কমরেডগণ, নারী শ্রমিক এই সম্মেলনকে অভিনন্দিত করতে পেরে আমি অতি আনন্দিত। প্রতিটি মেহনতি নারী এবং মেহনতি জনগণের প্রতিটি সচেতন সদস্য যে সব বিষয় ও প্রশ্নে স্বভাবতই আগ্রহী, তা নিয়ে আমি কিন্তু আলোচনা করব না। সে প্রশ্ন হলো সবচেয়ে জরুরি— এ প্রশ্ন হলো রুটি এবং আমাদের সামরিক পরিস্থিতির প্রশ্ন। কিন্তু আপনাদের সভার বিবরণ সংবাদপত্রে যা দেখেছি তাতে এই প্রশ্নগুলি বিশদভাবে আলোচনা করেছেন কমরেড ত্রতস্কি, তিনি সামরিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং কমরেড ইয়াকভলেভা ও সিভদের্স্কি, এরা আলোচনা করেছেন রুটির সমস্যা— তাই এসব প্রশ্ন আলোচনা থেকে আমি বিরত থাকার অনুমতি চাইছি।
সোভিয়েত রিপাবলিকে শ্রমজীবী নারী আন্দোলনের কাজ সম্বন্ধে আমি দুই একটি কথা বলবো। একদিক থেকে সাধারণভাবে সাম্যবাদের দিকে সামাজিক পরিবর্তন ও অন্যদিক থেকে কতকগুলি বিশেষ অবস্থা তাদের সামনে এগিয়ে আসতে বাধ্য করছে। কমরেডগণ, গোড়া থেকেই সোভিয়েত সরকার নারীদের অবস্থার কথা তুলেছিল। আমার মতে, যে সব শ্রমিকের রাষ্ট্র সাম্যবাদের দিকে এগিয়ে চলেছে তাদের কাজ ছিল দুই রকমের। এই কাজের প্রথম অংশ অপেক্ষাকৃত সরল ও সোজা, এবং যে সব পুরানো আইন পুরুষের তুলনায় নারীকে হেয় করে রেখেছে সেই সম্বন্ধে।
যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পশ্চিম ইউরোপের সব মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধিরা জানিয়ে এসেছেন এই সব সেকেলে আইন তুলে দিয়ে আইনত নারীকে পুরুষের সমান অধিকার দেবার দাবি। কিন্তু ইউরোপের একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, এমন কি, সবচেয়ে উন্নত রিপাবলিকান দেশও, এ বিষয়ে সফল হতে পারেনি। কারণ সেখানে রয়েছে পুঁজিবাদ, জমি, কারখানা ও কাজের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা, আর রক্ষা করা হচ্ছে মূলধনের ক্ষমতা, সেখানে পুরুষ তাদের বিশেষ সুবিধা আঁকড়ে ধরে থাকবেই। এ বিষয়ে আমাদের সফল হবার একমাত্র কারণ এখানে ১৯১৭ সালে ৭ই নভেম্বরে শ্রমিকের শাসন কায়েম হয়েছে। সোভিয়েত সরকারের গোড়া থেকেই লক্ষ্য- যাতে সর্বপ্রকার শোষণ দূর হয় ও শ্রমজীবী মানুষের সরকার কায়েম হয়। এই সরকারের লক্ষ্য মূলধনের রাজত্ব ধ্বংস করা, জমিদার ও মালিকদের পক্ষে শ্রমিকদের শোষণ করবার পথ বন্ধ করা। সোভিয়েত সরকারের লক্ষ্য ছিলো এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করা যেখানে ব্যক্তিগত মালিকানার বিলোপ করে শ্রমজীবী মানুষ তাদের জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে- সেখানে থাকবে না জমি, কারখানা ও কাজের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা, যেখানে না সেই ব্যক্তিগত মালিকানা যা আজ দুনিয়ার সর্বত্র এমন কি, যেখানে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার আছে, সেখানে সবচেয়ে গণতান্ত্রিক রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- সেই সব দেশেও পর্যন্ত শ্রমিকদের করেছে দারিদ্র্য ও মজুরি দাসত্ব, আর নারীদের দিয়েছে দ্বিগুণ দাসত্ব।
