পরিবার প্রসঙ্গে গবেষকের ধারণা, মতামত ও মতবিরোধ

পরিবার  হচ্ছে  স্বামী-স্ত্রী  ও  ছেলে-মেয়েদের  নিয়ে  একত্রে  বসবাস।  সামাজিক  জটিল প্রতিষ্ঠানগুলোর  অন্য̈তম  একটি  প্রতিষ্ঠান  হচ্ছে  পরিবার।  সময়  ও  স্থানের  পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারের ধরনে এসেছে বৈচিত্র্য̈ময় পরিবর্তন। সাম্প্রতিক সংজ্ঞায় পরিবার হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক বা একই ধরনের ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ একটি জনসমষ্টি যেখানে প্রাপ্ত-বয়স্করা তাদের নিজেদের ও পোষ্য ছেলে-মেয়েদের লালন-পালন করে থাকে। 

পরিবার প্রসঙ্গে  কাজ  নিয়ে  সমাজবিজ্ঞানীদের  মধ্যে  মতভেদ  থাকলেও,  অধিকাংশ  সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন যৌন-নিয়ন্ত্রণ ও প্রজনন, শিশুর যত্ন ও সামাজিকীকরণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ঘনিষ্ঠতা  ও  সাহচর্য,  সামাজিক  স্তরবিন্যাস ব্যবস্থার রক্ষণা-বেক্ষণই  হচ্ছে  পরিবারের  কাজ।  পরিবার সমাজে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। 

সমাজের  দ্রুত  পরিবর্তনের  সাথে  সাথে  পরিবারের  রূপেরও  পরিবর্তন  ঘটে চলেছে।  বিভিন্ন সমাজে পরিবারের বিভিন্ন রূপ লক্ষ্য করা যায়। তবে সাধারণ গঠনের দিক থেকে পিতৃ বা মাতৃভিত্তিক পরিবার, একক পরিবার, বর্ধিত পরিবার ও যৌথ পরিবার- এ চারটি রূপ পরিবার পরিগ্রহ করতে পারে। 

বিয়ে সমাজ জীবনের একটি অত্য̈ন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সাধারণভাবে বিয়ে হচ্ছে আচরণগতভাবে বা আইনগতভাবে  স্বীকৃত একজন নারী ও একজন পুরুষের দৈহিক ও সামাজিক সম্পর্ক যার সাথে বেশ কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পৃক্ত। বিবাহের রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণী বিভাগ ও ধরন। যেমন বর্হিবিবাহ, অর্ন্তবিবাহ, একক বিবাহ ও বহুবিবাহ। আধুনিক যুগে পশ্চিমা বিয়ের ভিত্তি হচ্ছে  রোমান্টিক  প্রেম  ও  কোর্টশিপ।  বিয়ের  এই  পশ্চিমা  রূপ  বর্তমানে  সারা  বিশ্বে  ছড়িয়ে পড়ছে। বিয়েকে এখন আর মানুষ অনিবার্য বলে মনে করছেন না। বিয়ের বাইরে একত্রে বাস, সন্তান উৎপাদন এবং বিবাহ বিচ্ছেদের আশংকাজনক ক্রমবৃদ্ধি বিয়ের প্রবণতাকে করছে হ্রাস।

মূল প্রবন্ধ পরিবার কাকে বলে

সাধারণভাবে পরিবার প্রসঙ্গে বলতে গেলে যা বোঝায় তা ধারণাটি অত্যন্ত সরল। স্বামী-স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে একত্রে গৃহে বসবাস করাই হচ্ছে পরিবার। এটি একটি অর্থনৈতিক একক যা সামাজিক জটিল প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। সমাজবিজ্ঞানে পরিবারের ধারণা কিছুটা ভিন্ন। তবে সময় ও স্থানের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারের ধরনের বৈচিত্র্যময় পরিবর্তনের কারণে একে সংজ্ঞায়িত করা সহজসাধ্য নয়। 

আরো পড়ুন:  গণতন্ত্র ও নীতিবিদ্যার পারস্পরিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে

