আসামে এনআরসি হচ্ছে জনগণকে দাসত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করার কংজেপি-বামফ্রন্টের ষড়যন্ত্র

আসামে এনআরসি হচ্ছে ভারতীয় জনগণকে সস্তায় শ্রমশক্তি বিক্রি এবং চিরস্থায়ী দাসত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করার কংগ্রেস, বিজেপি এবং বামফ্রন্টের ষড়যন্ত্র। আসামে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন নাগরিককে অনাগরিক ঘোষণা করা হয়েছে। এই অনাগরিকদের ভেতরে আছে বিভিন্ন আদিবাসী ও ধর্মীয় মানুষ। আসামে প্রচার আছে যে বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ আসামে গেছে।

বাংলাদেশ আসামের চেয়ে বহুদিক দিয়ে ধনী। বাংলাদেশ থেকে আসামে মানুষ না গেলেও অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই ব্রিটিশদের মাধ্যমে মধ্য ও পূর্ব ভারত থেকে অনেক মানুষ গেছে আসামে যাদেরকে গণশত্রু বিজেপি-কংগ্রেস-বামফ্রন্ট বলছে বাংলাদেশী। তারা প্রচার করেছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর যারাই আসাম গিয়েছেন তারা সবাই অনুপ্রবেশকারী বা বেআইনি নাগরিক।

এই বেআইনি নাগরিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্প বা ডি-ক্যাম্প। এসব ক্যাম্প হিটলারের ঘেটো এবং বন্দি শিবিরের আদলে তৈরি করা। বিজেপির নেতা মোদী-আদভানি অমিত শাহরা এসব ক্যাম্পে রাখা মানুষদেরকে সস্তায় শ্রমিক হিসেবে আম্বানি-আদানি ও টাটা বিড়লাদের কারখানায় বিনা পারিশ্রমিকে কাজে লাগাতে চায়। প্রায় শত বছর ধরে কংগ্রেসের পা চেটে আসছে যেই বামফ্রন্ট তারাও এই নির্যাতিত গরীব জনগণের শ্রম শোষণ করে আদানি আম্বানির শোষণের চেম্বারে ঢোকাতে চায়।

আসামে নাগরিকপঞ্জির ইতিহাস

২০১৭ সালের শেষ দিন আসামে যে নাগরিক তালিকা ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস’ (এনআরসি) তৈরি করা হয়েছে তাতে নেই প্রায় অর্ধেক মানুষের নাম। টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে এই প্রক্রিয়ার ফলে আসামে ‘৩৮ লাখ অবৈধ নাগরিক চিহ্নিত’[১] হয়েছে। আর এই তালিকা তৈরির সময় এসব বাংলাভাষী মানুষের ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, আধার কার্ড, জমির দলিল, পাসপোর্ট, প্যান কার্ড, অন্যান্য সব সরকারি নথিপত্র বা যা কিছু ডকুমেন্ট ছিলো তাদের সাথে, সব কিছু যাচাই ও পরীক্ষার নামে সেসব মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছিল এবং সেগুলো আর কেউই ফেরত পায়নি।

আরো পড়ুন:  অসমে বাঙালির শরশয্যা

এতোদিন বলা হতো কোটি কোটি অবৈধ বাঙালি আসামে আছে। সর্বশেষ ৩১ আগস্ট ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত এনআরসি’তে সংখ্যাটি ১৯ লাখে এসে নেমেছে।[২] এইসব হচ্ছে আসামের জনগণকে শোষণ করে দিল্লির তখতে তাউসে লুটের সম্পদ আরো বাড়ানোর জন্য। দিল্লি গত সাত দশকে আসামে একটি “আধিপত্যবাদী অসমিয়া রাজনৈতিক সমাজ” তৈরি করেছে। এরাই মূলত দিল্লির বিস্তারবাদী নীতি বাস্তবায়ন করে জনগণের উপর নিপীড়ন শোষণ ও গণহত্যা চালাচ্ছে। এই নিপীড়কদের ভেতরে আছে কংগ্রেস-বিজেপি এবং উভয় দলের শিল্পপতিরা, যারা গত সাত দশকে “বেপরোয়াভাবে অসমিয়াকরণের নীতি অনুসরণ করেছে”।