শ্রমিকদের সরকার হিসাবে সোভিয়েত সরকার তার সূচনার প্রথম মাসেই মেয়েদের সম্বন্ধে সমস্ত আইনের আমূল পরিবর্তন করেছে। যে সব আইন দ্বারা মেয়েদের অধীন অবস্থায় রাখা হয়েছিল সোভিয়েত রিপাবলিক তা নিশ্চিহ্ন করে মুছে ফেলেছে। আমি বিশেষ করে এই সব আইনের কথা বলছি যেগুলি মেয়েদের দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাদের ছোট স্তরে রাখে এবং তখনও খুবই হীন করে রেখেছে। আমি উল্লেখ করছি বিবাহ বিচ্ছেদের আইন, অবিবাহিত মায়ের সন্তানদের সম্বন্ধে আইন ও তাদের ভরণপোষণের জন্য শিশুর পিতার কাছে তার মায়ের অভিযোগ করা সম্বন্ধে আইনের বিষয়।
এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে ঠিক এই ক্ষেত্রেই বুর্জোয়া আইনে, এমন কি সবচেয়ে উন্নত দেশেও, নারীদের দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাদের ছোট এবং হেয় করে রাখা হয়। আর ঠিক এই ক্ষেত্রেই সোভিয়েত সরকার পুরানো অন্যায় আইনের চিহ্ন পর্যন্ত মুছে ফেলেছে- শ্রমজীবী জনসাধারণের কাছে এই সব আইন ছিল অসহ্য। আজ আমরা বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জিত না করেই গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে একমাত্র সোভিয়েত রাশিয়া ছাড়া পৃথিবীতে এমন আর একটি দেশও নেই যেখানে নারীরা সম্পূর্ণভাবে পুরুষের সমান অধিকার পেয়েছে, সেখানে বিশেষ করে প্রতিদিনের পারিবারিক জীবনে নারীকে হেয় করে রাখা হয়নি। এই ছিল আমাদের একটি প্রথম অন্যতম প্রধান কাজ।
যদি বলশেভিকদের বিপক্ষে কোন পার্টির কথা শোন, অথবা রাশিয়ার কোলচাক বা ডেনিকিন অধিকৃত অঞ্চলের কোন খবরের কাগজ হাতে আসে, অথবা সেই সব কাগজের মতাবলম্বী কোন লোকের সঙ্গে কথা বল, তাহলেই তাদের অভিযোগ করতে দেখবে যে সোভিয়েত সরকার গণতন্ত্রের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
আমরা যারা সোভিয়েত সরকারের প্রতিনিধি, বলশেভিক কমিউনিস্ট ও সোভিয়েত সরকারের অনুগত, তাদের বিরুদ্ধে অনবরতই গণতন্ত্রের নিয়ম লঙ্ঘন করবার অভিযোগ করা হয়। এবং তার প্রমাণ স্বরূপ বলা হয় যে সোভিয়েত সরকার গণপরিষদ (কনসটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি) ভেঙ্গে দিয়েছে। এই সব অভিযোগের উত্তরে আমাদের স্বাভাবিক জবাব : যে ধরনের গণতন্ত্র ও গণপরিষদ তৈরি হয়েছে তখন- যখন জমির ওপর কায়েম ছিল ব্যক্তিগত মালিকানা, মানুষের সঙ্গে সমান অধিকার ছিল না, যখন মূলধনের মালিকরা ছিল প্রভু আর অন্য সবাই কাজ করতো তাদেরই জন্য ও তাদের কাছে মজুরির দাস হয়ে থাকতো- সে গণতন্ত্র ও গণপরিষদের আমাদের কোনই প্রয়োজন নেই। এই ধরনের গণতন্ত্র এমন কি সবচেয়ে উন্নত দেশেও দাসত্বকে গোপন করবার জন্যই আবরণের কাজ করেছে। গণতন্ত্র ঠিক যতখানি পরিমাণে শ্রমিক ও শোষিতের কষ্ট লাঘব করে, আমরা সাম্যবাদীরা মাত্র সেই পর্যন্ত গণতন্ত্রের ভক্ত। সারা দুনিয়ার সাম্যবাদের লক্ষ্যই হলো মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা। যারা শোষিত, সমাজ যাদের হীন অবস্থায় রেখেছে, যে গণতন্ত্র তাদের স্বার্থ রক্ষা করে, আমরা সেই গণতন্ত্রকেই আসল গুরুত্ব দিয়ে থাকি। যারা খেটে খাবে না তাদের ভোটাধিকার যদি কেড়ে নেওয়া হয়, আমরা তাকেই বলবো প্রকৃত সাম্য। যে কাজ করে না, তার খাওয়াও চলবে না।
