উদয়ী পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি

[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]দ্বিপদ নাম: Cuculus saturatus সমনাম: নেই বাংলা নাম: উদয়ী পাপিয়া ইংরেজি নাম: Oriental Cuckoo. জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য Kingdom: Animalia বিভাগ/Phylum: Chordata শ্রেণী/Class: Aves পরিবার/Family: Cuculidae গণ/Genus: Cuculus, Linnaeus, 1758; প্রজাতি/Species: Cuculus saturatus Blyth, 1843[/otw_shortcode_info_box]

ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Cuculus গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৪টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে রয়েছে ১১টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. পাতি পাপিয়া, ২. বউকথাকও পাপিয়া, ৩. ছোট পাপিয়া এবং ৪. উদয়ী পাপিয়া। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছে উদয়ী পাপিয়া।

বর্ণনা: উদয়ী পাপিয়া বা হিমালয়ী কোকিল হচ্ছে শ্লেট-ধূসর পাখি, তবে কয়েকটি মেয়েপাখি বাদামি রঙের হয় (দৈর্ঘ্য ৩১ সেমি., ওজন ৯০ গ্রাম, ডানা ১৮ সেমি., ঠোঁট ২.৮ সেমি., পা ২.৩ সেমি., লেজ ১৫ সেমি.)। ছেলেপাখির পিঠ ধূসর। গলা ও বুকের উপরিভাগ ধূসর এবং পীতাভ-সাদা দেহতলে কালো ডোরা থাকে। কালচে ধূসর লেজের আগা সাদা ও লেজের বাইরের পালকে অনুক্রমিক সাদা খাঁজ কাটা রয়েছে। মেয়েপাখির রঙের দুটি পর্যায় থাকে যাকে চেহারার রূপ বলে। সাধারণ চেহারায় ধূসর বুকে লালচে আমেজ ছাড়া ছেলেপাখির মত দেখায়। অন্য চেহারায় লালচে-বাদামি পিঠে অনিবিড় কালচে বাদামি ডোরা ও পীতাভ-সাদা দেহতলে কালচে বাদামি ডোরা আছে। লালচে বাদামি লেজে স্পষ্ট কালচে বাদামি ডোরা থাকে। ছেলে ও মেয়েপাখি উভয়েরই চোখ কমলা-লাল, চোখের কিনারা হলুদ, ঠোঁট শিঙ-সবুজ ও পা হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ও মেয়েপাখির মাথার পিছনের সাদা পট্টি ও পিঠের পালকের ফ্যাকাসে বেড় ছাড়া পুরো দেহই তাদের পূর্ণ বয়স্ক পাখির মত। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে C. s. saturatus বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: উদয়ী পাপিয়া বন, খোলা বনভূমি, ঘেরা ফলের বাগান ও বৃক্ষশোভিত বনভূমিতে বিচরণ করে। সাধারণত পল্লবের নিচে একা লুকিয়ে থাকে। গাছ ও ক্ষুদ্র ঝোঁপে খাবার খায়। খাবার তালিকায় পোকামাকড় ও লোমশসহ শুঁয়োপোকা রয়েছে। হিমালয়, চীন ও সাইবেরিয়ায় মে-জুন প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগের সময় ছেলেপাখি কপট কণ্ঠে ডাকে: উউ্প। মেয়েপাখি জল বুদ্বুদ্ শব্দ তুলে অনুক্রমিক ভাবে ডাকে:কুই কুই-কুইকুইকুইকুইকুই। পূর্বরাগ ঘটে প্রায়ই ভোরে ও গোধূলিতে। বাসা বাঁধেনা ও মেয়েপাখি ছোট পাখি যেমন-চুটকি ও হরবোলার বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ ও আকার পালকমাতার ডিমের সঙ্গে মিলে যায়। ডিম সাধারণত ২.০×১.৩ সেমি. ও ফ্যাকাসে সাদা। পালকমাতার ডিম ফোঁটার ১-২দিন আগে এর ডিম ফোটে।

আরো পড়ুন:  দাগি তামাপাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি

বিস্তৃতি: উদয়ী পাপিয়া বাংলাদেশের অনিয়মিত পাখি; বসন্তে সিলেট বিভাগে ডাক রেকর্ড করার একটি তথ্য রয়েছে। প্রজননের জন্য এরা পাকিস্তান, ভারত, নেপাল ও ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও চীনে আসে এবং শীতে অস্ট্রেলিয়া, নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে যায়।

অবস্থা: উদয়ী পাপিয়া বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বিগত তিন প্রজন্ম ধরে এদের সংখ্যা কমেছে, তবে দুনিয়ায় এখন ১০,০০০-এর অধিক পূর্ণবয়স্ক পাখি আছে, তাই এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এই প্রজাতি পৌঁছেনি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২] বাংলাদেশের ১৯৭৪[১] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই উদয়ী পাপিয়াকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।[৩]

বিবিধ: উদয়ী পাপিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বর্ণিল কোকিল (ল্যাটিন: cuculus = কোকিল, saturatus = বর্ণিল)।

তথ্যসূত্র:

১. ইনাম আল হক ও সুপ্রিয় চাকমা, (আগস্ট ২০০৯)। “পাখি”। আহমাদ, মোনাওয়ার; কবির, হুমায়ুন, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমদ, আবু তৈয়ব আবু। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ২৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা – ৭৩। আইএসবিএন 984-30000-0286-0।

২. “Cuculus saturatus“, http://www.iucnredlist.org/details/61450351/0,  The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

৩. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৫৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!