লুক্রেশিয়াস ছিলেন প্রাচীন রোমের কবি এবং বস্তুবাদী দার্শনিক

লুক্রেশিয়াস (ইংরেজি: Lucretius; ১৫ অক্টোবর ৯৯ – ৫৫ খ্রি.পূ) ছিলেন প্রাচীন রোমের কবি এবং বস্তুবাদী দার্শনিক। ‘ডা রিরাম ন্যাচার’ বা ‘প্রকৃতি জগত’ তাঁর সুবিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। লুক্রেশিয়াস গ্রিক দার্শনিক এপিক্যুরাসের উত্তরসূরি। এপিক্যুরাসের দর্শনকেই তিনি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। ব্যক্তির জীবনে সুখের সমস্যা হলো মূল সমস্যা। সামাজিক সংঘাত এবং ধ্বংসের মধ্যে ব্যক্তি নিয়ত আবর্তিত। ধৈর্য্যের মধ্যে বিধিনিষেধের বন্ধনে সে আবদ্ধ। বিন্দুমাত্র বিচ্যূতি হলে দেবতাদের অভিশাপ তার উপর বর্ষিত হচ্ছে। মৃত্যুর আতঙ্ক আর মৃত্যুর পরে নরকের আজাবের আশঙ্কা জীবনের প্রতি মুহুর্তকে আবিল করে দেয়। এই ব্যক্তির সুখের পথ কি?

লুক্রেশিয়াস ব্যক্তির জন্য সুখের পথের সন্ধান দানকে নিজের জীবনের ব্রত হিসাবে মনে করেছেন। তাঁর মতে জগৎ, মানুষ এবং সমাজ সম্পর্কে এপিক্যুরাসের অভিমত হচ্ছে সঠিক অভিমত। এপিক্যুরাসের দর্শন অনুসরণ করলে মাত্র ব্যক্তি জীবনের এই দুঃখের জাল থেকে মুক্তির সন্ধান লাভ করতে পারবে। লুক্রেশিয়াসের মতে মৃত্যুর পরে দুঃখ বা দন্ডের আশঙ্কা ব্যক্তির পক্ষে অমূলক। কারণ আত্মা দেহের মতই মরণশীল। আত্মাও অণুর সম্মেলনে গঠিত। দেহের মৃত্যুর পরে আত্মার অণুগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্মারও মৃত্যু ঘটায়। কাজেই মৃত্যুর পরে নরকের দুশ্চিন্তায় জীবনকে দুর্বিষহ করার কোনো কারণ নেই।

লুক্রেশিয়াস মানুষকে লক্ষ্য করে সুন্দর করে বলেছেনঃ জীবন এবং মৃত্যু পরস্পরবিরোধী। যেখানে জীবন আছে সেখানে মৃত্যু নেই। মানুষ যখন জীবিত তখন সে মৃত নয়। আবার যখন সে মৃত তখনও তার জীবন নেই। কাজেই মৃত্যুর পরে জীবনের আশঙ্কার কোনো ভিত্তি থাকতে পারে না। দেবতাদের বাস মানুষের মধ্যে নয়। তারা শূণ্যরাজ্যের প্রাণী। তাদের পক্ষে পৃথিবীতে এসে মানুষকে দন্ডদান সম্ভব নয়।

জগৎ সম্পর্কে লুক্রেশিয়াসের দর্শন তাই পুরোপুরে বস্তুবাদী। তৎকালীন রোমের সমাজ জীবনকে কুসংস্কার মুক্ত করে বুদ্ধি ও যুক্তির প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় লুক্রেশিয়াসের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মানুষের সুখের অন্বেষণে নিবেদিত কবি লুক্রেশিয়াস আত্মহত্যা করেছিলেন।

আরো পড়ুন:  ইলিয়া দর্শন হলো প্রাচীন গ্রিসে ভাববাদী ধারার সূচনা করে

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৭০।

Leave a Comment

error: Content is protected !!