কম্বোডিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি পুঁজিবাদ অনুসারী দেশ

কম্বোডিয়া বা কম্বোডিয়া রাজতন্ত্র বা কম্পুচিয়া (ইংরেজি: Kingdom of Cambodia) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি পুঁজিবাদ অনুসারী দেশ। ইন্দোচীন উপদ্বীপে অবস্থিত অন্যান্য দেশের মতাে কম্বােডিয়া দীর্ঘকাল বৈদেশিক উপনিবেশবাদীদের কবলে ছিল। প্রথমত দেশটিকে ফরাসীরা দখল করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানে জাপানীদের এবং যুদ্ধোত্তর কালে আবার ফরাসীদের দখল কায়েম হয়। মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য কম্বােডিয়ার জনগণকে স্থানীয় প্রতিক্রিয়া সমর্থিত মার্কিন দখলদারদের সৃষ্ট বহু বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করতে হয়েছে। কম্বোডিয়া ১৯৫৩ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে।

পিকিঙের এবং মস্কোর দ্বন্দ্বে কম্বোডিয়া যথাক্রমে প্রজাতন্ত্র এবং গণপ্রজাতন্ত্রী রূপ ধারণ করলেও ১৯৯০ সালে কম্বোডিয়ায় রাজতন্ত্র ফিরে আসে। বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগােষ্ঠী দেশটিকে অশেষ দুঃখে জর্জরিত করেছে। ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে কম্বােডিয়ার জাতীয় মুক্তি ঐক্যফ্রন্ট এই কম্পুচিয়া গণপ্রজাতন্ত্র ঘােষণা করে।

দখলদার ও প্রতিক্রিয়াশীলদের কর্তৃত্বের ফলে কম্পুচিয়ার অর্থনীতির প্রধান শাখা – কৃষির সামর্থ বিপন্ন হয়েছিল। জমিচাষের প্রধান ফসল ধান এবং ভুট্টা ও অন্যান্য খাদ্যফসলের উৎপাদন হ্রাস পায়। প্রাকৃতিক রবার উৎপাদনের প্রধান উৎস রবার বাগানগুলি এবং মাংস ও দুধের জন্য পালিত পশুগুলির বিপুল সংখ্যা বিনষ্ট হয়। এতে বস্ত্র, খাদ্য এবং যুদ্ধোত্তর বিকাশমান শিল্পের অন্যান্য শাখারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। শহরের জনসংখ্যাও দেশের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

কম্পুচিয়ায় গণপ্রজাতন্ত্র ঘােষণার কল্যাণে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের এক নতুন পরিপ্রেক্ষিতের উন্মেষ ঘটেছে। শিল্পের রাষ্ট্রীয় খাত গঠিত হচ্ছে। কৃষিব্যবস্থা উন্নয়নের উপর বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে।

দেশটির প্রাকৃতিক পরিস্থিতি যথেষ্ট অনুকূল। মেকং নদীর নিম্নাঞ্চলের উর্বর অববাহিকার আবহাওয়া ধান, ভুট্টা, আখ, তুলা ও তামাক উৎপাদনের খুবই উপযােগী। বলাই বাহুল্য এখানে রবার গাছ, মরিচ প্রভৃতি ফসল প্রচুর ফলে। দেশের নিরক্ষীয় অরণ্য মূল্যবান গাছপালার ভাণ্ডারস্বরূপ। এখানকার আবিষ্কৃত খনির মধ্যে রয়েছে ফসফরাইটস, ম্যাঙ্গানিজ, লৌহেতর ধাতু, দামী পাথর এবং শিল্পের জন্য প্রয়ােজনীয় অন্যান্য কাঁচামাল।

আরো পড়ুন:  এশীয় উৎপাদন পদ্ধতি হচ্ছে কৃষিভূমিতে সামাজিকতার ফলস্বরূপ সমাজে বিরাজিত নিশ্চলতা

ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং সমাজতান্ত্রিক সহমিতালীভুক্ত অন্যান্য দেশের ভ্রাতৃপ্রতীম সাহায্যে কম্পুচিয়া গণপ্রজাতন্ত্র নতুন জীবন নির্মাণ করছে। এদের সমর্থনে কম্পুচিয়ার জনগণ সমাজতান্ত্রিক পথ অনুসরণকারী শান্তিকামী স্বাধীন গণতান্ত্রিক কম্পুচিয়ার ভিত্তি গড়ে তুলছে।

তথ্যসূত্র:

১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১২৫-১২৬।

Leave a Comment

error: Content is protected !!