গিল্ড সমাজতন্ত্র কাকে বলে

গিল্ড সমাজতন্ত্র (ইংরেজি: Guild Socialism) প্রত্যয়টি শ্রমিকসংঘবাদের (Syndicalism) প্রকারভেদ হিসেবে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনে উদ্ভূত হয়। এটার পুরােধা ছিলেন এ. জে. পেন্টি নামে জনৈক স্থপতি। মধ্যযুগীয় গিল্ড প্রথার আধুনিক পথে পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে এই আন্দোলনের উদ্ভব ঘটে। এই আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে এ, আর, ওরেজ (Orage), এস, জি, হবসন, জি, ডি, এইচ কোল নেতৃত্ব দেন।

গিল্ড সমাজতন্ত্রীরা বিশ্বাস করতেন যে যৌথভাবে সম্পদ সৃষ্টি করে সমাজ, ব্যক্তিগত একক প্রচেষ্টায় সে কাজ সাধিত হয় না। তাঁদের মতে পুঁজিবাদী অর্থনীতি ব্যক্তিগত সম্পদ আহরণকে সমর্থন করে, কিন্তু সমাজের প্রতি দায়িত্ব কিংবা উত্তরকালের প্রতি কর্তব্য পালন করে না। এঁরা চাইতেন যে কলকারখানা জাতীয়করণের পরে সেগুলির ট্রেড ইউনিয়নসমূহ শ্রমিকদের নিয়ে গঠিত এক-একটি গিল্ডের (সমবায়) মতো স্বায়ত্তশাসিত পরিচালনভার গ্রহণ করুক।

মার্কসবাদ ও সিন্ডিক্যালিজমের সমন্বয়ে সৃষ্ট এই মতাদর্শ রাষ্ট্রীয় সমাজবাদের বিরােধী, যেখানে রাষ্ট্র কলকারখানা নিয়ন্ত্রণ করে। রাষ্ট্রকাঠামাের সংস্কার অপেক্ষা অর্থনৈতিক বিধিব্যবস্থার উপর বেশি গুরুত্ব আরােপ করা হয়। তাঁরা চাইতেন মজুরি প্রথার অবসান, শিল্পে স্বায়ত্তশাসন, সমাজের অন্যান্য গণতন্ত্রী সংগঠনের সহযােগে একটি জাতীয় গিল্ড অবকাঠামাে গড়ে তােলা।

১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনে ন্যাশনাল গিল্ডস লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের পর গিল্ড সােসালিস্ট আন্দোলনের অবলুপ্তি ঘটে। গণবিরোধী ব্রিটেনের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন ও সাম্রাজ্যবাদী নরপিশাচদের সংগঠন লেবার পার্টির তাত্ত্বিকেরা অবশ্য এখনও প্রয়ােজনে সেই মতাদর্শের উল্লেখ করেন।

দ্রষ্টব্য: সমাজতন্ত্র

তথ্যসূত্র:

১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ৯৯-১০০।

আরো পড়ুন:  পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্র একটি শোষণমূলক সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

Leave a Comment

error: Content is protected !!