এইভাবে অভিযোগের উত্তরে আমরা বলি আসল প্রশ্ন হলো : কোন দেশে গণতন্ত্র কিভাবে কাজে লাগানো হয়? সমস্ত গণতান্ত্রিক রিপাবলিকেই সমান অধিকার ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আইন ব্যবস্থায়, নারীদের সম্বন্ধীয় আইনে, তাদের পারিবারিক জীবনেও বিবাহ বিচ্ছেদের আইনে দেখা যায়, প্রতি পদেই তাদের ছোট করে রাখা হয়েছে ও সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা বলি: এরই নাম গণতন্ত্রের লঙ্ঘন, আর বিশেষ করে শোষিত মানুষের জন্য এ কথা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। অন্য যে কোন দেশের চেয়ে এমনকি সবচেয়ে উন্নত দেশের চেয়ে সোভিয়েত সরকার যে অনেক বেশি গণতন্ত্র কায়েম করেছে। তার প্রমাণ এই যে আরও যে সব বিষয়ে মেয়েদের হেয় করে রাখা হয়েছিল, সোভিয়েত আইনে তার লেশমাত্র চিহ্ন রাখা হয়নি। আবার বলি, সোভিয়েত সরকার তার সূচনার প্রথম কয়েক মাসেই নারীদের জন্য যতখানি করেছে, আর কোন একটিও রাষ্ট্রে এবং কোনও গণতান্ত্রিক আইনে তার অর্ধেকও করা হয়নি।
অবশ্য এ কথাও ঠিক যে, কেবল মাত্র আইনই যথেষ্ঠ নয় এবং আইন পাস করেছি বলেই আমরা সন্তুষ্ট থাকতে পারি না। কিন্তু নারীদের পুরুষের সমান অধিকার দেবার জন্য আমাদের কাছ থেকে যতখানি আশা করা হয়েছিল আমরা তা সবই করেছি। এবং তার জন্য আমাদের গর্বিত হওয়ার অধিকার আছে। সমস্ত উন্নত দেশের তুলনায় আজ সোভিয়েত নারীদের অবস্থাকে আদর্শ বলা যায়। কিন্তু নিজেদের মধ্যে আমরা এই কথাই বলি যে ও শুধু সূচনামাত্র।
নারীরা যতক্ষণ ঘরকন্নার কাজ করে আটকে থাকে ততক্ষণ তারা বাঁধাবাঁধির মধ্যেই থেকে যায়। নারীদের পূর্ণ মুক্তির জন্য এবং পুরুষের সংগে তার সত্যকার সমতার জন্য প্রয়োজন সামাজিক অর্থনীতি, প্রয়োজন যেন সর্বজনীন উৎপাদনী শ্রমে মেয়েরা অংশ নেয়। তখনই নারীরা সমাজে পুরুষের সমান স্থান পাবে।
তার মানে অবশ্য এই নয় যে উৎপাদনী শক্তি, পরিশ্রমের মাত্রা, পরিমাণ, সময় খাটুনির অবস্থা প্রভৃতি হুবহু পুরুষের মতোই হতে হবে। কিন্তু এ কথা ঠিক যে পুরুষের তুলনায় নারীরা কখনই অর্থনৈতিক দিক থেকে অধীন অবস্থায় থাকবে না। আপনারা সকলেই জানেন যে ঘরকন্নার কাজের বোঝা মেয়েদের ওপর চাপানো হয় বলে সম্পূর্ণ সমান অধিকার পেয়েও তাদের অধীন হয়েই থাকতে হয়। এইসব ঘরকন্নার কাজের মধ্যে বেশিরভাগই কোনো কাজেই লাগে না, অত্যন্ত অসভ্য রকমের ও কষ্টকর। আর নারীদেরই এগুলি করতে হয়। এই খাটুনি অত্যন্ত নিকৃষ্ট আর এর মধ্যে এমন কিছুই নেই যা নারীদের উন্নতির পথে একটুও সাহায্য করে।
পুরোপুরি সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের সাম্যবাদী আদর্শ এবং সেখানে নারীদের জন্য খোলা রয়েছে বিস্তৃত কর্মক্ষেত্র। আমরা এখন খুবই গুরুত্বের সাথে সাম্যবাদী সমাজের ভিত্তি রচনা করছি। প্রকৃতপক্ষে সাম্যবাদী সমাজের গঠন থেকেই শুরু হবে যখন নারীরা সম্পূর্ণ সমান অধিকার পেয়ে এবং নিকৃষ্ট বুদ্ধিনাশা, নিষ্ফল কাজ থেকে মুক্তি পেয়ে নতুন কাজে যোগ দেবে। এ কাজ করতে আমাদের অনেক অনেক বছর লাগবে, আর এর থেকে খুব চট করে বা অত্যন্ত চমকপ্রদ কোন ফলই দেখা যাবে না।
