স্বর্ণমূলা এশিয়ায় জন্মানো ভেষজ উদ্ভিদ

সপ্তরঙ্গী বা সপ্তচক্রা এর আর এক নাম স্বর্ণমূলা, কারণ মূলের বহিরাবরণ সোনালী। সপ্তরঙ্গীকে ভারতের অধিকাংশ মনীষী সপ্তরঙ্গীকে Casearia esculenta বললেও কারও কারও মতে Hippocratcaceae পরিবারের Salacia গণের Salacia chinensis Linn. গাছটিও সপ্তরঙ্গী। এখানে একটি গাছের বর্ণনা ও গুণপনা পৃথক পৃথক দেওয়া হচ্ছে।

Casearia esculenta Roxb: গাছটি দক্ষিণ ভারতের পাহাড়িয়া অঞ্চলে অধিক জন্মে। ছোট আকৃতির গাছ। উচ্চতায় ২০। ২৫ ফুট উঁচু হয়। গাছের ছাল হরিদ্রাভ সাদা। পাতা ৬ ইঞ্চি লম্বা, ১–২ ইঞ্চি চওড়া, সূচাগ্র, গোড়ার দিকটা ক্রমশ সরু, কিনারা কাটা কাটা। একসঙ্গে অনেকগুলি ফুল পাতার কুক্ষিতে ফোটে, হরিদ্রাভ কিংবা নারঙ্গী রঙের। ফল অনেকটা গোলাকার, ইঞ্চিখানেক লম্বা, কমলা রঙের। ভেতরে অনেক বীজ থাকে। পাকা ফল খাওয়া যায়। পাতা স্টু ক’রে খাওয়া হয়।

স্বর্ণমূলা-এর ভেষজ প্রয়োগ

পাতাসিদ্ধ জল জীবাণুনাশক। মূল সঙ্কোচক গুণধর্মী, তিক্ত, মৃদু বিরেচক, যকৃৎ-উত্তেজক এবং বায়ুনাশক। এটি যকৃৎ-বৃদ্ধি, যকৃতের ক্রিয়ামান্দ্য, মধুমেহ, অর্শ প্রভৃতিতে ব্যবহার্য। অর্শ রোগে মূলের চূর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার সেবন ও ঐ বেটে অর্শের বলিতে প্রলেপ দিলে উপকার হয়। মধুমেহ রোগে লাগাতার ব্যবহার ক্ষতিকর। কারণ এটি যত শীঘ্র কাজ করে, তত শীঘ্রই বাড়িয়ে দিতে পারে। এজন্য এক সপ্তাহ ব্যবহার করার পর এক সপ্তাহ বন্ধ রেখে পুনরায় ব্যবহার করা উচিত। রক্তে শর্করার পরিমাণ মাঝে মাঝে মেপে দেখা প্রয়োজন। এটির ব্যবহারে পিপাসা, ঘর্মাধিক্য, হাত-পায়ের ফোলা প্রভৃতিও কমে যায়। এছাড়া অগ্নিমান্দ্য, পিত্তবিকার, প্রমেহ প্রভৃতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। মূলে খয়েরী হলুদ রঙের এক প্রকার আঠা, ট্যানিক এসিড, স্টার্চ ও সামান্য রঙ্গীন পদার্থ থাকে। কাণ্ডের ছালে ট্যানিন এবং কাথাটিক এসিড পাওয়া যায়।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২৬৪-২৬৬।

আরো পড়ুন:  কুকুরবিছা বাংলাদেশের উপকারী গুল্ম

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম:  Kirtikar, K.R., Basu

Leave a Comment

error: Content is protected !!