ভূমিকা: ভল্লা পাতা জাগরা (বৈজ্ঞানিক নাম: Macaranga denticulata) হচ্ছে এক প্রকারের ভেষজ বৃক্ষ। এই প্রজাতিটি এশিয়ার দেশে জন্মায়।
ভল্লা পাতা জাগরা-এর বর্ণনা :
এটি ছোট থেকে মাঝারি আকারের চিরহরিৎ বৃক্ষ। এদের শীর্ষদেশ বিস্তৃত, কান্ড বাঁশির ছেদার ন্যায় খাঁজ কাটা, তরুণ বিটপ, পত্র ও মঞ্জরী ক্ষুদ্রঘন কোমল মরচে রোমাবৃত, বাকল ভস্মতুল্য ধূসর, মসৃণ। পত্র ভল্লাকার, আশুপাতী, উপপত্র ৬ মিমি লম্বা, বৃন্ত ৬-১৮ সেমি, পত্র ফলক প্রশস্ত ডিম্বাকৃতি ব-দ্বীপাকার, ১০-৩০ × ৯-২২ সেমি, দীর্ঘাগ্র, মূলীয় অংশ ছত্রবদ্ধ, কর্তিতাগ্র বা তাম্বুলাকার, ৯-১১ করতলাকার শিরাযুক্ত, নিচের পৃষ্ঠ ঘন প্রন্থিল দাগ বিশিষ্ট।
পুষ্প বিন্যাস কাক্ষিক প্যানিকেল, পুং মঞ্জরী ১০-১৫ সেমি লম্বা, সরু। পুংপুষ্প: ক্ষুদ্র, বৃত্যংশ ২-৩ টি, প্রান্তস্পর্শী, পুংকেশর ৯-১৪টি, স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরী পুংমঞ্জরী অপেক্ষা খাটো। স্ত্রীপুষ্প: খাটো মঞ্জরীদন্ডে বিন্যস্ত, একল বা ২- ৩টি, পুংপুষ্পের মঞ্জরীপত্রের ন্যায় মঞ্জুরীপত্র যুক্ত, বৃত্যংশ ১ মিমি লম্বা, গর্ভাশয় ২ কোষী, ঘন হলুদাভ গ্রন্থিযুক্ত, রোমশ বিহীন, গর্ভদন্ড ২-৩টি। ফল ক্যাপসিউল, কক্কি ২টি বা কখনও ১টি, ৫ মিমি ব্যাস বিশিষ্ট, হলুদাভ, গ্রন্থিল, রোমশ বিহীন। বীজ গোলাকার।
ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n = ২২ (Mehra and Hans, 1969).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
চিরহরিৎ ও গৌণ অরণ্য, পাহাড়, গুল্মভূমি এবং অরণ্যের প্রান্ত। ফুল ও ফল ধারণকাল ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি :
ভুটান, কম্বোডিয়া, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মায়ানমার, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, ঢাকা, কক্সবাজার, রংপুর ও সিলেট জেলায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে জন্মে।
ভল্লা পাতা জাগরা-এর ব্যবহার:
মূল, বাকল ও পত্র পাকস্থলীর পীড়া, আমাশয়, ক্ষত, আলসার এবং সন্তান প্রসব ঘটিত সমস্যা নিরসনে ব্যবহার করা হয়। জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহারের দিকে থেকে বলা যায় মালয় উপদ্বীপে উদ্ভিদের ক্বাথ ক্ষত নিরসনে এবং সন্তান প্রসবের পর প্রসূতিকে খাওয়ানো হয়। চীনে কান্ডের ক্বাথ ফোঁড়া ও পক্ষাঘাত নিরসনে ব্যবহার করা হয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭মখণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ভল্লা পাতা জাগরা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ভল্লা পাতা জাগরা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৭ম, পৃষ্ঠা ৪৬৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Wibowo Djatmiko
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে”, “ফুলকির জন্য অপেক্ষা”। যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ” এবং যুগ্মভাবে রচিত বই “নেত্রকোণা জেলা চরিতকোষ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।