হাড়বাড়িয়া ইকো পর্যটন কেন্দ্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি

সুন্দরবন সামান্য জায়গা না বা এক নজরে বিস্তৃত বনাঞ্চল দেখা হয়। খন্ড খন্ডভাবে দেখতে হয়। এই ভ্রমণ একক ব্যাপারও না। যৌথভাবে ঘুরতে হয়।  সুন্দরবন ভ্রমণের একটি অংশ হাড়বাড়িয়া। এখানে যাওয়ার জন্য একটাই পথ; সেটা হলো জলপথ। লঞ্চ বা জাহাজ এবং নৌকা। এখানে দু’ধরনের নৌকা পাওয়া যায়। কাঠের সনাতন নৌকা আর মেশিন চালিত নৌকা। এছাড়া স্প্রিড বোডও আছে। সঙ্গে গাইড নিয়ে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী ভ্রমণ করার ব্যবস্থা আছে।

আমারা একটি ছোট লঞ্চে ভ্রমণ করি। যাত্রায় প্রথম অংশ হাড়বাড়িয়া। লঞ্চটি সুন্দরনের কোণ ঘেঁষেই নিয়ে যায়। পশুর নদীতে দাড়ানো সারি সারি ছোট বড় জাহাজ তারসঙ্গে লাগানো থাকে একটি ইঞ্জিন চালিত কাঠের নৌকা। তবে এখানেই বড় বড় শিপ থেকে যেখান থেকে মাল খালাস জন্য ছোট্ট জাহাজেও আছে। পশুর নদীর দু’পাশেই সুন্দরবন মাঝে দিয়ে লঞ্চের ছাদে বসে প্রকৃতি দেখতে দেখতে হাড়বাড়িয়ার ঘাটে পৌছে যাই।

হাড়বাড়িয়া ইকো পর্যটন কেন্দ্র সুন্দরবনের মধ্যে অন্যতম পর্যটন স্থান। মংলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত। এখানকার মূল আকর্ষণ বনের ভেতর দিয়ে যাওয়ার কাঠের ট্রেইল। যারা প্রথম ট্রেইলে হাঁটবেন তাদের জন্য এটা আনন্দের নতুন অভিজ্ঞতা। প্রায় বছরে বছরে এখানের কাঠ পাল্টাতে হয়। পানিতে ভিজে যায় বলে স্যাঁতস্যাঁতে থাকে। ট্রেইলের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হয়। বনের মধ্যে দিয়ে বিস্তৃত পুরো ট্রেইলটা ঘুরে আসতে মাত্র ৩০/৪০ মিনিটের মতো সময় লাগে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এমন মুগ্ধ করবে যে ১ ঘণ্টা হাটাও খুব সামান্য মনে হবে।

মিঠা পানির জন্য একটি পদ্মপুকুর ও ওয়াচ টাওয়ার আছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে প্রায় পুরো হাড়বাড়িয়া দেখা যায়। কাঠের তৈরি এই টাওয়ারে একসাথে ৬ জনের বেশি উঠা যায় না। পদ্মপুকুরের মাঝে পর্যটকদের বসার জন্য ব্যবস্থা করা আছে।

যারা একদিনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে চান তাদের জন্য হাড়বাড়িয়া আর্দশ জায়গা। এখানে প্রায়ই লোনা পানির কুমির দেখা যায়। তবে কুমির দেখার জন্য ভালো সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। এই সময়ে রোদ পোহাতে কুমিরগুলো খালের চরে শুয়ে থাকে। এছাড়াও হাড়বাড়িয়ায় সুন্দরনের মায়া হরিণেরও দেখা মেলে। পর্যটকদের জন্য এটা উন্মুক্ত হওয়ায় খুব কাছে থেকে হরিণের দেখা মেলে। এখানকার হরিণগুলো একেবারেই বন্য নয়। অনবরত মানুষের সঙ্গ পায় বলে বনের ধারে একাধিক হরিণের দেখা মেলে। হাড়বাড়িয়ার বাঘের দেখা না পেলেও বাঘের পায়ের ছাপ অনেকে দেখতে পায়। এছাড়াও চিত্রা হরিণ ও অন্যান্য বন্য প্রাণীও দেখা মিলবে এখানে।

আরো পড়ুন:  অরণ্যের মিছিল

জোয়ার-ভাটা অঞ্চল হওয়ার জন্য এখানে মাটি স্যাঁতস্যাঁতে, কর্দমাক্ত, ভেজা থাকে। এজন্য খুব কাছে থেকে লাল কাঁকড়া দেখা যায়। এছাড়াও সুন্দরী, গেওয়া, গড়ান, পশুর, বাইন, গোলপাতা  ইত্যাদি গাছ আছে। নানা প্রজাতির পাখি, পোকা মাকড় আছে।

হাড়বাড়িয়া ইকো পর্যটন কেন্দ্র-টি বাঘের অভয়ারণ্য। তাই কাঠের তৈরি ট্রেইল এর ছাড়া জঙ্গলে যাওয়া নিষেধ। জঙ্গলে কেউ যেতে চাইলে বন কার্যালয় থেকে অস্ত্রধারী বনরক্ষী নিয়ে নিতে হবে। জঙ্গলে ধুমপান একেবারে নিষেধ। অন্যকোনো ময়লা, চিপস, বিস্কুট, চকলেট, প্ল্যাস্টিকের বোতল ইত্যাদির প্যাকেট ফেল যাবে না। এসব ফেলার জন্য নির্দিষ্ট ঝুড়ি আছে।

আলোকচিত্রী: অনুপ সাদি

1 thought on “হাড়বাড়িয়া ইকো পর্যটন কেন্দ্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি”

Leave a Comment

error: Content is protected !!