জাতক বা জাতক গল্পসমূহ (ইংরেজি: Jataka বা Jataka Tales) হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের পূর্বজন্মসমূহের কাহিনী ভান্ডার। ‘জাতক’ অর্থ জন্মগ্রহণকারী। এ সমস্ত কাহিনী পালি সাহিত্যের সূত্ত পিটকের অঙ্গীভূত। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, বুদ্ধদেব ৫৫০টি পূর্বজন্মের পরিণামে তাঁর সর্বশেষ জীবন লাভ করেন। এই সমস্ত পূর্বজন্মে তিনি কিভাবে জীবন যাপন করেছেন তার কাহিনী নিয়েই জাতক গ্রন্থ। জীবনে ব্যক্তির পক্ষে করণীয় অকরণীয়ের উপদেশমূলক জাতক কাহিনী শুধু এশিয়ায় নয়, ইউরোপেও বিভিন্ন নামে প্রচলিত হয়েছিল। ইউরোপে প্রচলিত ইশপের গল্প জাতক কাহিনীর রূপান্তর।
‘বিশ্বকোষ’ নামক প্রখ্যাত বাংলা জ্ঞানকোষে ‘জাতক’-এর বিবরণ রয়েছে। সেখান থেকে জানা যায় ‘জাতক, বৌদ্ধ গ্রন্থবিশেষ। জাতক অর্থাৎ বুদ্ধদেবের এক এক জন্মের বিবরণ। বৌদ্ধগণ বলেন, সমস্ত জাতকের সংখ্যা ৫৫০। বুদ্ধদেব স্বয়ং শ্রাবস্তী অবস্থানকালে তাঁহার শিষ্যগণকে মোক্ষ ধর্ম শিক্ষা দিবার নিমিত্ত ৫৫০ পূর্বজন্মের যে যে অলৌকিক কার্য করিয়াছিলেন তাহাই ঐ সমস্ত জাতকে গল্পচ্ছলে বলিয়া যান। বুদ্ধের মুখ নিঃসৃত বলিয়া বৌদ্ধগণ এই সকল গ্রন্থকে পরম পবিত্র গ্রন্থ বলিয়া মান্য করেন’।
কালের প্রবাহে এখন অনেক জাতক বিলুপ্ত হইয়াছে। প্রচলিতদের মধ্যে অগস্ত্য, অপুত্রক, অধিসহ্য, শ্রেষ্ঠী, আয়ো, ভদ্রবর্ণীয়, ব্রহ্ম, ব্রাহ্মণ, বুদ্ধবোধি, চন্দ্রসূর্য, দশরথ, গঙ্গাপাল, হংস, হস্তী, কাক, কপি, ক্ষান্তি, কাল্মষ পিন্ডি, কুম্ভ, কুশ, কিন্নর, মহাবোধি, মহাকপি, মহিষ, মৈত্রীবল, মৎস্যমৃগ, মধ্যদেবীয়, পদ্মাবতী, রুরু, শত্রু, শারভ, শশ, শতপত্র, শিবি, সুভাস, সুপারগ, সূতসোম, শ্যাম, উন্মাদয়ন্তী, বানর, বর্তকপোত, বিশ, বিশ্বম্ভর, বৃষভ, ব্যঘ্র, যঞ্জ, বৃষহরণীয়, লতবু, বিতুর, পুষ্পর জাতকের নাম উল্লেখ করা যায়। এই সকল গ্রন্থ সংস্কৃত ও পালি ভাষায় রচিত। অনেকে অনুমান করেন এই সকল জাতক দুই হাজার বৎসর পূর্বে রচিত হইয়াছে। ইহাদের অনেকগুলির গল্প পঞ্চতন্ত্রের বা ঈশপের গল্পের ন্যায়। অনেকগুলি আবার হিন্দু পৌরাণিক গল্পের পরিবর্তিত বৌদ্ধরূপ।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৪৬।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।
বুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার।
লেখাটি বিস্তারিত হলে ভালো ভাবে বুঝা যেত। ধন্যবাদ।