকগুলি পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের একটা তারল্যের বিপদ দেখা দিতে পারে।
তাছাড়া পার্টির অধিকাংশই কমিউনিজমের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে এমন কিছু, বড়ো বড়ো পার্টিতে (ইতালি, সুইডেন) এখনো পর্যন্ত সংস্কারবাদী ও সোশ্যাল-শান্তিসর্বস্ববাদী অংশটা ভালোরকমই আছে, ফের মাথা তুলে প্রলেতারীয় বিপ্লবের সক্রিয় সাবোতাজ এবং তাতে ক’রে বুর্জোয়া ও দ্বিতীয় আন্তর্জাতিককে সাহায্য করার মতো মুহুর্তেরই অপেক্ষা করছে তারা।
হাঙ্গেরীয় সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের শিক্ষাটা কোনো কমিউনিস্টেরই ভোলা উচিত নয়। সংস্কারবাদীদের সঙ্গে হাঙ্গেরীয় কমিউনিস্টদের মিলনের প্রচণ্ড খেসারত দিতে হয়েছে হাঙ্গেরীয় প্রলেতারিয়েতকে।
এই কারণে দ্বিতীয় বিশ্ব কংগ্রেস মনে করে নতুন পার্টি অন্তর্ভুক্তির একান্ত সুনির্দিষ্ট সর্ত স্থির করা ও যেসব পার্টি ইতিমধ্যেই কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের অন্তর্ভুক্ত তাদেরও পালনীয় দায়িত্ব নির্দেশ করা আবশ্যক।।
কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত এই যে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে অন্তর্ভুক্তির সর্ত নিম্নরূপ:
***
১) দৈনন্দিন প্রচার ও আন্দোলনের চরিত্র হওয়া চাই সতাই কমিউনিস্ট-সুলভ। পার্টির হস্তস্থিত সমস্ত সংবাদপত্রের সম্পাদনা চালাবে বিশ্বস্ত কমিউনিস্টরা, যারা প্রলেতারীয় বিপ্লবের আদর্শে নিজেদের আনুগত্যের প্রমাণ দিয়েছে। প্রলেতারীয় একনায়কত্বের কথা বলতে হবে নিতান্তই একটা চলতি মুখস্থকরা সূত্র হিসাবে নয়, এমন ভাবে তার প্রচার করতে হবে যাতে আমাদের সংবাদপত্রে দিনের পর দিন প্রণালীবদ্ধ ভাবে উল্লিখিত জীবন্ত সব ঘটনা থেকেই প্রতিটি সাধারণ মজদুর, মজুরাণী, সৈনিক ও কৃষকের কাছে তার প্রয়োজনীয়তা প্রতীয়মান হয়ে ওঠে। পত্রিকার পৃষ্ঠায়, জনসভায়, ট্রেড ইউনিয়নে, সমবায়ে — তৃতীয় আন্তর্জাতিকের অনুগামীরা যেখানেই প্রবেশ পাবে তেমন সর্বত্রই নিয়মিত ও নির্মম ভাবে শুধু বুর্জোয়াদেরই নয়, তাদের সহায়কদের, সর্ববর্ণের সংস্কারবাদীদের নিন্দিত করা দরকার।
২) কমিণ্টার্নে যোগদানেচ্ছু প্রতিটি সংগঠনকে শ্রমিক আন্দোলনের কিছুটা পরিমাণ দায়িত্বশীল বলে ধরা যায় এমন সব পদ থেকে (পার্টি সংগঠন, সম্পাদকমণ্ডলী, ট্রেড ইউনিয়ন, পালামেন্টী ফ্যাকশন, সমবায়, মিউনিসিপ্যালিটি ইত্যাদি) সংস্কারবাদী ও ‘মধ্যপন্থীদের’ সুপরিকল্পিত ও নিয়মিত ভাবে অপসারণ করতে হবে এবং তাদের জায়গায় বসাতে হবে নির্ভরযোগ্য কমিউনিস্টদের – কখনো কখনো প্রথমে ‘অভিজ্ঞ’ কর্মীদের সরিয়ে সাধারণ মজুরদের বসাতে হচ্ছে বলে বিচলিত হবার কারণ নেই।
৩) যেসব দেশে অবরোধ অবস্থা বা জরুরি আইনের ফলে বৈধ ভাবে সমস্ত কাজ চালানোর সুযোগ কমিউনিস্টদের নেই, সেখানে আইনী ও বেআইনী কাজ মেলানো একান্ত আবশ্যক। ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় সমস্ত দেশেই শ্রেণিসংগ্রাম প্রবেশ করছে গৃহযুদ্ধের পর্যায়ে। সে অবস্থায় বুর্জোয়া বিধিবদ্ধতায় কমিউনিস্টরা আস্থা রাখতে পারে না। সর্বত্রই তাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে সমান্তরাল এমন একটি অবৈধ যন্ত্র, নির্ধারক মহুর্তে যা বৈপ্লবিক কর্তব্য পালনে পার্টিকে সাহায্য করতে পারে।
৪) সৈন্যদলের মধ্যে লেগে থেকে নিয়মিত প্রচার ও আন্দোলন এবং প্রতিটি সামরিক ইউনিটের মধ্যে কমিউনিস্ট কোষকেন্দ্র গঠন করা দরকার। এ কাজটা কমিউনিস্টদের চালাতে হবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেআইনী ভাবে, কিন্তু তাই বলে সে কাজ অস্বীকার করা হবে বৈপ্লবিক কর্তব্যের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার সমান এবং তৃতীয় আন্তর্জাতিকে অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে তা মেলে না।
