পাতি চড়ুই হচ্ছে বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Passer গণের একটি প্রজাতি। এই গণে বাংলাদেশে রয়েছে ২টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতেও রয়েছে ২৩টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতি দুটি হচ্ছে ১. পাতি চড়ুই ও ২. ইউরেশীয় গাছচড়ুই। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে পাতি চড়ুই।
দ্বিপদ নাম/Scientific Name: Passer domesticus;
সমনাম: নেই,
বাংলা নাম: পাতি চড়ুই,
ইংরেজি নাম/Common Name: House Sparrow.
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্যKingdom: Animalia
বিভাগ/Phylum: Chordata
শ্রেণী/Class: Aves
পরিবার/Family: Passeridae
গণ/Genus: Passer, Brison, 1760;
প্রজাতি/Species: Passer domesticus (Linnaeus, 1758)
বর্ণনাঃ পাতি চড়ুই মোটা ঠোঁটধারী বাদামি গায়ক পাখি। সাধারণত দৈর্ঘ্যে মাত্র ১৫ সেমি (৬.৩ ইঞ্চি) ও ওজনে ২৪ গ্রাম, ডানা ৭.৫ সেমি, ঠোঁট ১.৪ সেমি, পা ২ সেমি ও লেজ ৫.৪ সেমি হয়। পাতি চড়ুইদের দেহে প্রধানত ধূসর ও বাদামি রঙের বিচিত্র সব প্রকরণ লক্ষ্য করা যায়। মেয়ে ও ছেলে পাখিতে উল্লেখযোগ্য যৌন দ্বিরূপতা বা চেহারায় পার্থক্য আছে। মেয়ে পাখির দেহতল ও উপরিভাগ মূলত মেটেরঙা এবং ছেলে পাখির মাথার কাছে গাঢ় দাগ থাকে, দেহের উপরিতল লালচে ও দেহতল ধূসর। ছেলে চড়ুইয়ের ঠোঁটের গোড়া থেকে শুরু করে মাথার চাঁদি পর্যন্ত ধূসর। অধিকাংশ উপপ্রজাতিতে চাঁদির দুই পাশে বাদামি ছোপ দেখা যায়। ঠোঁটের চারপাশ, থুতনি, চোখের চারপাশের কিয়দংশ, চোখের কোণ এবং ঠোঁট ও চোখের মাঝখানের অংশ কালো। ভুরু ও চাঁদির মাঝখানে একটি সাদা সরু দাগ থাকে এবং ঠিক চোখের পেছনে একটি ছোট সাদা ছোপ দেখা যায়। দেহতল হালকা ধূসর বা সাদাটে। গাল, কান-ঢাকনি ও ঘাড়ের গোড়াও একই রঙের। পিঠের উপরের দিকটা বাদামি, তাতে মোটা মোটা কালো দাগ থাকে। পিঠের নিচ, কোমর ও লেজের গোড়া ধূসরাভ-বাদামি।
স্বভাব: পাতি চড়ুই জনবসতির মধ্যে থাকতে ভালোবাসে তাই এদের ইংরাজি নাম House Sparrow অর্থাৎ “গৃহস্থালির চড়াই”। খড়কুটো, শুকনো ঘাস পাতা দিয়ে কড়িকাঠে, কার্নিশে বাসা বাঁধে।
সমস্ত দিন এরা লাফিয়ে বেড়িয়ে মাটি থেকে খাবার খুঁটে খায়। প্রধানত শস্যদানা, ঘাসের বিচির পাশাপাশি অসংখ্য পোকামাকড় খেয়ে থাকে। বিশেষ করে পোকার শুককীট, মুককীট বা লেদাপোকা যারা শস্য উৎপাদনের অন্তরায়। এরা যেসব প্রজাতির পোকামাকড় খায় তাদের মধ্যে বিটল পোকা, ছারপোকা, পিঁপড়া, মাছি উল্লেখযোগ্য। চড়ুই এসব পোকার ক্ষতিকর আক্রমণ থেকে ফসল, সবজির ক্ষেত, বনাঞ্চল বাঁচিয়ে পরিবেশ ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
বিস্তৃতি: পাতি চড়ুই বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। সব বিভাগের লোকালয়ে পাওয়া যায়। ইউরোপ ও এশিয়া থেকে ছড়িয়ে পড়ে এখন এন্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সব মহাদেশে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। পৃথিবীতে বন্য পাখিদের মধ্যে পাতি চড়ুইই সবচেয়ে বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
অবস্থা: ২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে বাংলাদেশে ও বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী আইনে একে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়নি।
আলোকচিত্রের ইতিহাস: মূল ছবিটি ছেলে পাতি চড়ুইয়ের, আলোকচিত্রটি ভারতের রত্নাগিরি জেলার গণপতিপুলে থেকে Toothy Doc-এর তোলা।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।