সিপিএম ও বামফ্রন্ট আসামে এনআরসি চায়

আসামে এনআরসির দাবি ছিলো ১৯৮০-র দশক থেকে। প্রতিক্রিয়াশীল কংগ্রেস-বিজেপি আসামে এনআরসি চালু করেছে এবং সিতারাম ইয়েচোরা স্বাক্ষরিত বামফ্রন্ট যে বিবৃতি দেয় ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে তার শেষ বাক্যটি দেখলে দেখা যাবে, সেখানে লেখা আছে, “The Left parties are opposed to the NRC process, in any form, being extended to the rest of India.” অর্থাৎ ভারতের অন্যত্র এনআরিকে প্রসারিত করা যাবে না। বামফ্রন্টের কথার অর্থ, আসামে এনআরসি চলবে। এইটার অর্থ জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়াশীল গণশত্রুদের পার্টি সিপিএম আর বামফ্রন্ট আসামে এনআরসি চেয়েছে।[৩]

যেদিন এনআরসি’র সর্বশেষ তালিকা বেরোয় সেদিন আসামের সিপিএম যে বিবৃতি দেয়, তার দুটো বাক্য এরকমের: তালিকায় “অন্তৰ্ভুক্ত হৈছে তেওঁলোকক নাগৰিকত্ব (নাগৰিক পঞ্জীয়ন আৰু জাতীয় পৰিচয়পত্ৰ প্ৰদান) বিধি, ২০০৩ অনুসৰি অনতিপলমে সচিত্ৰ পৰিচয়পত্ৰ প্ৰদান কৰা প্ৰয়োজন। … … চি পি আই (এম)ৰ সুচিন্তিত অভিমত হ’ল সম্পূৰ্ণ ন্যায়িক প্ৰক্ৰিয়াৰেহে এই আপীলসমূহ বিচাৰ কৰা উচিত।”[৪] বাক্যগুলো খুবই স্পষ্ট, যাদের নাম তালিকায় উঠেছে তাদেরকে সচিত্র পরিচয়পত্র দেয়া হোক এবং যাদের নাম নেই, তাদেরকে ন্যায় প্রক্রিয়ায় আপিলে বিচার করা উচিত। পুরো বিবৃতিটির কোথাও নেই এনআরসি বাতিল করতে হবে বা বিজেপির গণহত্যার বিচার করতে হবে।

আরো পড়ুন:  ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভবিষ্যৎ ফলাফল

আলোকচিত্রের ইতিহাস: আসামে এনআরসি দ্রুত প্রকাশ করার আর্জিতে সিপিআই (এম)-এর আসাম শাখার মিছিল।

তথ্যসূত্র:

১. আনিস রায়হান, “আসামে নাগরিকত্ব সংকট: ভবিষ্যৎ কী?“, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮, কলাম, বাংলা ট্রিবিউন, সম্পাদক: জুলফিকার রাসেল, প্রকাশক: কাজী আনিস আহমেদ, লিংক http://www.banglatribune.com/columns/opinion/280089/
২. যুগান্তর ডেস্ক, “আসামে নাগরিক তালিকা প্রকাশ”, ৩১ আগস্ট ২০১৯, https://www.jugantor.com/international/215613/
৩. Sitaram Yechury et. al. September 12, 2019; “NRC in Assam: Ensure Justice for All” https://www.cpim.org/pressbriefs/nrc-assam-ensure-justice-all
৪. ফেসবুকে প্রচারিত প্রেসবিজ্ঞপ্তি এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তির ভিডিও, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, https://www.facebook.com/cpimassam64/posts/2487774591314926; ভিডিও লিংক: https://www.facebook.com/watch/?v=507145023382975

Leave a Comment

error: Content is protected !!