৫) গ্রামে নিয়মিত ও পরিকল্পিত আন্দোলন চালানো আবশ্যক। গ্রাম্য ক্ষেতমজুর ও গরিব কৃষকদের অন্তত একাংশকে স্বপক্ষে না পেয়ে ও নিজেদের রাজনীতিতে গ্রাম্য জনের বাকি অংশকে নিরপেক্ষ না ক’রে শ্রমিক শ্রেণি নিজেদের বিজয় সংহত করতে পারে না। গ্রামে কমিউনিস্ট কাজ বর্তমানে একটা প্রথম শ্রেণির গুরুত্ব অর্জন করছে। সেটা চালানো দরকার প্রধানত এমন শ্রমিক কমিউনিস্টদের মারফত গ্রামের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ আছে। এ কাজ অস্বীকার করা অথবা অনির্ভরযোগ্য আধা-সংস্কারবাদীদের হাতে সেটা তুলে দেওয়া প্রলেতারীয় বিপ্লব বর্জনের সমতুল্য।
৬) তৃতীয় আন্তর্জাতিক যোগদানেচ্ছু, প্রতিটি পার্টিকে শুধ প্রকাশ্য সোশ্যাল-জাতীয়তাবাদের নয়, সোশ্যাল-শান্তিসর্বস্ববাদের মিথ্যা ও কপটতার মুখোশ খুলতে হবে: শ্রমিকদের নিয়মিতভাবে দেখাতে হবে যে, পুঁজিবাদের বৈপ্লবিক উচ্ছেদ ছাড়া কোনো আন্তর্জাতিক সালিশী আদালতে, অস্ত্রহ্রাসের কোনো আলাপে, লীগ অব নেশনসের কোনো গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনেই মানবজাতি নতুন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ থেকে নিস্তার পাবে না।
৭) কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে যোগদানেচ্ছু, পার্টিকে সংস্কারবাদ ও মধ্যপন্থী রাজনীতির সঙ্গে পরিপূর্ণ ও চূড়ান্ত সম্পর্কচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করতে হবে এবং পার্টি সভ্যদের ব্যাপকতম মহলে সে সম্পর্কচ্ছেদের কথা প্রচার করতে হবে। এছাড়া সঙ্গতিনিষ্ঠ কমিউনিস্ট রাজনীতি সম্ভব নয়।
অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে এই সম্পর্কচ্ছেদ কার্যকরী করার জন্য কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক চরমপত্র হিসাবে অটল দাবি জানাচ্ছে। তুরাতি, মদিলিয়ানি প্রভৃতির মতো সুবিদিত সংস্কারবাদীরা তৃতীয় আন্তর্জাতিকের সভ্য হিসাবে গণ্য হবার অধিকার রাখবে, এটা কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক মেনে নিতে পারে না। এ অবস্থার পরিণাম হবে এই যে তৃতীয় আন্তর্জাতিক প্রচণ্ড মাত্রায় মৃত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের মতো হয়ে উঠবে।
৮) যেসব দেশের বুর্জোয়ারা উপনিবেশের মালিক ও পরজাতির উৎপীড়ক, সেখানকার পার্টির উপনিবেশ ও উৎপীড়িত জাতির প্রশ্নে বিশেষ পরিচ্ছন্ন ও সুস্পষ্ট নীতি থাকা দরকার। তৃতীয় আন্তর্জাতিকে যোগদানেচ্ছু, প্রতিটি পার্টিকে উপনিবেশগুলিতে ‘নিজ’ সাম্রাজ্যবাদীদের কারসাজি নির্মম ভাবে উঘাটিত করতে হবে, উপনিবেশের প্রতিটি মুক্তি আন্দোলনকে সমর্থন করতে হবে কথায় নয়, কাজে; এ সব উপনিবেশ থেকে নিজেদের স্বদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের বিতাড়ন দাবি করতে হবে, নিজ দেশের শ্রমিকদের মনে উপনিবেশ ও উৎপীড়িত জাতিসত্তাগুলির মেহনতী জনগণের প্রতি সত্যকারের ভ্রাতৃভাব জাগিয়ে তুলতে হবে এবং ঔপনিবেশিক জনগণের ওপর যে কোনোরূপ পীড়নের বিরুদ্ধে নিয়মিত আন্দোলন চালাতে হবে নিজেদের সৈন্যদলের মধ্যে।
৯) কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে যোগদানেচ্ছু, প্রতিটি পার্টিকে ট্রেড ইউনিয়ন, সমবায় ও অন্যান্য গণ শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে নিয়মিত ও অধ্যবসায়ী কমিউনিস্ট কাজ চালাতে হবে। এই সব সংস্থার মধ্যে কমিউনিস্ট কোষকেন্দ্র গঠন করা দরকার, দীর্ঘদিন লাগাতোড় কাজের মধ্য দিয়ে এদের ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে জয় ক’রে নিতে হবে কমিউনিজমের স্বার্থে। এই সব কোষকেন্দ্রগুলির দায়িত্ব হলো দৈনন্দিন কাজের প্রতি পদে সোশ্যাল-জাতীয়তাবাদীদের বেইমানি ও ‘মধ্যপন্থীদের’ দ্বিধা উঘাটিত ক’রে দেখানো। এই কমিউনিস্ট কোষকেন্দ্রগুলিকে পুরোপুরি সমগ্র পার্টির অধীনে থাকতে হবে।