আমরা আদর্শ প্রতিষ্ঠান, ভোজনালয়, শিশুদের রক্ষণাগার (ক্রেশে) গড়ে তুলেছি। এইগুলিই মেয়েদের ঘরকন্নার কাজ থেকে মুক্তি দেবে, আর এইসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে প্রধানত নারীদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। একথা স্বীকার করতেই হবে যে বর্তমানে রাশিয়ায় এই ধরনের প্রতিষ্ঠান খুবই কম, যা কিনা নারীদের পারিবারিক দাসত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারে। এগুলির সংখ্যাও খুব নগণ্য আর সোভিয়েত রিপাবলিক যে অবস্থার মধ্যে পড়েছে- সামরিক ও খাদ্যের অবস্থায় যে বিষয়ে অন্য কমরেডরা আপনাদের কাছে বলেছেন- তাতে আমাদের এইসব কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। তবুও একথা ঠিক যে যেখানেই সম্ভব এই ধরনের প্রতিষ্ঠান, যেগুলি মেয়েদের পরিবারিক দাসত্ব থেকে মুক্ত করে সেগুলি গড়ে উঠেছে। শ্রমিকদের মুক্তি যেমন শ্রমিকদের নিজের দ্বারাই আসে ঠিক তেমনি নারী শ্রমিকদের মুক্তিও তাদের নিজেদেরই আনতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে গড়ে ওঠে সেদিকে নারী শ্রমিকদের নিজেদেরই নজর রাখতে হবে আর এই ক্ষেত্রেই কাজের ভিতর দিয়ে আগেকার ধনতান্ত্রিক সমাজে তাদের যে অবস্থা ছিল, তার আমূল পরিবর্তন আসবে।
পুরনো পুঁজিবাদী সমাজে রাজনৈতিক কাজে যোগ দিতে হলে বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন হতো। তাই এমন কি সবচেয়ে উন্নত ও স্বাধীন ধনতান্ত্রিক দেশেও খুবই অল্প সংখ্যক নারীই রাজনৈতিক কাজে যোগ দিয়ে থাকেন। আমাদের দেখতে হবে যাতে রাজনৈতিক কাজ এমনধারা হয় যে, প্রত্যেকটি শ্রমিক নারীই তাতে যোগ দিতে সক্ষম হয়। যে মুহূর্তে জমি ও কারখানার ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা বিলোপ করা হয়েছে, জমিদার মালিকদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে, সেই মুহূর্ত থেকেই রাজনীতি হয়েছে এত সহজ সরল যে সমস্ত শ্রমজীবী জনসাধারণ এবং শ্রমজীবী নারীরাই তাতে অংশ গ্রহণ করতে পারে। ধনতান্ত্রিক দেশে নারীকে এমন হেয় করে রাখা রাখা হয় যে পুরুষের তুলনায় তারা রাজনৈতিক কাজে খুবই সামান্য অংশগ্রহণ করতে পারে। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্যই প্রয়োজন শ্রমিকেরআধিপত্য এবং তাহলেই রাজনীতির প্রধান প্রধান কাজগুলি এমন হবে যা সোজাসুজিই শ্রমিকদের নিজেদের ভাগ্যের সাথে জড়িত।
এখানে নারী কর্মীদের- শুধু শ্রেণী সচেতন পার্টির নারীই নয়, পার্টির বাইরের সবচেয়ে কম শ্রেণী সচেতন সম্পন্ন নারীদেরও অংশ গ্রহণ করা দরকার। এদিক থেকে সোভিয়েত সরকার নারীদের জন্য খুলে দিয়েছে ব্যাপক কর্মক্ষেত্র।
সোভিয়েত রাশিয়ার যে সব শত্রুরা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে তাদের সাথে লড়াই করে আমাদের খুবই কঠোর অভিজ্ঞতা হয়েছে। শ্রমিক শাসনের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ চালাচ্ছে সামরিক ক্ষেত্রে তাদের সাথেও খাদ্যের ক্ষেত্রে মুনাফাখোরদের সঙ্গে লড়াই চালাতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে অনেক, কারণ যে সব লোক ও শ্রমিক সর্বান্তঃকরণে তাদের শক্তি দিয়ে আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে তাদের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত মোটেই যথেষ্ট নয়। তাই ব্যাপকভাবে পার্টির বাইরের নারী শ্রমিকদের সহযোগিতাকে সোভিয়েত সরকার সবচেয়ে মূল্যবান মনে করে। তারা জেনে রাখুক যে পুরাতন বুর্জোয়া সমাজে রাজনৈতিক কাজে যোগ দিতে হলে দরকার হতো জটিল শিক্ষা গ্রহণের, তাই নারীরা তাতে যোগ দিতে পারতো না। কিন্তু সোভিয়েত রিপাবলিকের এই কর্মধারাই নারী কর্মীদের রাজনৈতিক কাজের পথ খুলে দেয়। এর ফলে তারা তাদের সাংগঠনিক যোগ্যতার দ্বারা পুরুষদের সাহায্য করতে পারে।
