ডালিম গাছ ও ফলের ২০টি উপকারিতা ও ভেষজ ব্যবহার

ডালিম বা আনার হচ্ছে ছোট এক ধরনের বৃক্ষের ফল। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম: Punica granatum, এবং এদের ইংরেজি নাম: pomegranate। ডালিমের আছে বহুবিধ ঔষধি ও অন্যান্য খাদ্যগুণ। নিচে ডালিমের বিস্তারিত উপকারিতা ও ভেষজ ব্যবহার উল্লেখ করা হলো।

ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত অংশ:

১. পাতা ও গাছের ছাল:  সংকোচক, অতিসার ও ক্রিমিনাশক।
২. ফলের রস: স্নিগ্ধ গুণ, জ্বর-অতিসার-অজীর্ণ-অরুচি নাশক, বলকারক ও যকৃতের ক্রিয়া শোধক। এতে Vitamin B ও C পাওয়া যায়।
৩. ফলের ছাল:  আম ও রক্তাতিসার, অজীর্ণ নাশক।
৪. ডালিমের ফুলে: রক্তস্নানাশক ও কফ।
ব্যবহার্য অংশ: ফল, ফলের খোসা, মূলের ছাল, ফুল ও পাতা।

ব্যবহার:

১. অতিসারে: (ক) নতুন বা পুরাতন অতিসারে ডালিমের খোসা চূর্ণ ১ থেকে ৩ গ্রাম মাত্রায় মধু সহ সেবন করতে হবে।

(খ) ডালিমের খোসা ২০ থেকে ২৫ গ্রাম আধ সের জলে সিদ্ধ করে ১ কাপের মতো থাকতে নামিয়ে ছেকে খেলে অতিসার সেরে যায়।

(গ) ডালিমের খোসা ও বেলশুঁঠের চূর্ণ সমভাগে মিশিয়ে ২ থেকে ৩ গ্রাম মাত্রায় মধু সহ সেবনে চমৎকার ফল পাওয়া যায়।

২.  অতিসার, রক্তাতিসার ও অজীর্ণ: এ তিনটিতে যাঁরা প্রায়ই ভোগেন, তাঁরা ডালিমের খোসা চূর্ণ ১-৩ গ্রাম মাত্রায় বালির সঙ্গে বা ছাগলের দুধের সঙ্গে খাবেন, কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে যাবেন।

৩. রক্তাতিসারে:  (ক) ডালিমের খোসা চূর্ণ ও কুড়চির ছাল চূর্ণ সমভাগে মিশিয়ে ২ থেকে ৩ গ্রাম মাত্রায় খেলে ভাল কাজ হয়। (চক্রদত্তের অভিমত।)

(খ) ডালিমের কচিপাতা ছাগদুধের সঙ্গে ফুটিয়ে ছেকে সেই দুধ পান করলে দুরারোগ্য রক্তাতিসার সারে।

(গ) পাতার রস ১ থেকে ২ চা-চামচ মাত্রায় মধুর সঙ্গে খেলেও কাজ হয়।

৪. আমাশয়ে: (ক) গাছের ছাল সিদ্ধ করে খেলে আমাশয় সারে, এটি আমাশয়েও কাজ দেয়।

(খ) বালির সঙ্গে ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে খেলে বেল শুঁঠের মত কাজ দেয় আমাশয় রোগে। কাঁচা ছাল হলে ৫ থেকে ৬ গ্রাম, শুকনা ছাল ৩।৪ গ্রাম হলেই চলবে।

আরো পড়ুন:  আমড়া গাছ, ছাল, পাতা, ফলের ১২টি ঔষধি ব্যবহার

৫.আমাজীর্ণ: ডালিমের রস (ফলের) ও পুরাতন আখের গুড় একসঙ্গে খেলে কাজ হয়। অথবা এই রসে একটু, বিট লবণ মিশিয়ে খেলেও হবে।

৬. রক্তপ্রদর:  ডালিমের ফল বেটে মধুসহ খেলে ওটার বেগ কয়েকদিনে কমে যায়, আরও কিছুদিন খেলে সেরে যায়।

৭ চলিত গর্ভে: যে মেয়েদের প্রায়ই গর্ভাস্রাব হয়ে যায়, তারা ডালিমের পাতা বাটা, সাদা চন্দনঘষা ও মধু একত্র মিশিয়ে দধির সঙ্গে খেলে ও শঙ্কা করতেই হবে না। এটা বাগভটের দৃঢ়; অভিমত-হারীত সংহিতাতেও ঐ কথা বলা হয়েছে, তবে হারীত পঞ্চম মাসে খেতে বলেছেন।

