ছোট নাটাবটের বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Turnix sylvaticas সমনাম: Tetrao sylvaticus Desfontaines, 1787 বাংলা নাম: ছোট নাটাবটের, ছোট বটের (আলী) ইংরেজি নাম: Kurrichane Buttonquail (Small Buttonquail) জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Turnicidae গণ/Genus: Turnix, Bonnaterre, 1791; প্রজাতি/Species: Turnix sylvatica (Desfontaines, 1787)[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Turnix বা নাটাবটের গণে রয়েছে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৩টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ১৫টি প্রজাতি। বাংলাদেশের প্রজাতি তিনটি হচ্ছে; ১. দাগি নাটাবটের, ২. ছোট নাটাবটের ও ৩. হলদেপা নাটাবটের। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে ছোট নাটাবটের।

বর্ণনা: ছোট নাটাবটের খাটো, সুচালো লেজওয়ালা খুদে ভূচর পাখি (দৈর্ঘ্য ১৩ সেমি, ওজন ৪০ গ্রাম, ডানা ৭ সেমি, ঠোঁট ১ সেমি, পা ২ সেমি, লেজ ৩.৫ সেমি)। মেয়েপাখি ছেলেপাখির চেয়ে বড় কিন্তু দেখতে অভিন্ন। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ লালচে কালো; দেহতল পীতাভ সাদা; পিঠে বিশেষ করে কাঁধ-ঢাকনিতে প্রশস্ত পীতাভ ডোরা আছে; মাথার চাঁদি বাদামি ও মরচে রঙের ঘাড়; গলা, পেট, অবসারণী ও লেজতল-ঢাকনি সাদা; বুক কমলা-পীতাভ এবং বগলে কালো ও তামাটে চিতি; চোখ হালকা হলুদ ও ঠোঁট ফ্যাকাসে; পা ও পায়ের পাতা পাণ্ডুর ও ধূসর নীল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ লালচে-বাদামি, দেহতল ফ্যাকাসে-পীতাভ এবং ঘাড়ের পাশে ও বুকে কালো চিতি রয়েছে। ৯টি উপ-প্রজাতির মধ্যে T. s. dussumier বাংলাদেশে রয়েছে।

স্বভাব: ছোট নাটাবটের তৃণভূমি ও ঘাসে ভরা আবাদি জমির কিনারার ক্ষুদ্র ঝোঁপে বিচরণ করে; একা বা জোড়ায় থাকে। মাটিতে হেঁটে ঝরাপাতা উল্টে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়; খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, শস্যদানা, কচিকাণ্ড, উইপোকা, কালো পিঁপড়া ও অন্যান্য পোকামাকড়। নিজস্ব বিচরণভূমিতে এরা অন্য পাখির অনুপ্রবেশে বাধা দেয়। সারা বছরই এদের প্রজনন ঋতু, তবে বর্ষা মৌসুমে বেশি; পূর্বরাগের সময় ছেলেপাখিরা গর্জনের মত ডাকে: (গ্রু গ্রু) ডরর-র-র-র-র…হু-ওও-ওন…হু-ওও-ওন…। মাটি সামান্য খুঁড়ে নিয়ে ঘাস ও ঝোঁপে সেটা আবৃত করে এরা বাসা বানায় এবং বাসার প্রবেশ পথের ঘাস বাকা করে এক সারি তোরণ বানায়। মেয়েপাখি ধূসরাভ ৪টি ডিম পাড়ে, মাপ ২.১ × ১.৭ সেমি। ছেলেপাখি একাই ডিমে তা দেয় ও ছানা লালন করে; ১২ দিনে ডিম ফোটে; ১৪-১৬ দিনে ছানার গায়ে ওড়ার পালক গজায়।

আরো পড়ুন:  মেটে তিতির বিশ্বে বিপদমুক্ত ও বাংলাদেশের বিলুপ্ত পাখি

বিস্তৃতি: ছোট নাটাবটের বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি; ঢাকা বিভাগের তৃণভূমি ও গ্রামে পাওয়া যেত, এখন নেই । এখন আফ্রিকা ও এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে; এশিয়া মহাদেশে পাকিস্তান, ভারত, চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনে পাওয়া যায়।

অবস্থা: ছোট নাটাবটের বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[১]

বিবিধ: ছোট নাটাবটের পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কাঠ-তিতির (ল্যাটিন: coturnix = তিতির, silvaticus= কাঠ )।

তথ্যসূত্র:

১. এম আনোয়ারুল ইসলাম ও সুপ্রিয় চাকমা, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৩৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Turnix sylvaticas“, http://www.iucnredlist.org/details/22680500/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

Leave a Comment

error: Content is protected !!