দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হলো পাশ্চাত্যের দ্বারা নিপীড়িত অঞ্চল

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া (Southeast Asia) উন্নয়নশীল বিশ্বের এক বিস্তৃত জনবহুল অঞ্চল। প্রায় ১০ লক্ষ বর্গকিলােমিটার বিস্তৃত এই অঞ্চলের জনসংখ্যা আফ্রিকা ও এশিয়ার মােট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ ভাগ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দুইটি ভৌগোলিক অঞ্চলের সমষ্টি: এশীয় মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত অংশ, এবং এর পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে সমুদ্রে অবস্থিত বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জ ও বৃত্তচাপাকৃতি দ্বীপপুঞ্জ।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ড অংশটি ইন্দোচীন উপদ্বীপ নামে পরিচিত এবং এখানে ক্যাম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম অবস্থিত; এখানে মূলত তাই ও অস্ট্রো-এশীয় জাতির লোকেরা বাস করে। সামুদ্রিক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ব্রুনাই, পূর্ব তিমুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ এবং সিঙ্গাপুর নিয়ে গঠিত; এখানে মূলত অস্ট্রোনেশীয় জাতির লোকেরা বাস করে।

আজকের দুনিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির গুরুত্ব সমধিক। এদের বিপুল আন্তর্জাতিক গুরুত্বের প্রধান প্রধান কারণ হলো এই দেশগুলি জনশক্তির অন্যতম প্রধান উৎস এবং মুক্তিসংগ্রামী অঞ্চল।

এসব দেশ প্রাকৃতিক সম্পদসমদ্ধ। এরাই স্বাভাবিক রবার, টিন ও চায়ের প্রধান উৎপাদক ও বিক্রেতা। তদুপরি এখানে রয়েছে যথেষ্ট ম্যাঙ্গানিজ ও তামা আকরিক, নিকেল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী।

এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ইউরােপ ও আফ্রিকার এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যেকার যােগাযােগকারী বিশ্বের সমদ্রপথ ও বিমানপথগুলির স্ট্রাটেজিক ও অর্থনৈতিক গুরত্ব সমধিক।

অতীতে দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া ব্রিটিশ, ওলন্দাজ ও ফরাসী ঔপনিবেশিকদের দখলভুক্ত ছিল। ওলন্দাজ অধীনতা থেকে মুক্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইন্দোনেশিয়ার অভ্যুদয় ঘটে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়লাভের মধ্য দিয়ে প্রাক্তন ফরাসী ইন্দোচীনে ভিয়েতনাম, লাওস ও কাম্বােডিয়া রাষ্ট্রগুলি গঠিত হয়। অতঃপর বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় এগুলির ভূখণ্ডে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, লাওস জনগণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, কাম্পুচিয়া গণপ্রজাতন্ত্রের অভ্যুদয় ঘটে। প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ মালয় এবং সিঙ্গাপুরও স্বাধীনতা পায়। মার্কিনীরাও ফিলিপাইনকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রগুলির অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। কৃষিতেই তাদের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ কর্মরত এবং এটিই অর্ধাংশের বেশি জাতীয় আয়ের উৎস। উৎপাদনের এই শাখায় চা, তামাক, রবার এবং রপ্তানিযােগ্য অন্যান্য কৃষিজাত ফসল চাষের গুরুত্ব খুবই উল্লেখযােগ্য। ক্ষুদ্র কৃষকদের অধ-গ্রাসাচ্ছাদনসর্বস্ব অর্থনীতি ও জমিদারীগলি নিজেদের খাদ্যচাহিদা মেটাতে পারে না। কৃষির অনগ্রসরতা এসব দেশের শিল্পােন্নয়নের মন্থর গতির একটি প্রধান কারণ।

আরো পড়ুন:  আরব লিগ আরবের দেশ নিয়ে গঠিত পুঁজিবাদের সেবাকারী সংগঠন

তথ্যসূত্র:

১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১২৩-১২৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!