এক্কা দোক্কা তিন তেরেক্কা
মা গিয়েছে দক্ষিণেশ্বর
মামা গেছে ফারাক্কা
চোখ পিটপিট, গা কুটকুট
কুড়র মুড়র ঝাল বিস্কুট
কার পকেটে
কান পেতে শোন টক্কা টরে
দরজাতে কে শব্দ করে
তেরে কেটে তাক তেরে কেটে
চোর না পুলিশ
দেখে খুলিস।
হুশিয়ার খুব, সাবধান
তোর। সত্যি কী ভীতু
আমি চি-লা চি-ল চি-টু
পালের গোদা কাপ্তান
দেখে এলাম উঠোনে
দাঁতে কাটার কুটো নেই
কাকের চোখে চালশে
বসে রয়েছে আলসেয়
কুকুর দুটো ঝিমুচ্ছে
বেড়াল গুলো স্বপ্ন দেখে
থেকে থেকে মুখ মুচছে
চি-মি চি-উ! চি-বে চি বে !
চ’লে আয় পা টিপে টিপে
চি-বু চি-ম চিল!
আমরা হলাম লাল গেরিলা
দাদামশাইয়ের বৈঠকখানায়
ঘোড়ায় চড়ে দেব হানা
চাবুক চলছে ফটাফট
সামনে থেকে
কে আছিস্ হট
পেরিয়ে গাড়ি-বারাণ্ডা
ফেলব আমরা ডেরাডাণ্ডা
একা দোক্কা তিন তেরেক্কা
দরজাতে দিস্ আস্তে ধাক্কা
লোহা লাঠি ঝাঁটার কাঠি
মেঝেতে পাত শীতলপাটি
ছুড়ে দিয়ে খোলামকুচি
দাদামশাইয়ের ঘর কিনেছি
চৌকির ওপর দাদামশাই
কথার পিঠে কথা বসায়
চুলগুলো তার শণের মুড়ি
ফোকলা দাঁতে চিবোয় মুড়ি
জানলাতে নেই পর্দা
থলিতে ভতি রেজগি
এক কৌটোয় ভাজা মশলা
এক কৌটোয় জর্দা
ভুল করলে তুলতে হবে
অনবরত হেঁচকি
একা দোক্কা তিন তেরো
আজকে বেজায় ধুমধড়াক্কা
দাদামশাই পড়বে শোলক
আমরা বাজাব মাটির ঢোলক
ডিমের ডেভিল, মাছের চপ
অর্থাৎ কিনা মচ্ছব।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।