আমাদের লক্ষ লক্ষ লোকের স্বার্থে শুধু ব্যাপক সাংগঠনিক কাজেরই প্রয়োজন তা নয়, এমন ছোট ছোট সাংগঠনিক কাজেরও আমাদের প্রয়োজন আছে যেখানে নারীরা যোগ দিতে পারে। যুদ্ধের সময় নারীরা সৈন্যদের সাহায্য করতে পারে এবং সাধারণের মধ্যে প্রচার কাজও চালাতে পারে। এক্ষেত্রে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ করতেই হবে যাতে লালফৌজরা বুঝতে পারে যে তাদের যত্ন নেওয়া ও দেখাশোনা করা হচ্ছে। খাদ্যের ক্ষেত্রেও নারীরা কাজ করতে পারে, যেমন- খাদ্য বিতরণ, জনসাধারণের জন্য খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার উন্নতি করা, আজকাল পেট্টোগ্রাদে যেমন ব্যাপক ভোজনালয় খোলা হচ্ছে, সেই রকম ভোজনালয় আরও অধিক সংখ্যায় খোলা ইত্যাদি।
এইসব ক্ষেত্রে নারী কর্মীদের কাজ প্রকৃতপক্ষে সাংগঠনিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বড় বড় পরীক্ষামূলক কাজের সংগঠনেও নারীদের অংশগ্রহণ করা ও সেগুলির তত্ত্বাবধান করা দরকার যাতে এগুলি অসংলগ্ন ব্যক্তিগত কাজে পরিণত না হয়। বহু সংখ্যক নারী শ্রমিক যোগ দিলে এ সম্পন্ন হতে পারে। আর এ ধরনের কাজ- যেমন খাদ্য বণ্টনের তত্ত্বাবধান, আরও সহজে খাদ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা- ইত্যাদিতে নারীদের বেশ যোগ্যতা আছে। পার্টির বাইরের নারীরা এ কাজ খুবই সহজে করতে পারেন, আর এতে সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়বার সাহায্য হবে সবচেয়ে বেশি।
জমির ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা বিলোপ করবার পর, কারখানা ও কাজের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা প্রায় সম্পূর্ণভাবেই বিলোপ করবার পর সোভিয়েত সরকারের চেষ্টা হচ্ছে সমস্ত মেহনতি মানুষকে- শুধু পার্টির নয়, পার্টির বাইরের ও শুধু পুরুষ নয় নারীদেরও- অর্থনৈতিক সংগঠনের কাজে টেনে আনা। সোভিয়েত সরকার যে কাজ শুরু করেছে তা এগিয়ে যেতে পারে কেবলমাত্র তখনই, যখন রাশিয়ার সর্বত্র হাজার হাজারের স্থলে লক্ষ লক্ষ নারী এই কাজে যোগ দেবে। একমাত্র তখনই আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারবো যে সমাজতান্ত্রিক সমাজের গঠন সুদৃঢ় হবেই। তখন শ্রমিকরা দেখাতে পারবে যে জমিদার ও মালিকদের ছাড়াই তারা চলতে ও চালাতে পারে। সমাজতান্ত্রিক গঠন তখন এতই সুদৃঢ় হবে যে ভিতরের বা বিদেশের শত্রুদের ভয় করবার সোভিয়েত রিপাবলিকের কোন কারণই থাকবে না।
বি দ্র: ১৯১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পার্টির বাইরের নারী কর্মীদের ৪র্থ মস্কো শহর সম্মেলনে লেনিনের বক্তৃতা
ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন (এপ্রিল ২২, ১৮৭০ – জানুয়ারি ২১, ১৯২৪) ছিলেন লেনিনবাদের প্রতিষ্ঠাতা, একজন মার্কসবাদী রুশ বিপ্লবী এবং সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ। লেনিন ১৯১৭ সালে সংঘটিত মহান অক্টোবর বিপ্লবে বলশেভিকদের প্রধান নেতা ছিলেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান।