দেশি পেটারি গুল্ম-এর ওষুধি গুণ আছে। এটি গুল্মজাতীয়, বর্ষজীবী বা বহুবর্ষজীবী ঝোপঝাড়সম্পন্ন গাছ। এটি বাতপিত্তনাশক, সংগ্রাহী, বলবর্ধক এবং শুক্রজনন। ভাবপ্রকাশে গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে এটা শীতবীর্য, মধুর, বলকর, কান্তিবর্ধক, স্নিগ্ধ, মল-সংগ্রাহক, বায়ু-পিত্ত-রক্তদুষ্টি এবং ক্ষতনাশক।
দেশি পেটারি গুল্ম-এর ভেষজ গুণ
১. মূত্রকৃচ্ছ্রতায়: নানা কারণে ছেলেদের বা মেয়েদের প্রস্রাব কম হয়ে থাকে, সেইসঙ্গে তলপেটে টান টান ভাব, দাহ, যন্ত্রণার সঙ্গে বারে বারে অল্প অল্প প্রস্রাব হয়। এটি যেকোন বয়সেই হতে পারে। পৌরুষ গ্রন্থির বৃদ্ধি, মূত্রাশ্মরী, অত্যধিক ঠাণ্ডা-গরম প্রভৃতি কারণে এটি আসতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে জীবাণুঘটিত কারণও থেকে থাকে। এসব ক্ষেত্রে দেশি পেটারি গাছের মূল শুকনা ৫ গ্রাম বা কাঁচা হলে ১০ গ্রাম নিয়ে একটু থেঁতো করে ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে, ঘেঁকে, ঠাণ্ডা হলে সেটি সারাদিনে ২/৩ বারে খেতে হবে। কয়েকদিন পর পর খেলে প্রস্রাব সরল হয় এবং যন্ত্রণা চলে যায়।
২. প্রদরে: শ্বেত বা রক্ত যে ধরনেরই স্রাব অত্যধিক হলেই সেটিকে রোগ হিসেবে ধরা হয়। দীর্ঘদিন ভুগতে থাকলে অন্য রোগের আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। প্রথম থেকেই চিকিৎসা করালে সে ভয় সাধারণতঃ থাকে না। এক্ষেত্রে দেশি পেটারি গুল্ম-এর মূল উপরিউক্ত পদ্ধতিতে ক্বাথ তৈরী করে খেতে হবে। তাছাড়া পেটারি মূল বেটে মিছরীর সঙ্গে মিশিয়ে শরবত করেও খাওয়া যেতে পারে। সমগ্র গাছের ক্বাথ তৈরী করেও খাওয়া চলে। সেইসঙ্গে পাতা সিদ্ধ জল দিয়ে যোনি ধুতে হবে। এছাড়া যদি কাঁচা পাতা ১০/১৫ গ্রাম, শুকনা হলে ৭/৮ গ্রাম-৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে, ঠাণ্ডা হলে সেই জল ব্যবহার করতে হবে। দিনে ২ বার করে ধুলে ভাল হয়। মাসখানিক ব্যবহার করলে অসুবিধেটা চলে যায়। তবে যে ক্ষেত্রে কোন উপকার পাওয়া যাবে না, সেক্ষেত্রে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামশানুসারে চিকিৎসিত হতে হবে।
৩. হৃদ্দৌর্বল্যে: দেশি পেটারি বা অতিবলার শিকড় শুকনা হলে ৫ গ্রাম আর কাঁচা হলে ১০ গ্রাম আন্দাজ নিয়ে ভালভাবে বেটে সেই সঙ্গে পোয়াখানিক দুধ যা গরম করার পর ঠাণ্ডা করতে হবে ও ২/৩ চা-চামচ চিনি মিশিয়ে শরবত করে দিনে একবার করে মাসখানিক খেলে দুর্বলতা চলে যায় এবং দেহে লাবণ্য আসে। সর্বদা একটা উৎফুল্লভার মনের মধ্যে বিরাজ করতে থাকে।
৪. ঘুসঘুসে জ্বরে: অল্প অল্প জ্বর, কখনো থাকে কখনো থাকে না, নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে-ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, কালাজ্বর, রাজযক্ষ্মা অথবা কোন জীবাণুসংক্রমণ জনিত জ্বর এটি নয়, অথচ কোন ওষুধে জ্বর আর সারে না। এদিকে দিব্যি খাচ্ছে-দাচ্ছে, ঘুরছে-ফিরছে-ঘুমুচ্ছে। এমন হলে পেটারি গাছ বা মূল শুকননা ৫ গ্রাম, কাঁচা হলে ১০ গ্রাম নিয়ে একটু থেঁতো করে ৩/৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে কাপ দেড়েক থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, সেটিকে দিনে ২/৩ বারে খেতে হবে। অথবা বীজ চূর্ণ ২ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২/৩ বার দুধের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া চলে। এভাবে মাসখানিক ব্যবহার করলে জ্বরটা চলে যাবে, প্রস্রাব পরিষ্কার হবে, শরীরে বলও আসবে। এ অবস্থায় সহজপাচ্য ভোজন গ্রহণীয়। গুরুপাক ও উষ্ণ দ্রব্য না খাওয়াই ভাল।
৫. সম্ভোগ শক্তির স্বল্পতায়: এই সমস্যার সমাধানে পেটারি বীজ ৫ গ্রাম নিয়ে জল দিয়ে ভালভাবে বেটে পোয়াখানিক দুধ ও ৩/৪ চামচ চিনি সহযোগে শরবত তৈরী করে প্রত্যহ বিকালে অথবা সন্ধ্যায় একবার করে খেতে হবে। এ সময় উষ্ণ ও গুরুপাক দ্রব্য খাওয়া চলবে না। মাস দুই খেলে বুঝতে পারবেন দ্রব্য শক্তির গুণাগুণ।
৬. সর্দির ধাতে: অনেকেই সারা বছর ধরেই কম-বেশি সর্দিতে ভোগেন। সর্দি যখন জলের মতো বেরুতে থাকে, তখন কয়েকদিন ঔষধ ব্যবহার করলে ওটা একটু গাঢ় হয় এবং কখনো কখনো প্রচুর সর্দি বেরোয়, কখনো একটু কম থাকে, কিন্তু একেবারে সেরে যায় না। এক্ষেত্রে অতিবলার বীজচূর্ণ বা মূলচূর্ণ (চূর্ণটা খুব মিহি হলে ভাল হয়) ১ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২/৩ বার চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে মাসখানিকের মধ্যে ওটা চলে যাবে। তারপর মাঝে মাঝে ২/১ দিন খেয়ে রাখলে আর আসতে পারে না।
৭. অশ্মরীতে: মূত্রাশয়ে পাথুরী হলেও মূত্রকৃচ্ছতা আসে, কিছুদিন বা ২-৩ মাস নিয়মিত ব্যবহার করা যায়, তাহলে পাথুরী চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যাবে। দেশি পেটারি মূল চূর্ণ ২ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে, তার সঙ্গে পাথরকুচির পাতার রস ৩/৪ চা-চামচ ও মধু আধ চা-চামচ মিশিয়ে সকালে একবার এবং এভাবে বৈকালে একবার খেতে হবে।
৮. জীর্ণ প্রবাহিকায়: দীর্ঘদিন ধরে আমাশায় ভুগছেন এমন রোগী প্রায়ই দেখা যায়। একটু বেশি হলে ঔষধ খেলে কিছুটা কমে বটে, সারে না। এ অবস্থায় পেটারি বীজচুর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় সকালে একবার ও বৈকালে একবার করে কিছুদিন খেলে দীর্ঘ দিনের ঝামেলার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। তারপর মাঝে-মধ্যে খেতেও হবে।
৯. কাসিতে: বীজ চূর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২/৩ বার মধু সহ মেড়ে খেলে ভাল কাজ হয়। এটি বয়স্কদের মাত্রা ও অল্পবয়স্কদের মাত্রা বয়স অনুসারে কম-বেশি করা দরকার।
১০. দাঁত ও মাড়ির যন্ত্রণায়: পেটারির পাতা সিদ্ধ জল দিয়ে মুখ ধুলে যন্ত্রণার লাঘব হয়।
১১. ক্ষত ও ফোড়ায়: পেটারির পাতা সিদ্ধ জল দিয়ে ধোওয়ার পর ঐ পাতা মসৃণ করে বেটে প্রলেপ দিলে কাজ হয়। ফুলেরও প্রলেপ দেওয়া যায়।
১২. শ্বেতীতে: পেটারি মূল বেটে চালমোগরা তেলের সঙ্গে মিশিয়ে শ্বেতীতে বা ধবলের সাদা দাগের উপর লাগালে কোন কোন ক্ষেত্রে উপকার পেতে দেখা গেছে।
CHEMICAL COMPOSITION
Abutilon indicum Linn. Seeds contain:- semi-drying oil 9.21% ( linoleic, oleic, palmitic and stearic acids); raffinose 1.6% and mucilages. Bark contains:- astringent substance.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, চতুর্থ মুদ্রণ ১৪০৭, পৃষ্ঠা, ২৩-২৫।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।