মে ফ্লাওয়ার বা ফায়ার বল উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের আলংকারিক বিরুৎ

ভূমিকা: ফায়ার বল লিলি, টর্চ লিলি, মে ফ্লাওয়ার (বৈজ্ঞানিক নাম: Haemanthus multiflorus ইংরেজি: ফায়ার বল লিলি, মে ফ্লাওয়ার) এ্যামারাইলদাসি পরিবারের,  স্কাডক্সা গণের একটি এক প্রকারের কন্দল বীরুৎ। এটি ক্রান্তীয় আফ্রিকান প্রজাতি। ফায়ার বল বা মে ফুলের গাছটির লাল ফুলের কারনে আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। এর একটি সাদা ফুল বিশিষ্ট প্রজাতিও (Haemanthus virescens) আছে।[১]

বৈজ্ঞানিক নাম: Haemanthus multiflorus Martyn ex Willd., Sp. Pl. 2: 25 (1799). সমনাম: Scadoxus multiflorus Rafin. (1836). ইংরেজি নাম: ব্লাড লিলি, আফ্রিকান ব্লাড লিলি, পাউডার পাফলিলি, ফায়ার বল লিলি, টর্চ লিলি, মে ফ্লাওয়ার, ফুটবল লিলি, ক্যাথেরাইন হুইল। স্থানীয় নাম: অগ্নিগোলক, বল ফুল। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Monocots. বর্গ: Asparagales. পরিবার: Amaryllidaceae. গণ: Scadoxus  প্রজাতির নাম: Haemanthus multiflorus.

মে ফ্লাওয়ার গাছের বর্ণনা:

ফায়ার বল লিলি বা মে ফ্লাওয়ার বহুবর্ষজীবী শল্ক কন্দাল বীরুৎ। এদের পাতা মূলজ, সরল, বল্লমাকার, অখন্ড, সূক্ষ্মাগ্র এবং শিরা সমান্তরাল, পত্রমূল পরস্পর আচ্ছাদিত। ফুলের দন্ড মাটিতে আবির্ভাবের পর পাতার জন্ম হয়। ফুলের বিন্যাস আম্বেল সদৃশ, সাইম, পত্রবিহীন ও ভৌমপুষ্পদন্ডের অগ্রভাবে জন্মে। চমসা একাধিক, সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত ফুল একত্রে শীর্ষ মঞ্জরী গঠন করে যা মাত্র এক সপ্তাহ স্থায়ী থাকে।

ফায়ার বলের ফুল বহুপ্রতিসম ও উভলিঙ্গ বিশিষ্ট গর্ভশীর্ষপুষ্পী। পুষ্পপুট খন্ড আকারে ৩ + ৩-এ ভাগ থাকে। ফুলের পাপড়ির নিচের অংশ যুক্ত হয়ে নালি গঠন করে। পুংকেশর ৬ টি, পুষ্পপুটলগ্ন, পুংদন্ড লম্বা, পরাগধানী অন্তর্মুখী। গর্ভপত্র ৩টি, যুক্ত, গর্ভাশয় ৩ কোষী, অধোগৰ্ভ। ফল বেরি, গোলাকার, পাকা অবস্থায় লাল।[২]

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

2n = ১৬, ১৮, ১৮ + f[৩]

মে ফ্লাওয়ার-এর বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

খর্বধাবক ও বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার ঘটে। পানির সুনিষ্কাশিত ব্যবস্থা থাকতে হবে। মাটিতে pH ৫.৬ থেকে ৮.৫ মাত্রায় থাকতে হবে। স্বাভাবিক রৌদ্রজ্জ্বল স্থান এই গাছের জন্য ভালো। ফুল ও ফল ধারণ মে-জুন।

বিস্তৃতি:

আদি নিবাস পশ্চিম আফ্রিকার উষ্ণাঞ্চল। বর্তমানে পৃথিবীর উষ্ণ অঞ্চলের উদ্যানে চাষাবাদ হয়। বাংলাদেশের বহুপারিবারিক উদ্যানে চাষ করা হয়।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ভেষজ গুণ:

এটি অন্যতম একটি সুদৃশ্য সপুষ্পক গাছ। বাহারি উদ্ভিদরূপে বাগানে চাষ করা হয়। কন্দ বিষাক্ত, খাদ্যরূপে গ্রহণ করা হলে লালা নির্গত সহ বমি ও উদরাময় রোগ দেখা দেয়। এতে লাইকোরাইন সহ অন্যান্য ক্ষারীয় পদার্থ বিদ্যমান। ইহার ফুল মৌমাছি, প্রজাপতি ও পাখিদের আকর্ষন করে। আফ্রিকার কিছু দেশে এর কন্দ মাছের খামারে বিষ প্রয়োগের জন্য ব্যবহার করা হয়। গৃহপালি পশুদের জন্য এটি প্রাণঘাতী।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

সাউথ আফ্রিকায় এর কন্দ ভিনেগারের সাথে একত্রে মিশ্রিত করে খামারের কৃষকদের হাঁপানি ও শোথ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।

মে ফ্লাওয়ার গাছের অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)  মে ফ্লাওয়ার প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যত্ন সহকারে বাগানে চাষাবাদের জন্য বিপদের সম্ভাবনা নেই এবং বাংলাদেশে এটি সংরক্ষণ নির্ভর হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে মে ফ্লাওয়ার সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি বর্তমানে যত্ন সহকারে আবাদ করলে বাংলাদেশের পরিবেশে ঠিকে থাকতে পারবে।[২]

তথ্যসূত্র:

১.  দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে ১৯৮৮; পৃষ্ঠা- ৫১, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭

২. ও আর সিকদার ও এম এ হাসান  (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১তম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৬৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

৩. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.   

বি.দ্র: ছবিটি নেওয়া হয়েছে উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে। আলোকচিত্রী: Nikhilb239

আরো পড়ুন:  মাকড়শা হুড়হুড়ি উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে আলংকারিক বিরুৎ

Leave a Comment

error: Content is protected !!