৮. কফ-পিত্তাধিকে: বিশেষতঃ শিশুদের এটি হলে ডালিমের ফুল ছাগলের দুধে মেড়ে লেহবৎ করে খেতে দিলে দোষটা দূর হয়।

৯. রক্তপিত্তে: ডালিমের ফলের রস ১ চা-চামচ মাত্রায় কয়েকদিন খেলে রক্ত ওঠা বা পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

১০. নালা থেকে রক্তস্রাব: ডালিমের ফুলের রস নাক দিয়ে টানলে রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায়।

১১. অরুচিতে: অল্প ডালিমের ফলের রস, বিট লবণ ও মধু একত্রে মিশিয়ে কুলকুচা করে ফেলে দিলে অরুচি কমে যায়। এটি চক্তদত্তের অভিমত।

১২. পুরাতন অজির্ণে ও অগ্নিমান্দ্যে: এতে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা প্রত্যহ ঘোলের সঙ্গে খানিকটা টক বা মিষ্টি ডালিমের রস ও একটু, বিট লবণ মিশিয়ে খেয়ে দেখুন, ম্যাজিকের মতো উপকার পাবেন।

১৩. উপদংশের মতে: ডালিম গাছের ছাল চূর্ণ ছড়িয়ে দিলে ঘা শুকিয়ে যায়।

১৪. কৃমিতে:  ডালিম মূলের ছালের চূর্ণ ১ থেকে ৩ গ্রাম মাত্রায় (বয়সানুপাতে) চলের জলসহ খেলে ক্রিমি দূর হবেই। ফিতা কৃমিতে(Tape worm) ভাল কাজ হয়।

১৫. হৃদরোগে: ডালিমের রস ২-৪ চা-চামচের সঙ্গে অল্প একটু, ঘূতকুমারীর শাঁস মিশিয়ে খেলে বায়ুজনিত হৃদরোগের উপশম হয়।

১৬. অনিদ্রায়: যাঁরা অনিদ্রা বা অল্প নিদ্রায় ভোগেন, তাঁরা ডালিমের রসের সঙ্গে ঘতকুমারীর শাঁস মিশিয়ে খেয়ে দেখুন ২ থেকে ৪ দিনে ও কষ্টটা দূর হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন:  বেল এশিয়ার সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ঔষধিগুণ সম্পন্ন ফল

১৭. শ্বেতপ্রদর: যে সব মা-বোনের সাদা স্রাব হয়, তাঁরা ডালিমের ফুল ২ থেকে ৩টি বেটে একটু, সাদা চন্দন ঘষা মিশিয়ে সম্ভব হলে অল্প দুধ মিশিয়ে অথবা জল দিয়ে খেয়ে দেখুন, ৩। ৪ দিন খেলে উপকার পাবেন।

১৮. মেধা হ্রাস: এটা হলে অনেক সময় দেখা যায় শরীরও ভেরে যাচ্ছে, এদিকে বুদ্ধিটাও মোটা হচ্ছে সেক্ষেত্রে ডালিমের রসের সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু মিশিয়ে প্রত্যহ একবার করে খেয়ে দেখুন, শরীরটাও ঝরে যাবে, মেধাও বাড়বে।

১৯. মূত্রকৃচ্ছতায়: ডালিমের রসের সঙ্গে গোক্ষুর গাছের চূর্ণ ২ থেকে ১ গ্রাম মাত্রায় খেলে ২ থেকে ৩ দিনেই ভাল ফল পাওয়া যায়।

২০. যকৃৎ বৃদ্ধিতে:  শিশুদের লিভার বেড়ে গেলে ডালিম গাছের মূলের ছাল চূর্ণ করে ২ বা ৪ গ্রেণ অথবা আধ গ্রাম মাত্রায় ২ থেকে ১ চামচ দুধ মিশিয়ে সকালের দিকে খেতে দিতে হয়, তার সঙ্গে ২ থেকে ৫ ফোঁটা মধু হলে ভাল হয়। পথ্যের দিকে কড়াকড়ি করলে কোনো কিছুতেই উপকার হবে না।

রাসায়নিক গঠন:

(a) alkaloids iz., pseudo-peletierine, pellaterine, isopelletierine, methylpelletierine.

(b) Vitamin Pacitivity.

(c) Mannitol and sorbitol.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,২৮৯-২৫০।

1 thought on “ডালিম গাছ ও ফলের ২০টি উপকারিতা ও ভেষজ ব্যবহার”

  1. I Like this blog quite often and I genuinely thank you for your information. The article has truly peaked my interest.

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!