বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অন্বেষার প্রয়োজনীয় স্তরসমূহের মধ্যে সাধারণীকরণ (ইংরেজি: Generalisation) অন্যতম। জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে এভাবে বিবৃত করা যায়: কোনো প্রশ্নের মীমাংসার জন্য আমরা প্রথমে প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ বিশেষ ঘটনা বা বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করি; এটি প্রথম স্তর। দ্বিতীয় স্তরে পর্যবেক্ষিত বস্তু বা ঘটনাকে তুলনা ও বিশ্লেষণ করে পর্যবেক্ষিত বস্তু বা ঘটনা এবং অনুরূপ বস্তু বা ঘটনার উপর প্রয়োগযোগ্য একটি ব্যাখ্যা বা সমাধান তৈরি করি। এই স্তরটি সাধারণীকরণের স্তর। সাধারণীকরণ দ্বারা বা সাধারণ ধারণাটি বাস্তবে প্রয়োগ করে আমাদের অনুমিত সিদ্ধান্তের সঠিকতা কিংবা বেঠিকতাকে আমরা যাচাই করি।
বাস্তব অভিজ্ঞতা গৃহীত সাধারণ সিদ্ধান্তটি সঠিক প্রমাণ করলে সাধারণ সিদ্ধান্তটি একটি নিয়ম বা বিধানের মর্যাদা লাভ করে। দৃষ্টান্ত হিসাবে ম্যালেরিয়া জ্বরের কারনের অনুসন্ধানের উল্লেখ করা যায়। ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ জানার জন্য প্রথম স্তরে এই জ্বরে আক্রান্ত একাধিক রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষণের পরে রোগীদের মধ্যকার সাধারণ বা সর্বদা উপস্থিত অবিচ্ছেদ্য বিষয় বা উপাদান (এনোফেলিস মশার কামড়) বিশ্লেষণের মারফত নির্দিষ্ট করে এই জ্বরের কারণ সর্বদাই যে এনোফেলিস মশার কামড়, সেরূপ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তী স্তরে সিদ্ধান্তটিকে বাস্তবে আরো প্রয়োগ ও পরীক্ষার মাধ্যমে তার নিসংশয়তা স্থির করা হয়।
জ্ঞানের বিকাশে সাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা মানুষের একটি উন্নততর স্তরকে চিহ্নিত করে। মানুষ আদিতেই বস্তুপুঞ্জ পর্যবেক্ষণ করে তাকে তুলনা ও বিশ্লেষণ করে সাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে নি। তার জন্য তার মনন ক্ষমতার অধিকতর বিকাশের অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
সাধারণ ধারণায় আমরা যেমন বস্তুর সারকে জানার চেষ্টা করি, তেমনি আবার বিশেষ বস্তুর যে বৈচিত্র্য, সাধারণ সিদ্ধান্তে তার অনুপস্থিতি ঘটে। আমরা একত্রে সন্নিবেশিত বৃক্ষরাজিকে পর্যবেক্ষণ করে তাকে সামগ্রিকভাবে বন বলে আখ্যায়িত করি। বৃক্ষরাজির সম্মেলনে বন তৈরি হয়; সে ‘বনে’র একটি সাধারণ রূপ আছে –বিশেষ বিশেষ বৃক্ষের বৈচিত্র্য তাতে নেই।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১৮৪-১৮৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।