পুদিনা (বৈজ্ঞানিক নাম: Mentha spicata) একটি বর্ষজীবী গাছ। এদের খুব তীব্র গন্ধ থাকে। পাতাগুলো খুব ছোট ছোট। পাতার উভয় কিনারায় করাতের মত খাঁজ কাটা থাকে। পুষ্পদণ্ড খুবই নরম। বহির্বাস লোমযুক্ত এবং পুস্পস্তবকের মধ্যে থাকে। এ গাছের চাষ করা হয়। পুদিনার তেল তার সুগন্ধির জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এটাকে পুদিনার তেল হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
পুদিনা পাতা-র ব্যবহার:
১. পেট ফাঁপায়: সহজ কথায় পেটে বায়ু জমে যাওয়া। এ অবস্থার নানা রোগে হতে পারে। বদহজমের ফলেই পেটে বায়ু জমে এবং পেট ফাঁপে। এক্ষেত্রে পুদিনার রস ২ চা-চামচ, সামান্য লবণ, মরিচ চূর্ণ এক টিপ, কাগজী লেবুর রস ৮/১০ ফোঁটা ও হালকা গরম জল পোয়াখানিক একত্রে মিশিয়ে সারাদিনে ২-৩ বার করে কয়েকদিন খেলে পেটে বায়ুজমা বন্ধ হবে এবং খাদ্যে রুচিও ফিরে আসবে। এছাড়াও পুদিনা গাছের শুকনা পাতা ও ডাল ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে সে পানি পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে ছেকে খেলে পেট ফাঁপায় উপকার হয়।
২. কামলা রোগে: এ রোগে ১০ গ্রাম পুদিনার শুকনা ডাল এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানিতে ৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে অর্ধেকটা এবং দুপুরে অর্ধেকটা খেলে রোগের উপশম হয়। তবে দিন সাতেক নিয়মিত খেতে হবে।
৩. বমি বন্ধ করতে: পিত্ত-শ্লেষ্মর জ্বর, অম্লপিত্ত, আমাশা, অজীর্ণ, উদরশূল প্রভৃতিতে বমিও হতে পারে, আবার রোদে ঘোরাফেরা করে ঠাণ্ডা জল খেলে এবং খালি পেটে থেকে পরিশ্রম করলে বমি হবার সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষেত্রে পুদিনার শরবত খেতে হবে। পুদিনার পাতা ৮/১০ গ্রাম বেটে তাতে পুরাতন তেতুলের মাড়ি ১ চা-চামচ, সামান্য একটু চিনি ও লবণ এবং জল পোয়াখানিক একত্রে মিশিয়ে দিনে ২/৩ বার করে কয়েকদিন খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও পুদিনার টাটকা পাতা ১০ গ্রাম পরিমাণ পানিতে বেটে খেলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।
৪. লু লাগলে: এক গ্রাম পুদিনা পাতার রস দিয়ে তৈরি শরবত খেলে আর লু লাগার কোনো আশঙ্কা থাকে না। কারণ পুদিনার সব থেকে বড় গুণ হলো উত্তাপ নাশ করতে পারে।
৫. দাঁতের রোগে: যে কোনো ধরনের দাঁতের রোগে শুকনা পুদিনা গাছের ছালকে গুঁড়া করে দিনে দু’বার দাঁত মাজলে দাঁতের রোগ ভালো হয়ে যাবে।
৬. মূর্ছা রোগে: পুদিনার টাটকা ফলের গন্ধ মূর্ছা যাবার পর রোগীর নাকের কাছে ধরলে খুব তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরে আসে।
৭. প্রস্রাব কমলে: অনেক সময় শরীরে পানির অভাব ঘটলে অথবা কড়া মাত্রার এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খেলে প্রস্রাব যেমন পরিমাণে কমে, তেমনি প্রস্রাবের রং লালচে ধরনের হতে থাকে। পুদিনা পাতা বিশটি বেটে রসসহ তারপর এক গ্লাস পানি পান করলে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়বে এবং রং স্বাভাবিক হবে।
ঠাণ্ডা-গরমের ফলে সাময়িকভাবে অল্প অল্প প্রস্রাব হতে থাকে, কোন কোন সময় সেইসঙ্গে দাহও থাকে, সেক্ষেত্রে পুদিনা পাতা ৮/১০ গ্রাম ভালভাবে বেটে তাতে সামান্য লবণ ও কাগজী লেবুর রস এবং পোয়াখানিক ঠাণ্ডা জল মিশিয়ে শরবতের মতো করে দিনে ২/৩ বার খেতে হবে। এ অবস্থা সাধারণতঃ গ্রীষ্মের দিনে আসে।
৮. শিশুদের অতিসারে: পাতলা দাস্ত, সেইসঙ্গে পেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা, কোন কোন ক্ষেত্রে অল্প আম-সংযুক্ত দাস্ত, সেইসঙ্গে পেট ফাঁপা, হিক্কা, বমি বমি ভাব, প্রস্রাবও সরলে হচ্ছে না, শিশু কিছুই খেতে চাইছে না; এক্ষেত্রে পুদিনা পাতার রস ৮/১০ ফোঁটা অল্প একটু চিনি ও লবণ সহযোগে এক ঘণ্টা অন্তর কয়েকবার খাওয়াতে হবে। বয়স অনুপাতে মাত্রাটা ঠিক করে নিতে হবে।
৯. অরুচিতে: সাধারণতঃ কিছুদিন রোগে ভোগার পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়; যে কোনো জ্বরভোগের পরও অরুচি আসেই, বিশেষতঃ ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতিতে ভোগার পর; এছাড়া পেটে বায়ু জমা ও সেইসঙ্গে কোষ্ঠবদ্ধতা থাকলে অরুচি আসে, একই ধরনের খাদ্য দীর্ঘদিন খেলেও তা এসে থাকে; এসব ক্ষেত্রে পুদিনার রস ২ চা-চামচ, সামান্য লবণ, মরিচ চূর্ণ এক টিপ, কাগজী লেবুর রস ৮/১০ ফোঁটা ও হালকা গরম জল পোয়াখানিক একত্রে মিশিয়ে সকালে একবার ও বৈকালে একবার এভাবে ৫৭ দিন খেলে অরুচিটা চলে যায়। পুদিনা পাতা বেটে জলে গুলে শরবত করা যায়, সেক্ষেত্রে কাঁচা পাতা ৮/১০ গ্রাম নিতে হবে।
CHEMICAL COMPOSITION
Mentha spicata Linn.
Syn. Mentha viridis Linn. Green leaves contain: moisture 83%; protein 4.8%; ether extract fat 0.6%; carbohydrates 8.0%; fibre 2%; mineral matter 1.6% (calcium, phosphorus, iron and copper); vitamin-A; nicotinic acid 0.4%; riboflavin 80 mg and thiamine 50 mg/100 g. Fresh flowering herbs contain:– volatile oil 0.25-0.50% Known as spearmint oil. Spearmint oil contains: carvone 55.8%; terpenes 17% (1-limonene and dipentene); alcohol 6.7% (dihydrocarveol); ester 11.6% (dihydro carveol acetate); cineole 31.4%; a terpenic glyoxal; trace of ac-pinene, phellandrene, dihydrocarveol and its esters.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, চতুর্থ মুদ্রণ ১৪০৭, পৃষ্ঠা, ৮৪-৮৬।
২. আঃ খালেক মোল্লা সম্পাদিত;লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা; মণিহার বুক ডিপো, ঢাকা, আক্টোবর ২০০৯; পৃষ্ঠা ৬৫
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।