পরিবারের সনাতন সংজ্ঞায় মার্ডক পরিবার বলতে বুঝিয়েছেন এমন একটি সামাজিক গোষ্ঠী যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সাধারণ আবাসস্থল, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং প্রজনন। তিনি মনে করেন পরিবারের মধ্যে থাকে বিপরীত লিঙ্গের প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি অন্তত: যাদের দু’জন সামাজিকভাবে স্বীকৃত যৌন সম্পর্ক বজায় রাখে এবং যৌন সম্পর্কযুক্ত নারীপুরুষের নিজস্ব বা দত্তক নেওয়া এক বা একাধিক সন্তান থাকে। 

পরিবারের সাম্প্রতিক সংজ্ঞায় পরিবার হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক বা একই ধরনের ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ একটি জনসমষ্টি যেখানে প্রাপ্তবয়স্করা তাদের নিজেদের ও পোষ্য ছেলেমেয়েদের লালন পালন করে থাকে। 

পিটার মার্ডক তাঁর গবেষণায় পরিবারকে দেখিয়েছেন একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে । তাঁর মতে আদিমকাল থেকে প্রতিটি সমাজেই পরিবার লক্ষ্যণীয়। তিনি পরিবার বলতে বুঝিয়েছেন অনুপরিবারকে, কেননা এটি থেকেই পরিবারের অন্য রূপ তৈরি হয়েছে। তবে মার্ডকের দু’টি বক্তব্যই যথেষ্ট বিতর্কের সূচনা করেছে।

নৃবিজ্ঞানী কাথলিন গাফ দক্ষিণ ভারতের কেরালার নায়ারদের পরিবার প্রথার যে উদাহরণ তুলে ধরেছেন তা পরিবারের সংজ্ঞা প্রদানের সমস্যাকে স্পষ্টতই তুলে ধরে।  পরিবার সর্বজনীন কিনা এ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। মার্ডক এ মতের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করলেও, উত্তর-আধুনিকতা ও নারীবাদী আন্দোলন থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মানব সমাজের কোন প্রতিষ্ঠানকে সর্বজনীন বলা কঠিন।

মূল প্রবন্ধ পরিবারের কার্যাবলির স্বরূপ

পরিবারের কাজ সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে অধিকাংশ সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন পরিবারের কাজগুলো হচ্ছে যৌন নিয়ন্ত্রণ ও প্রজনন, শিশুর যত্ন ও সামাজিকীকরণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ঘনিষ্ঠতা ও সাহচর্য, ও সামাজিক স্তরবিন্যাস ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ।

নারীবাদীরা মনে করে পরিবার একটি পিতৃতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বা পুরুষদের শোষণের হাতিয়ার বলে মনে করেন। তাদের ধারণা পরিবারের মাধ্যমে পরিবার প্রধান নারীদের উপর প্রভূত্ব করে থাকে এবং তাদের শ্রম ভোগ করে থাকে। নানা মতবিরোধ থাকলেও এখন পর্যন্ত পরিবার একই সাথে পরিবর্তনশীল ও স্থিতিশীল একটি প্রতিষ্ঠান। আর এ স্থিতিশীলতা ও পরিবর্তনকে বোঝার জন্য প্রয়োজন আরো বেশি নিরাসক্ত দৃষ্টিভঙ্গি ও উপাত্ত। 

আরো পড়ুন:  পরিবার হচ্ছে প্রাচীন প্রতিষ্ঠা: গুরুত্ব ও শ্রেণীবিভাগ

মূল প্রবন্ধ পরিবারের শ্রেণীবিভাগ

পরিবার প্রসঙ্গে আমাদের চিন্তা অত্যন্ত পরিচিত প্রতিষ্ঠান। আমাদের কাছে মনে হয়, আমাদের চেনা পরিবারই হচ্ছে পরিবারের একমাত্র রূপ এবং অন্য কোনো ধরনের পরিবার ব্যতিক্রম। সমাজবিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন বিভিন্ন সমাজে পরিবারের বিভিন্ন রূপ রয়েছে। সমাজের দ্রুত পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবারের রূপেরও পরিবর্তন ঘটেছে।  তবে সাধারণ গঠনের দিক থেকে পরিবারের চারটি রূপ রয়েছে। এগুলো হলও পিতা বা মাতাভিত্তিক পরিবার, একক পরিবার, বর্ধিত পরিবার ও যৌথ পরিবার। 

[বি. দ্র: নিবন্ধে ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া। আলোকচিত্রীর নাম: Demmarcos ]

Leave a Comment

error: Content is protected !!