ক্যালেণ্ডারে হাত দিস্ নে।
যা ভাগ, বোকা হাবা !
চেয়ার খালি। জানলা খোলা।
নিরক্ষর হাওয়া
বারে বারে একই বইয়ের
ওটাচ্ছে পাতা।
ঘড়ির কাটায় হাত দিস নে,
সময় গোনাগাঁথা।
বারান্দায় ফুলের টব,
মেঝেয় ছাড়া-চটি,
ব’সে ব’সে শুঁড় নাড়াচ্ছে
মাটির প্রজাপতি।
টেবিলঝাড়া পাখির পালক
ঘরের মধ্যে ওড়ে
খাটের তলায় ছেঁড়া চিঠিটা
বেড়ায় ন’ড়ে-চ’ড়ে।
পা আকাশে, হাত নামানো—
রেলিঙে সার বেঁধে
শুকোয় কাপড়। রঙিন ঘুড়ি
তারে রয়েছে বেধে।
আলো নেভানো; চোখ বন্ধ।
দেখতে পাচ্ছি সবই।
কাঠের বাক্সে পোকায় কাটছে
পুরনো গ্রুপছবি ।
একটিবার দৌড়ে এসে
ও নদী, ও স্মৃতি—
ঘরের এই দেয়াল ধ’রে
দাঁড়াও না, লক্ষ্মীটি!
দরজায় কে পর্দা ঠেলছে ?
বাইরে যাই। ফিরি।
পায়ের শব্দে নেমে যাচ্ছে
অন্ধকার সিঁড়ি॥
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।