আঙ্গুর লতা ব্যবসায়ীভাবে চাষযোগ্য ঔষধি জনপ্রিয় ফল

ফল

আঙ্গুর

বৈজ্ঞানিক নাম: Vitis vinifera L. সমনাম: Alba Globinmed সাধারণ নাম: devil’s trumpet and metel বাংলা নাম: আঙুর বা আঙ্গুর বা আঙুর লতা বা বা পাতি আঙুর বা ইউরোপীয় আঙুর 
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস 
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Vitales পরিবার: Vitaceae গণ: Vitis প্রজাতি: Vitis vinifera L.

পরিচিতি: আঙ্গুর বা আঙুর হচ্ছে vitaceae পরিবারের একটি লতানো উদ্ভিদ। ফল এবং পথ্য হিসেবে আঙুর গোটা দুনিয়াতে জনপ্রিয়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Vitis vinifera Linn. উড়িষ্যাতেও এটি দ্রাক্ষা বা দ্রাক্ষালতা নামেই পরিচিত।

 আঙ্গুরের তেরটি ভেষজ গুণাগুণ

আঙুর লতা থেকে পাকানো আঁকড়ি বেরিয়ে জড়িয়ে যায় অন্য গাছে বা মাচায়, এরপরে বিস্তৃত হয়। এই লতা বেশ শক্ত, এর পাতার উপরটা লোমযুক্ত, দেখতে অনেকটা করলা বা উচ্ছের পাতার মতো, তবে নীচের বা গোড়ার দিকটা হৎপিন্ডাকৃতি, পাঁচ ভাগে বিভক্ত এবং কিনারাগুলি দাঁতযুক্ত; ফুল সবুজ বর্ণের, সৌগন্ধময়, লতার অগ্রভাগেই প্রধানভাবে মুকুল হয়; ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ফুল ও গুচ্ছবদ্ধ ফল হতে দেখা যায়, আর শীতপ্রধান দেশে আরও পরে ফুল ও ফল হয়ে থাকে। উত্তর পশ্চিম হিমালয় প্রদেশের জঙ্গলে হতে দেখা গেলেও ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চাষ হয়ে থাকে, সেটা হয়। উত্তর পশ্চিম ভারতে, বাংলায় এ গাছ যে হয় না বা তার ফল যে হবে না তা নয়, কিন্তু এত টক হয় যে, তা আমড়াকেও হার মানায়।

এর প্রচলিত নাম আঙ্গুর; এটা ফারসি ভাষা। আমরা বাজারে ২ থেকে ৩ প্রকারের আঙ্গুর দেখতে পাই একটি আকারে ছোট, যেগুলি শুকিয়ে গেলে কিসমিস হয়; আর এক প্রকার আঙ্গুর দেখা যায়, সেটা আকারে বড় এবং তার মধ্যে ২ থেকে ৩টি বীজ থাকে, এই আঙ্গুরগুলি শুকিয়ে মুনাক্কা হয়। যেগুলি আমরা পাই সেগুলি খুব পাকা নয়, খুব পুষ্ট হলে সবজি ফলই হরিদ্রাভ সবুজ হয়, আবার এই দুই সাইজের আঙ্গুর বেগুনে রংয়েরও দেখা যায়। পাশ্চাত্য উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে এই ফলের আকারের বা রংয়ের তফাত দেখা গেলেও প্রজাতিতে পৃথক নয়। [১]

আরো পড়ুন:  পানিফল বা শিঙ্গাড়া ভেষজ জলজ লতার কিছু ঔষধি ব্যবহার

স্বভাবের আঙ্গুর পত্রঝরা প্রকৃতির গাছ। লতা বেশ শক্ত, লম্বা আকৃতির। পাতা দেখতে শসা বা ঝিঙ্গের মতো আকৃতির। এই ফল মিষ্টি বা টক হয় মাটি, জল ও বায়ুর প্রভাবের তারতম্য। হালকা করাতের মত খাঁজযুক্ত। পাতার মধ্যশিরা ৪ থেকে ৫ জোড়া। ফুল হালকা সবুজ, থোকা ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুল ছড়ায় ফোটে। লতার গিট থেকে ফুল ও ফল ধরে। ফল মার্বেলের মতো গোলাকার।  

বিস্তৃতি: আঙ্গুরের ইংরেজি নাম Grape. ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব রাশিয়ার কাস্পিয়ান সাগরের কাছে আর্মেনিয়া আঙ্গুরের আদি নিবাস বলে জানা গেছে। ইউরোপের ফ্রান্স, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ভালো আঙ্গুরের চাষ হয়। আনুমানিক ১৩০০ শতাব্দীর কোন এক সময় ইরান থেকে আঙ্গুর ভারতবর্ষে এসেছে। তবে আমাদের দেশে গাছ এসেছে সাম্প্রতি।

চাষাবাদ: বাজার থেকে মাঝে মধ্যেই যে বিদেশি আঙ্গুর কেনা হয় তা সুস্বাদু ও মিষ্টি বটে, কিন্তু সেই সাথে বিষও দেয়া থাকে। তাই, বাড়িতে যদি কিছুটা জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকে সেখানে দুটি আঙ্গুরের গাছ লাগিয়ে তাতে অঙ্গুর ফলানো যেতে পারে। হয়ত সেগুলো বিদেশি আঙ্গুরের মতো অত মিষ্টি আর সুস্বাদু হবে না। তবে বাজারের আঙ্গুরের মতো বাসি আর রাসায়নিক কিছু স্প্রে করা নেই।  তবে বাণিজ্যিকভাবে বেশি গাছ লাগিয়ে আঙ্গুরের চাষ এ দেশে লাভজনক হবে না।

চাষাবাদ যদি বাড়িতে যদি একটি হলেও আঙ্গুর গাছ লাগাতে হয়, তবে ফেব্রুয়ারি মাসটিকে ধরে রাখতে হবে চাষের রকম প্রস্তুতির নেবার জন্য। এ দেশে বর্তমানে আঙ্গুরের তিনটি জাত বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জাতগুলো হল জ্যাক কাউ, ব্লাক পার্ল ও ব্ল্যাক রুবি। জ্যাক কাউ জাতের আঙ্গুরের রঙ প্রথম দিকে গাঢ় সবুজ থাকে, তবে পাকার আগে বাদামী রং ধারণ করে, বীজ আছে, কিছুটা শক্ত খোসা ও  পুরু, তবে বেশ রসালো এবং মিষ্টি।

আরো পড়ুন:  আঙ্গুর লতা, পাতা ও ফলের তেরটি ভেষজ গুণাগুণ

ব্ল্যাক পার্ল জাতের গাছ দ্রুত বাড়ে এবং লতার রং হালকা খয়েরী। এ জাতের ফলও প্রথমে সবুজ থাকে, পরে ধীরে ধীরে মেরুন ও পাকার সময় গাঢ় কালচে লাল রঙ ধারণ করে, ফলে বীজ আছে। তবে ব্ল্যাক রুবি গাছ বাড়ে খুব ধীরে এবং কচি অবস্থায় পাতা থাকে হালকা লাল রঙের। এ জাতের আরও প্রথমে সবুজ থাকে কিন্তু ধীরে ধীরে গাঢ় কালো হয়ে যায়। প্রথম দু’জাতের চেয়ে এ জাতের ফলন কম। তবে থোকা দেখতে খুব আকর্ষণীয়। এ তিনটি জাত ছাড়াও কার্ডিনাল, হোয়াইট মালাগা, বাঙ্গালোর নীল, পারফেক্ট ইত্যাদি জাত এ দেশে চাষ করা যেতে পারে।

আঙ্গুর চাষের জন্য উর্বর দোআঁশ মাটির জমি ভাল। আঙ্গুর লতা চাষের জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টি দরকার তবে স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে আঙ্গুরের চারা বাড়তে পারে না। শক্ত এঁটেল মাটিও এর জন্য ভাল নয়।

ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস রোপণের জন্য উপযুক্ত সময়। আঙ্গুরের ডাল প্রতি বছর ছাঁটাই করতে হয়। না হলে ফল কমে যায় বা ফল ধরে না। অধিকাংশ জাতের আঙ্গুর গাছেই বছরে দু’বার ফল ধরে। প্রথমবার মার্চ থেকে এপ্রিলে। ফুল আসে এবং পাকে জুন থেকে জুলাইতে। দ্বিতীয়বার ফুল আসে জুলাই থেকে আগ স্টে ফল পাক অক্টোবর থেকে নভেম্বরে। তবে মার্চ থেকে এপ্রিলের ফল ভাল হয়।[২]

ব্যবহৃত অংশ: ঔষধার্থে ব্যবহার হয় শুকনো ফল বা কিসমিস বা মুনাক্কা, কাঁচা ফল বা আঙ্গুর ও গাছের পাতা।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৭৮।

২.  মৃত্যুঞ্জয় রায়; বাংলার বিচিত্র ফল, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৭, পৃষ্ঠা, ২০৩-২০৫।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Ivanace1

Leave a Comment

error: Content is protected !!