বর্ণনা: দেহ লম্বা, শ্রেণীপাখনা পর্যন্ত প্রায় চোঙাকৃতির কিন্তু পিছনে চাপা। মাথা অবনমিত, পৃষ্ঠভাগ এবং পার্শ্বদিক অস্থিগঠিত পিঠ দ্বারা আবৃত, অক্রিপিটাল এসে পৃষ্ঠপাখনার গোঁড়া পর্যন্ত বিস্তৃত নয়। মুখ ছোট এবং প্রান্তীয় চোয়ালের দাঁত ভিলি আকৃতির যা সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করে জিহ্বটি মুখের তালুতে প্রায় সম্পূর্ণভাবে আটকে থাকে ৪ জোড়া সুগঠিত স্পর্শী বিদ্যমান। পৃষ্ঠপাখনা খাটো, সাধারণত বক্ষপাখনা শীর্যের উপর থেকে আরম্ভ হয়। বক্ষপাখনা শক্তিশালী কাটাযুক্ত যার অন্তঃস্থ কিনারা করাতের ন্যায় ধারালো এবং সামনের কিনারায় অল্প সংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাঁত থাকে। পায়ুপাখনারর গোড়া দীর্ঘ, একটি সুস্পষ্ট খাজ দ্বারা পুচ্ছপাখনা থেকে পৃথক; পুচ্ছপাখনা গোলাকার। এই মাছের উল্লেখয্যোগ্য অঙ্গসংস্থানিক বৈশিষ্ট্য হলো, এদর কশেরুকার উভয় পাশে এক জোড়া দীর্ঘ ফাপা বায়ুথলি থাকে। এরা প্রায় ৪২০০ থেকে ১৫,৭৫০টি ডিম দেয় (Rahman, 1989)। নিষিক্ত ডিমগুলো আঠালো, তলদেশে থাকে, গোলাকৃতির এবং সবুজ বর্ণের। এই মাছ প্রায় ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। দেহের উপরিভাগ হলুদ বা সীসার ন্যায় বা গাঢ় রক্ত-বাদামী বর্ণের কিন্তু নিচের অংশ অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল বর্ণের; সাধারণত পার্শ্ব বরাবর দুইটি হলুদ বর্ণের ডোরা থাকে তরুণ মা লালচে কিন্তু পূর্ণবয়স্ক মা প্রায় কালো বর্ণের হয়ে থাকে।
স্বভাব ও আবাসস্থল: এরা তলদেশবাসী এবং সর্বভূক প্রকৃতির শিকারী মা তলদেশের কাছাকাছি বাঁক বেঁধে বাস করে শুষ্ক মৌসুমে এরা সাধারণত অর্ধ-তরল ও অর্ধ-শুষ্ক কাঁদায় বসবাস করে, এমনকি যখন মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যায় তখন এরা মাটির ফাটল বা ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসে। বর্ষার শুরুতে বদ্ধ জলাশয়ে এদের প্রজনন ঘটে। বর্ষার সময় পুকুর, মজা পুকুর এবং ডোবায় প্রচুর বৃষ্টির পানি জমে তখন এরা প্রজনন করে। হোমাপ্লাস্টিক (haomaplastic) পিটুইটারি গ্রন্থিও সাহায্যে এদের সফল প্রণোদিত প্রজনন সম্ভব এটি অনেকটা ভয়ানক প্রকৃতির, কেননা এরা বেশ আগ্রাসী ধরনের এবং তাদের বিষাক্ত কাঁটা দিয়ে যন্ত্রাময় ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। প্রাথমিকভাবে পুকুর, ডোবা, বিল ও জলাধারে বাস করে, তবে কাদাযুক্ত নদীতেও পাওয়া যায়। সামান্য লবণাক্ত পানি সহ্য করতে পারে। বায়ুশ্বাস অঙ্গ থাকায় এরা প্রায় সব ধরনের পানিতে বাস করতে পারে।
বিস্তৃতি: সমগ্র বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড এবং লাউসে স্থির পানির জলাশয়ে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত, তবে ইষৎ লবণাক্ত পানিতে বিরল।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: এই মাছ অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন মৎস্য সম্পদে H.fossilis সহ অন্যান্য জীবিত মাছ যেমন- Clarias batrachus এবং Anabas testudineus এর অবদান ৫৫২৭৪ মেট্রিক টন বা শতকরা ২.৬৩ ভাগ (FRSS, 2004-05)। এই মাছের নিরাময় গুন থাকায় অত্যধিক চাহিদা থাকে (Talwar and Jhingran , 1991) এবং দূর্বল রোগীদের জন্য পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় (Bhuiya, 1969)। বিশেষ করে ম্যালেরিয়া জ্বর থেকে সদ্য মুক্ত রোগীদের বলবর্ধক হিসেবে এই মাছ খেতে বলা হয়। H.fossilis মাছের মাংসে ১৬% অশোধিত প্রেটিন, ১১% চর্বি এবং ৭৬% পানি থাকে (Basu and Gupta, 1939)। বাংলাদেশে এবং ভারতে এই মাছের কৃত্রিম প্রজনন করা হয়। বাংলাদেশে মৎস্য চাষীরা এটিকে পুকুরে ললন-পালন করে থাকে। বাজারে প্রচুর পরিমাণে জীবিত মাছ বিক্রি হয়।
বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা: ঝিল শিংঘি হুলযুক্ত ক্যাটফিশ কম এলাকায় বিস্তৃত এবং স্থির বা বদ্ধ জলাশয়ে পাওয়া যায়, তবে ইষৎ লোনা পানির পরিবেশে এটি বিরল। জলজ আগাছ এবং গলিত ও পঁচা আবর্জনা খেয়ে সামান্য পরিমাণে পানি দূষন নিয়ন্ত্রন করে।
বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ: IUCN Bangladesh (2000) এর লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতিটি এখনও হুমকীর সম্মুখীন নয়। প্রায় সহজেই পাওয়া যায়, তবে প্রকৃতিতে এর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই এদের কৃত্রিম প্রজনন এবং চাষ পদ্ধতি প্রচলন জরুরী।
মন্তব্য: আন্দামান দীপপুঞ্জের কিছু মাছে বক্ষপাখনা দুর্বল ও নরম প্রকৃতির এবং মাথার অস্থিগঠিত পেটগুলোও কিছুটা নরম হয়ে থাকে (Silas and Dawson, 1961)। এদের তীক্ষ ও ধারালো বক্ষকাটা খুব বিষাক্ত হওয়ায় বেশ পরিচিত, এটি দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত তীব্র যন্ত্রনা সৃষ্টি করে যা থেকে পরবর্তীতে জ্বরও হয়ে থাকে। ভারতে এই প্রজাতির ডিপ্লয়েড ক্রোমোজম সংখ্যা ৫৬ এবং ৫৮ পাওয়া গিয়েছে।
তথ্যসূত্র:
১. সাহা, বিমল কান্ত (অক্টোবর ২০০৯)। “স্বাদুপানির মাছ”। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমাদ, মোনাওয়ার। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৯৩–১৯৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: দিব্য দত্ত
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।