বহেড়া গাছের ফল, বীজের শাঁসের ঘরোয়া পদ্ধতিতে ১৪টি ভেষজ চিকিৎসা

বহেড়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia belerica.  পরিবার Combretaceae.  বহেড়া বৃক্ষ ৬০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত উচু হতে দেখা যায়, গাছের গুড়িও বেশ লম্বা, অবশ্য ছাল খুব বেশি পুরু হয় না, পাতা ৩ থেকে ৭ বা ৮ ইঞ্চি লম্বা হয়। বহেড়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আরো পড়ুন

বহেড়া এশিয়ার ঔষধি বৃক্ষ

ঔষধ হিসেবে ব্যবহার:

১. শ্লেষ্মায়: বিশেষ কার্যকারণ সম্পর্কে শ্লেষ্মা এলে, সেক্ষেত্রে নয়। কিন্তু ঋতুর সাহচর্য পেয়ে যে শ্লেষ্ম হয় যেমন বসন্তকালে স্বভাবতই শরীর রসস্থ হয়, সেই রকম ক্ষেত্র উপস্থিত হলে বহেড়া চূর্ণ মধু মিশিয়ে চাটলে উপশম হয়, তবে একটা কথা জানা দরকার বহেড়ার স্বভাব রুক্ষ, তাই কড়াতে ২ থেকে ৪ চা চামচ ঘি চড়িয়ে বহেড়া চূর্ণ দিয়ে নেড়েচেড়ে একটু গরম করে নিতে হয়, এর দ্বারা বহেড়ার স্বভাব রুক্ষতা নষ্ট হয়। বহেড়া চূর্ণর মাত্রা ২ থেকে ৩ গ্রাম।

২. বাতিক কাসিতে: কাসি হচ্ছে অথচ বুকে সর্দি নেই এবং কিছু বেরোয় না; চলতি কথায় যাকে পেট গরমের কাসি বলে। এক্ষেত্রে ঘি এ ভেজে নেওয়া বহেড়া চূর্ণ ও মুথোর (cyperus rotundus) চূর্ণসম পরিমাণে নিয়ে ৪ গুণ চিনির গাঢ় রসের সঙ্গে পাক করে (মোটা রস করে পাত্রটা নামিয়ে পরে যেভাবে মুড়কি পাক করে সেইভাবে পাক করতে হয়। ছোট ছোট গুলি অথবা লজেন্সের মতো কেক করে রাখতে হয়, এগুলির ওজন আন্দাজ ২ গ্রাম করে হবে। এই কেক বা গুলি সকালে ও বিকালে একটি করে চুষে খেতে হবে। এটাতে ঐ বায়ুজনিত কাসি সেরে যাবে।

৩. স্বরভঙ্গে: যক্ষারোগজনিত স্বরভঙ্গে নয়, ক্যানসারের স্বরভঙ্গেও নয়; কোনো উচ্চ ভাষণের জন্য যে স্বরভঙ্গ এসেছে অথবা হঠাৎ গরম-ঠাণ্ডা খেয়ে বা লেগে এটা হয়েছে, সেখানে বহেড়া চূর্ণ একটু, মধু মিশিয়ে চেটে খেতে হবে। মাত্রা ২ থেকে ৩ গ্রাম।

আরো পড়ুন:  সাদা হলকুশা বর্ষজীবী ভেষজ বীরুৎ

৪. হাঁপানিতে:  বহেড়া বীজের শাঁস (বাদামের মতো) দুই-একটি করে ২ ঘণ্টা অন্তর চিবিয়ে খেতে হয়। এটাতে কার্ডিয়াক (হৃদযন্ত্রগত) হাঁপানিতে কোনো কাজ হয় না।

৫. আমাশায়: সাদা আমাশাই হোক কিংবা রক্ত আমাশায় হোক বহেড়া চূণ সকালে ও বিকালে ১-৩ গ্রাম মাত্রায় (অবস্থা ভেদে) জলসহ খেতে হয়।

৬. অতিসানে:  পাতলা দাস্ত-তার সঙ্গে আম থাকে, সশব্দে মল নির্গত হয়, বায়ু-নিঃসরণে আতঙ্ক এই বুঝি একটু, গলে যাবে, এক্ষেত্রে বহেড়া গাছের চূর্ণ আধ গ্রাম (৩ থেকে ৪ রতি) ও মুথো (cyperus rotundus) ২৫০ মিলিগ্রাম একসঙ্গে সকালে ও বিকালে দুইবার জলসহ খেতে হয়, এর দ্বারা দু’দিনের মধ্যেই এই অতিসার প্রশমিত হবে।

৭. ইন্দ্রিয়-দৌর্বল্যে:  অনেকের ধারণা আছে পুরুষের বিশেষ অঙ্গটাই বুঝি ব্যাধিগ্রস্ত। না, সেটা ঠিক নয়, সমগ্র শরীরের যে শুক্রধাতু সেই তো আজ দুর্বল, তাই সেও তো দুর্বল; অতএব শুক্রধাতুকে বলবান করলেই সেও বলবান হবে। সেক্ষেত্রে  প্রত্যহ দুটি করে বহেড়া বীজের শাঁস (বাদামের মতো) খেতে হবে, এর দ্বারা শুক্রের বলাধান হবে, তারও স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে।

বাহ্য প্রয়োগ:

৮. টাকে:  যে টাক পরিণত বয়সে এসেছে, তাঁরা সেক্ষেত্রে চেষ্টা করলে বিশেষ কিছু লাভ হবে বলে মনে হয় না। যাঁদের অকালে টাক পড়ে যাচ্ছে তাঁরা বহেড়া গাছের ফলের বীজের শাঁস অল্প জল দিয়ে মিহি করে বেটে, টাকে চন্দনের মতো লাগাতে পারেন, এটা একদিন অন্তর লাগালেও চলে। এর দ্বারা নতুন চুল বের হবে, রোগা চুলগুলিও মোটা হবে।

৯. অকালপক্কতায়:  যাঁদের ছেলেবেলায় বা কম বয়সে পাক ধরেছে, তাঁরা বহেড়া ১০ গ্রাম (বীজ বাদ) জল দিয়ে বেটে, এক কাপ জলে গুলে, ছে’কে, সেই জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলবেন। এটা দুপুরের দিকে করাই ভাল, নইলে মাথায় জল বসে সর্দি হতে পারে।

১০. দাঁতের মাড়ির ক্ষতে:  বীজ বাদ বহেড়া গাছের শাঁস (উপরের মাংসল অংশ) আন্দাজ ৫ গ্রাম জল দিয়ে বেটে, ঘন করে জলে গুলে সেইটা কবল ধারণ করতে হবে। তবে দিনে ২ থেকে ৩ বার হলে ভাল হয় এবং মুখে নিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট বসে থাকতে হবে।

আরো পড়ুন:  বিভিন্ন নটে শাক-এর দশটি ভেষজ গুণাগুণ ও প্রযোগ

১১. ফুলোয়:  যেখানে তার সঙ্গে ব্যথা থাকবে, সেখানে বহেড়া বেটে একটু  গরম করে প্রলেপ দিলে ব্যথা ও ফুলো দুই-ই কমে যাবে।।

১২. রক্তোরোধে:  কেটে গেলে তাড়াতাড়ি রক্ত বন্ধ করতে গেলে বহেড়ার মিহি গুড়া ঐ কাটা জায়গায় টিপে দিলে তখনই রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে, ব্যথাও হবে না। সংসারী লোকের ঘরে এটা একটু তৈরী করে রাখা ভাল, এটা styptic -এর কাজ করবে।

১৩. শ্বিত্রে (শ্বেতি রোগে): বহেড়া বীজের শাঁস থেকে তেল বের করে ঐ সাদা জায়গায় লাগালে কিছুদিনের মধ্যে ওটার বর্ণ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

১৪. চোখ ওঠায়:  যে চোখ ওঠায় চোখ করকর করছে, জল ঝরছে, সেক্ষেত্রে বহেড়া ঘষে চোখে কাজলের মতো লাগিয়ে দিলে চোখ ওঠা ও চোখের জলপড়া বন্ধ হয়।

রাসায়নিক গঠন:

(a) Tanvain. (b) Fixed oil. (c) Saponin. (d) resinous compounds. (e) Amorphous glycosidal compounds.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি’  খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ২৮১-২৮২।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

Leave a Comment

error: Content is protected !!