১০) কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে অন্তর্ভুক্ত পার্টিকে পীত ট্রেড ইউনিয়নগুলির আমস্টার্ডাম ‘আন্তর্জাতিকের বিরুদ্ধে (১) জোর লড়াই চালাতে হবে। ট্রেড ইউনিয়নে সংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যে পীত আমস্টার্ডাম আন্তর্জাতিকের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তার কথা তাদের অক্লান্ত ভাবে প্রচার করতে হবে। কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লাল ট্রেড ইউনিয়নগুলির উদীয়মান আন্তর্জাতিক সমিতিকে (২) সর্বোপায়ে সমর্থন করতে হবে তাদের।
১১) তৃতীয় আন্তর্জাতিকে যোগদানেচ্ছু, পার্টিকে নিজেদের পার্লামেন্ট ফ্যাকশনে কীরূপ লোক আছে তা পুনর্বিচার ক’রে দেখতে হবে, অনির্ভরযোগ্য লোকেদের সেখান থেকে অপসারিত করতে হবে, এই সব ফ্যাকশনকে মৌখিক কথায় নয় কার্যত পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনস্থ করতে হবে, সত্যকারের বৈপ্লবিক প্রচার ও আন্দোলনের স্বার্থে নিজেদের সমস্ত কাজ চালানোর জন্য প্রতিটি কমিউনিস্ট পার্লামেন্ট-সভ্যের কাছে দাবি করতে হবে।
১২) ঠিক একই ভাবে, সাময়িক ও অন্যবিধ পত্রিকা এবং সমস্ত প্রকাশালয়কেও পুরোপুরি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনস্থ হতে হবে, নির্দিষ্ট মুহুর্তটিতে পাটি পুরোপুরি বৈধ বা অবৈধ যাই থাক; স্বায়ত্তাধিকারের অপব্যবহার ক’রে পুরোপুরি পার্টিসম্মত নয় এমন নীতি প্রকাশালয়কে চালাতে দেওয়া অমার্জনীয়।
১৩) কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে অন্তর্ভুক্ত পার্টিকে গঠিত হতে হবে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি অনুসারে। প্রখরীভূত গৃহযুদ্ধের বর্তমান যুগে কমিউনিস্ট পার্টি তার কর্তব্য পালন করতে পারে কেবল সেই অবস্থায়, যখন সে যথাসম্ভব কেন্দ্রীভূত রপে সংগঠিত, যদি তার মধ্যে থাকে প্রায় সামরিক শৃঙ্খলার কাছাকাছি একটা লৌহদৃঢ় শৃঙ্খলা, যদি তার পার্টি কেন্দ্রটা হয়ে দাঁড়ায় একটা ব্যাপক অধিকার-ভোগী, পার্টি সভ্যদের সকলের আস্থাভাজন, প্রবল কর্তৃত্ব-সংস্থা।
১৪) যেসব দেশে কমিউনিস্টরা তাদের কাজ চালায় বৈধ ভাবে সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টিদের পার্টি সংগঠনের সদস্যদের ক্ষেত্রে পর্যায়ে পর্যায়ে পরিশুদ্ধি (পুনরায় তালিকাভুক্তি) চালাতে হবে, পার্টির মধ্যে অনিবার্য রপেই যেসব পেটি বুর্জোয়া লোকেরা ঢুকে পড়ে তাদের পার্টি থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্য।
১৫) কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক যোগদানেচ্ছু, প্রতিটি পার্টিকে অকুণ্ঠে প্রতিটি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রকে সমর্থন করতে হবে প্রতিবিপ্লবী শক্তির বিরুদ্ধে তার সংগ্রামে। সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলির শত্রুদের নিকট প্রেরিতব্য সামরিক মাল পরিবহণে শ্রমিকেরা যাতে আপত্তি করে তার জন্য অক্লান্ত প্রচার চালাতে হবে কমিউনিস্ট পার্টিকে; শ্রমিক প্রজাতন্ত্র দলনের জন্য যেসব সৈন্য পাঠানো হচ্ছে তাদের মধ্যে বৈধ ভাবে বা অবৈধ ভাবে প্রচার চালাতে হবে ইত্যাদি।
