পান পিপারাসি পরিবারের পিপার গণের একটি ঔষধি অর্থকরী লতা

পিপারাসির প্রজাতি

পান

বৈজ্ঞানিক নাম: Piper betle L., Sp. Pl.: 28 (1753). সমনাম: Chavica betle (L.) Miq. (1844), Piper pinguispicum C. DC. & Koord. 1909). ইংরেজি নাম: Betel, Betel Vine.স্থানীয় নাম: পান, তামবুলি।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae; বিভাগ: Angiosperms; অবিন্যাসিত: Monocots; বর্গ: Liliales; গোত্র: Liliaceae; গণ: Piper; প্রজাতি: Piper betle L..

বর্ণনা: পান বা খিলি পান (বৈজ্ঞানিক নাম: Piper betle) পিপারাসি পরিবারের পিপার গণের একটি বহুবর্ষজীবী, শক্ত ও ঝুলন্ত আরোহী লতা। এরা ৫-২০ মিটার লম্বা, শাখাসমূহ স্ফীত পর্ববিশিষ্ট, আরোহী সহায়কের সহিত দৃঢ় সংলগ্ন হওয়ার জন্য পর্ব থেকে অস্থানিক মূল গজায়। পাতা সরল, একান্তর, দৃঢ় চর্মবৎ, হৃৎপিণ্ডাকার বা ডিম্বাকার-দীর্ঘায়ত অথবা ডিম্বাকার-হৃৎপিণ্ডাকার, পাদদেশ হৃৎপিণ্ডাকার, গোলাকার বা তির্যক, শীর্ষ দীর্ঘাগ্র, কিনারা অখন্ড, পত্রবৃন্ত ১.০২.৫ সেমি লম্বা।

পুষ্পমঞ্জরী বেলনাকার স্পাইক, মঞ্জরীপত্র বর্তুলাকার, ছত্রাকার, মঞ্জরীদন্ড ১-৬ সেমি লম্বা। বৃত্যংশ এবং পাপড়ি অনুপস্থিত। পুং স্পাইক ১২ সেমি পর্যন্ত লম্বা, মঞ্জরীদন্ড প্রায় পত্রবৃন্তের সমান, মঞ্জরীপত্র বর্তুলাকার বা উপবর্তুলাকার, কদাচিৎ বিডিম্বাকার, ছত্রাকার। পুংকেশর ২টি, পুংদন্ড খাটো, পরাগধানী বৃক্কাকার। স্ত্রী স্পাইক ৩-৫ x ১-২ সেমি, পুংদন্ড সরস, ঘন রোমাবৃত, গর্ভাশয় অধিগর্ভ, গর্ভদন্ড খাটো, গর্ভমুণ্ড ৩-৫টি, ভল্লাকার, রোমশ, ডিম্বক একক, সোজা। ফল রসালো ড্রুপ, ক্ষুদ্র, ডিম্বাকার বা গোলকাকার। বীজ উপবর্তুলাকার, ৩-৫ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে ডিসেম্বর-মে মাস পর্যন্ত।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৬, ৩২, ৪২, ৫২, ৫৮, ৬৪, ৭৮ (van der Vossen and Wessel, 2000).

আবাসস্থল: ছায়াযুক্ত শুষ্ক স্থানে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সুনিষ্কাশিত ভঙ্গুর বেলে ও দোআঁশ মাটি এবং PH প্রায় ৭.০-৭.৫ পর্যন্ত ।

বিস্তৃতি: আদিনিবাস মালয়েশিয়া, বিশ্বের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ব্যাপক বিস্তৃত। বাংলাদেশে বর্তমানে ইহা একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে দেশের সর্বত্র চাষ করা হয়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: পাতা পাকস্থলীর বায়ুনাশক, কোষ্ঠবদ্ধতাকারী, উত্তেজক এবং পচন নিবারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইহা শিশুদের মাথা ব্যাথা এবং কাশিতেও ব্যবহৃত হয়। পাতার বোঁটা শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যে মলত্যাগে সাপোজিটোরী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাতার রস চোখ ব্যাথায়, রাত কানা রোগে এমনকি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণেও চোখের ড্রপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শিকড় মহিলাদের স্থায়ী বন্ধাত্ব ঘটিয়ে থাকে। পাতার নির্যাস ক্যান্সার জনিত এন্টিটিউমার কার্যাবলী প্রদর্শন করে এবং তামাকের মিউটাজেনিক ও ক্যান্সার প্রবণতা বিশেষ করে নাইট্রোস্যামাইন এর প্রভাব দমিয়ে রাখে (Ghani, 2003). পানের ভেষজ উপকারিতা বিস্তারিত জানতে

আরো পড়ুন:  মহুয়া সাপোটাসি পরিবারের মধুকা গণের ভারতবর্ষ ও এশিয়ার চিরসবুজ বৃক্ষ

পড়ুন: পান পাতার ভেষজ গুনাগুণ

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: অতীতে জন্ম ও মৃত্যুর প্রথাগত অনুষ্ঠানের মুল রেওয়াজ যেমন ছিল পান চিবানো তেমনি রেওয়াজ ছিল বিবাহ পূর্বক বৈঠক ও বিবাহের অনুষ্ঠানে। অনেক পূর্ব থেকেই আইনী চুক্তি, মীমাংশা, বিবাহ বা অন্যান্য সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল পান মিশ্রণ। চুক্তি স্বাক্ষরের পরে চুক্তি মঞ্জুরের চুরান্ত নিদর্শন হিসেবে পান চিবানো হতো। থাইল্যান্ডে ভাবী বর তার প্রিয়তমার পাণীপ্রার্থনা করতে হবু শ্বশুরকে একটি বিশেষ ধরণের গামলা ভর্তি পান ও সুপারি উপঢৌকন হিসেবে দিত (van Der Vossen and Wessel, 2000).

বংশ বিস্তার: কর্তিত কান্ডের মাধ্যমে।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) পান প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ নেই এবং বাংলাদেশে এটি আশংকা মুক্ত (lc) হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে পান সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি বর্তমানে সংরক্ষণের জন্য কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন নেই।[১]

তথ্যসূত্র:

১. এম আহসান হাবীব, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৯২-৩৯৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!