ভূমিকা: ভুঁই (বৈজ্ঞানিক নাম: Lindernia ciliata) হচ্ছে বাংলাদেশের ভেষজ বিরুৎ। এটি উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে জন্মায়। বনাঞ্চলের পরিবেশ এদের জন্য উপযুক্ত।
ভুঁই -এর বর্ণনা :
খুব ছোট, বর্ষজীবী বীরুৎ। কান্ড খাড়া, ১২ সেমি পর্যন্ত লম্বা, প্রায়শই গোড়া হতে স্পষ্টভাবে শাখান্বিত অথবা ভূতলশায়ী এবং গোড়া হতে মূলের সৃষ্টি, কোণাকৃতি রোমযুক্ত। পত্র অবৃন্তক, ০.৮-২.৪ ০ ০.৪-০.৮ সেমি, আয়তাকার-বল্লমাকার অথবা আয়তাকার-ডিম্বাকার, গোড়া গোলাকার, শীর্ষ অর্ধসূক্ষ্মাগ্র, পার্শ্বীয় শিরা অস্পষ্ট, শূকযুক্ত- করাতদন্তযুক্ত, উপরের পৃষ্ঠ রেখাযুক্ত, উভয় পৃষ্ঠ মসৃণ।
পুষ্প প্রান্তীয় অনিয়তাকার পুষ্পবিন্যাসে সজ্জিত, ২.৫- ৩.৫ সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র রৈখিক-বল্লমাকার, ৩.৫-৫.০ × ১ মিমি, শীর্ষ দৃঢ় রোমাকৃতি, কিনারা স্বচ্ছ এবং রক্ত- বেগুনি, পুষ্পবৃত্তিকা সরু, ২-৫ মিমি লম্বা, মসৃণ। বৃতি গভীরভাবে ৫-খন্ডকযুক্ত, নালি ২ মিমি লম্বা, খন্ডক রৈখিক- বল্লমাকার, ৩-৫ ০ ০.৫-০.৮ মিমি, শীর্ষ দৃঢ় রোমাকৃতি, কিনারা স্বচ্ছ এবং সিলিয়াযুক্ত, মধ্য শিরা বরাবর অক্ষবিমুখে হালকা এবং অতি সূক্ষ্মভাবে খসখসে। দলমন্ডল ফ্যাকাশে লালচে-বেগুনি হতে সাদা, নালি রৈখিক, ৬-৮ মিমি লম্বা, বাইরের দিক গ্রন্থিল-অণুরোমশ, উপরের ওষ্ঠ খাড়া, আয়তাকার, ৩-৪ মিমি লম্বা, নীচের ঠোঁট আড়াআড়িভাবে ৪-৫ মিমি, খন্ডক অর্ধমন্ডলাকার, মধ্যখণ্ডটি পার্শ্বীয় খন্ডক থেকে সামান্য ছোট, গোড়ায় সবই বেগুনি-রক্তবেগুনি।
পুংকেশর ২টি, উর্বর, পুংদন্ড ১.৫- ২.০ মিমি লম্বা, মসৃণ, বন্ধ্যা পুংকেশর বাইরের দিকে প্রসারিত, রৈখিক, শীর্ষ বহির্দিকে বাকাঁনো, গোড়ায় রক্তবেগুনি-ফিকে লালচে বেগুনি। গর্ভদন্ড মসৃণ, গর্ভমুন্ডের ল্যামেলা আয়তাকার-মন্ডলাকার। ক্যাপসিউল রৈখিক- বেলনাকার, ৮-১৭ × ১ মিমি, লম্বায় বৃতির দ্বিগুণ, মসৃণ, অনুজ্জ্বল রক্তবেগুনি। বীজ আয়তাকার হতে নাশপাতি আকার, প্রায় ০.৮ মিমি লম্বা, অমসৃণ।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ১৮ (Bhattacharyya, 1967)।
আবাসস্থল ও বিস্তার:
বর্ষাকাল পরবর্তী ছোট নদীর কিনারা, ধানক্ষেত, স্যাঁতসেঁতে মাটি, আর্দ্র শিলা, ঢালু জায়গা এবং ভেজা তৃণভূমি। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল মে থেকে আগষ্ট। বীজ থেকে বংশ বিস্তার করে।
বিস্তৃতি:
অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, জাপান, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনাম। ফ্রিনজড ফলস্ পিমপারনেল অস্ট্রেলিয়াতে স্থানীয়। বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি প্রায় সর্বত্র বিরাজমান।
ব্যবহার:
ইহা ধানক্ষেতের একটি আগাছা। প্রসবের পর পাতার রস চূর্ণ করে দেওয়া হয়। তাইওয়ানে, এই উদ্ভিদটিকে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব বা ভারী মাসিক জন্য কার্যকর প্রতিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) ভুঁই প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে এটি আশংকামুক্ত (lc) হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ভুঁই সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে শীঘ্র সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ নিষ্প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ২৫৭-৫৮। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি tropical.theferns.info থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে”, “ফুলকির জন্য অপেক্ষা”। যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ” এবং যুগ্মভাবে রচিত বই “নেত্রকোণা জেলা চরিতকোষ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।