বড় কুকুরচিতা চিরহরিৎ ভেষজ বৃক্ষ

বড় কুকুরচিতা

বৈজ্ঞানিক নাম:  Litsea monopetala (Roxb.) Pers., Syn. Pl. 2: 4 (1807). সমনাম: Tetranthera monopetala Roxb. (1798), Litsea polyantha Juss. (1805). ইংরেজি নাম: জানা নেই। স্থানীয় নাম: হুউরিয়া, বড় কুকুরচিতা, কাঠ মেদা। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস  
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants উপরাজ্য: Tracheobionta – Vascular plants অধিবিভাগ: Spermatophyta – Seed plants বিভাগ: Angiosperms বর্গ: Laurales পরিবার: Lauraceae গণ: Litsea প্রজাতি: Litsea monopetala.

ভূমিকা: বড় কুকুরচিতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Litsea monopetala) হচ্ছে বাংলাদেশের ভেষজ বৃক্ষ । এটি উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে জন্মায়। বনাঞ্চলের পরিবেশ এদের জন্য উপযুক্ত।

বড় কুকুরচিতা-এর বর্ণনা :

ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি আকৃতির চিরহরিৎ বৃক্ষ। সাধারণতঃ ১০-১৫ মিটার উঁচু, চূড়া ছড়ানো, কচি অংশ তামাটে-রোমশ, বাকল ধূসরাভ-বাদামী। পত্র একান্তর, অত্যন্ত অধিক পার্থক্যমণ্ডিত, ৭-২০ × ৩-১২ সেমি, ডিম্বাকর-আয়তাকার, উল্টা বল্লমাকার অথবা উপবৃত্তাকার- আয়তাকার, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র বা গোলাকার, গোড়া গোলাকার, কিছুটা তির্যক, চর্মবৎ, উপরের পৃষ্ঠ গাঢ় সবুজ ও প্রায় মসৃণ, নিম্নপৃষ্ঠ চকচকে ও তামাটে-রোমশ, পার্শ্বশিরা মধ্যশিরার প্রতিপার্শ্বে ৬-১০টি, প্রগৌণ শিরা সোপানাকার, সুষ্পষ্ট, পত্রবৃন্ত ১.২-২.৫ সেমি লম্বা, রোমশ।

পুষ্পমঞ্জরী মঞ্জরীদণ্ড যুক্ত আম্বেল বিশিষ্ট হেড, মঞ্জরীদণ্ড ০.৫-১.৩ সেমি লম্বা, পুষ্পবৃত্তিকা অতিরোমশ, প্রায় ০.২ সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র ৫টি, অবতল, বর্তুলাকার, ঝিল্লিময়। পুষ্প সবুজাভ-হলুদ, আঁড়াআড়িভাবে প্রায় ০.৫ সেমি। পুষ্পপুট ৫-৬ খণ্ডিত, প্রায় পৃথক। পুংকেশর ৯-১৩টি, পুংদণ্ড রোমশ। গর্ভাশয় সরু গর্ভদণ্ডযুক্ত, গর্ভমুণ্ড ক্ষুদ্র। ফল গোলকাকার থেকে উপবৃত্তীয়, ০.৭-১.২ সেমি লম্বা, পরিপক্ক অবস্থায় কালচে, স্থায়ী পুষ্পপুট ও পুরু বৃন্ত দ্বারা ঊর্ধ্বে উত্তোলিত।

ক্রোমোসোম সংখ্যা : ২০ = ২৪ (Kumar and Subramaniam, 1986)

আবাসস্থল ও বিস্তার:

চিরহরিৎ ও মিশ্র অরণ্য এবং গ্রামের ঝোঁপ। ফুল ও ফল ধারণ করে মার্চ থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। বীজ থেকে নতুন বংশ বিস্তার হয়।

বিস্তৃতি:

ভারত, ভুটান, মালয় পেনিনসুলা, মায়ানমার, নেপাল ও দক্ষিণ-পশ্চিম চীন বাংলাদেশে ইহা সিলেট জেলায় পাওয়া যায় (Alam, 1988)

আরো পড়ুন:  বনঢুলি বা দুপুরমনি ফুল ও মূলের ছয়টি ভেষজ গুণাগুণ

বড় কুকুরচিতা-এর ব্যবহার:

বাকল হালকাভাবে সংকোচক এবং ডায়রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। ইহা পাকস্থলীর উন্নতিসাধক, উদ্দীপক, এর চূর্ণ আঘাতের ফলে আহত অবস্থায় ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, আঘাত বা ক্ষতের কারণে সৃষ্ট ব্যথায় বাকলের গুড়া ব্যবহার করা হয়। প্রাণীর হাড়ভাঙ্গা চিকিৎসায়ও ইহা ব্যবহার করা হয় (Chopra et al., 1956)

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৮ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বড় কুকুরচিতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের কারনে বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বড় কুকুরচিতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে ইন-সিটু ও এক্স-সিটু উভয় পদ্ধতিতে এর সংরক্ষণের প্রয়োজন। 

তথ্যসূত্র:

১. এম কে মিয়া (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩৫৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Ajtjohnsingh

Leave a Comment

error: Content is protected !!