১৬) যেসব পার্টি এখনো পর্যন্ত পুরনো সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক কর্মসূচিই বজায় রেখেছে তাদের যথাসম্ভব শীঘ্র এই সব কর্মসূচির পুনর্বিচার করতে হবে এবং কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সিদ্ধান্তের প্রেরণায় নিজ দেশের বিশেষ পরিস্থিতির উপযোগী নতুন কমিউনিস্ট কর্মসূচি রচনা করতে হবে। নিয়মানুসারে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি পার্টির কর্মসূচি কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের নিয়মিত কংগ্রেসে অথবা তার কার্যকরী কমিটিতে অনুমোদিত হতে হবে। কোনো পার্টির কর্মসূচি কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের কার্যকরী কমিটিতে অনুমোদিত না হলে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের কংগ্রেসে আপীল করার অধিকার থাকবে সে পার্টির।
১৭) কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক কংগ্রেসের সমস্ত সিদ্ধান্ত তথা তার কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত পার্টির পক্ষে অবশ্যপালনীয়। তীব্রায়মান গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে যে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক কাজ চালাচ্ছে তাকে সংগঠিত হতে হবে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের চেয়ে ঢের বেশি কেন্দ্রীভূত ভাবে। তবে বলাই বাহুল্য, বিভিন্ন পার্টিকে যে বহু বিচিত্র পরিস্থিতির মধ্যে লড়তে ও কাজ চালাতে হচ্ছে তা হিসাবে নিতে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক ও তার কার্যকরী কমিটি বাধ্য এবং সর্বজনপালনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কেবল সেই প্রশ্নে যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।
১৮) এই সব কারণে, যেসব পার্টি কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে প্রবেশ করতে চায় তাদের নাম পরিবর্তন করতে হবে। কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে যোগদানেচ্ছু প্রতিটি পার্টিকে নাম নিতে হবে: অমুক দেশের কমিউনিস্ট পার্টি (তৃতীয় আন্তর্জাতিকের শাখা)। নামের প্রশ্নটা নিতান্ত একটা বাহ্যানুষ্ঠানের ব্যাপার নয়, অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রশ্ন। সমগ্র বুর্জোয়া জগৎ ও সমগ্র পীত সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক পার্টির সঙ্গে চূড়ান্ত সংগ্রাম ঘোষণা করেছে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক। কমিউনিস্ট পার্টি এবং শ্রমিকশ্রেণীর ঝান্ডার প্রতি বেইমান সাবেকী ‘সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিক’ বা ‘সোশ্যালিস্ট’ পার্টির মধ্যে তফাৎ কী সেটা প্রতিটি সাধারণ মেহনতীর কাছে পুরোপুরি পরিষ্কার থাকা আবশ্যক।
১৯) কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় বিশ্ব কংগ্রেসের কাজ শেষ হবার পর কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে যোগদানেচ্ছু, প্রতিটি পার্টিকে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে উপরিকথিত বাধ্যবাধকতা সমগ্র পার্টির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে গ্রহণের জন্য নিজ নিজ পার্টির জরুরি কংগ্রেস ডাকতে হবে।(৩)
টিকা ও সূত্র:
১.
২.
৩. কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে অন্তর্ভুক্তির শর্ত লেনিন লেখেন জুলাই ১৯২০ সময়ে। এখানে নেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের ঐক্য প্রসঙ্গে গ্রন্থের প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৭৩, পৃষ্ঠা ২৮২-৯০ থেকে।
ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন (এপ্রিল ২২, ১৮৭০ – জানুয়ারি ২১, ১৯২৪) ছিলেন লেনিনবাদের প্রতিষ্ঠাতা, একজন মার্কসবাদী রুশ বিপ্লবী এবং সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ। লেনিন ১৯১৭ সালে সংঘটিত মহান অক্টোবর বিপ্লবে বলশেভিকদের প্রধান নেতা ছিলেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান।