ফুল গাছ পরিচর্যা বা যত্ন করার বিবিধ নিয়মাবলি

ফুল গাছ পরিচর্যা করতে হয় চারা রোপণ থেকে ফুল তোলা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের মধ্যে। স্থায়ী ফুল গাছে ভালও ফুল পেতে যেখানে ৪-৫ বছর সময় লাগে, সেখানে এই সহ গ্রীষ্মকালীন, বর্ষাকালীন, তথা শীতকালীন একবর্ষজীবি মরসুমী অসুবিধা নেই এবং তা করাই যুক্তিযুক্ত। যাইহোক, স্থায়ী ফুল চাষে দুবছরের বেশি চারা কোনোমতেই ক্রয় করা উচিত নয়। নার্সারি থেকে ফুলের বীজ, চারা বা কন্দ কেনা উচিত। কেনার সময় শিকড়ের চারদিক মাটি দিয়ে বলের মতো উপর খড় দিয়ে মুড়ে সুতা দিয়ে বেধে নিতে হবে। ছোট টবেও সময় চারা পাওয়া যায়। ভাল করে দেখে শুনে ফুল চারা ক্রয় করতে হবে।

চারা কেনার পরই মুল বাগানে তা লাগানো উচিত নয়। অল্প জল ছিটিয়ে কয়েকঘণ্টা ছায়ায় রেখে শিকড়ের বলের চার পাশের বাঁধন খুলে একটু ভেজা অবস্থা করে টব বা মুল বাগানে লাগান উচিত।

টবে লাগান হলে, টবগুলির মাটি যথাযথ তৈরী করে নিতে হবে। দু’ভাগ মাটি ও দু’ভাগ গোবর পচা, পাতা পচা সার প্রতি টবে ১২০ গ্রাম হাড়গুড়ো ভাল করে মেশান ভাল। এছাড়া ১০০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেটও দেওয়া যেতে পারে। গাছ ও জাত বুঝে সার বা মাটি তৈরীর মিশ্রণের অনুপাত ঠিক করতে হবে। বাগানের মাটিও অনুরূপে তৈরী করে নিতে হবে। চারাগাছ বেশি গভীরে পোঁতা উচিত নয়। সর্বদা প্রধান মূলের উপর ২ ইঞ্চির বেশি মাটির নীচে পুঁতা উচিত নয়। গর্তখুড়ে লাগালে, গর্তগুলি আন্দাজমত গাছ অনুযায়ী তৈরী করতে হবে। বড়গাছের জন্য ৪ ফুট গভীর ও ৪ ফুট ব্যাসযুক্ত গর্তটিকে কয়েকদিন কড়া রোদ খাওয়াতে হবে। টবের তলায় যাতে ফুটো থাকে তা ভাল করে দেখে নিতে হবে। তা নাহলে জল বের হতে পারবে না। এতে করে গাছের শিকড়ের গ্যেড়া পচে যাবে। টবের ফুটোর উপরে মাটি খুরি উল্টে তার উপর ২ ইঞ্চি ইট বা পাথরের কুচির স্তর, ধানের তুষের ১ স্তর এবং সার মাটি ভরে দিতে হবে।

আরো পড়ুন:  শীতকালীন মৌসুমী ফুলের মধ্যে ডালিয়া চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা

ফুল গাছ পরিচর্যা করার প্রথম ধাপ নিয়মিত ও প্রয়োজন মতো জল দেয়া। বেশি বা কম জল দেওয়া—দুই ক্ষতিকর। টবে অল্প ভিজে রেখে জল দিতে হবে। গরমকালে জল একটু বেশি ও ঘনঘন লাগবে। ঝারি, বালতি বা মগে করে জল দেওয়া ভাল।

জল নিষ্কাশনের যথোপযুক্ত বাবস্থা থাকা চাই। সন্ধ্যা সময় জল দেওয়া সব থেকে ভাল। প্রচণ্ড কড়ারোদে কখনোই জল দেওয়া উচিত নয়। তবে খুব ভোরে জল দেওয়া যায়।

মাটিতে সার মিশিয়ে প্রথমে যে জমি বা টবের মাটির তৈরী করে চারা লাগানো হয়, তার খাদ্যভাণ্ডার ক্রমশঃ নিঃশেষ হয়ে যায়। তাই গাছের গোড়ার গোলাকার রিং করে মাঝে মাঝে ২-৩ চামচ গাছ অনুযায়ী হাড়গুড়া, মিউরেট অফ পটাশ, ইউরিয়া বা এ্যামোনিয়াম সালফেট বা সুফলা সার ওয়া ভাল। ২-৩ বছর অন্তর মাটি পাল্টে দেওয়া উচিত।

ফুলগাছের ডাল ছাঁটা বা কাটিং অবশ্যই একটি পরিচর্যার অঙ্গ। অবশ্য গাছ, জাত, ঋতু প্রভৃতি বুঝে এই ছাঁটার কাজ সাবধানে করতে হয়। চারা বসার পর স্থায়ী গাছের ক্ষেত্রে প্রথম বছরের পর ও মরসুমী ফুলের ক্ষেত্রে দেড় বা দুই মাস বাদে অতিরিক্ত পার্শ্বশাখা, নুয়ে পড়া ডাল, শুষ্ক মরা ডাল প্রভৃতি ধারাল কাঁচি বা ছুরি দিয়ে সাবধানে কেটে দিতে হবে যাতে প্রধান কাণ্ডে কোনরূপে আঘাত না লাগে। তাহলে ফুলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

তথ্যসূত্রঃ

১. বালাইলাল জানা: ক্যাকটাস ও ফুলচাষ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তকপর্ষৎ, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ মার্চ ১৯৮৮, পৃষ্ঠা, ৮৩-৮৫।

[বি. দ্র: নিবন্ধে ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া। আলোকচিত্রীর নাম: Sebastian Grünwald]

1 thought on “ফুল গাছ পরিচর্যা বা যত্ন করার বিবিধ নিয়মাবলি”

Leave a Comment

error: Content is protected !!