জিনিয়া শীতকালীন মৌসুমের বাগান ও টবে চাষযোগ্য পরিচিত আলংকারিক ফুল

ভূমিকা: জিনিয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Zinnia elegans ইংরেজি: Zinnia) এ্যাস্টারেসি পরিবারের,  জিনিয়া গণের একটি এক প্রকারের বিরুৎ। এটি মেক্সিকার প্রজাতি। লাল, হলুদ, গোলাপি, বেগুলি নানা রঙের ফুল ফোটে।

বৈজ্ঞানিক নাম: Zinnia elegans Jacq., Col. 3: 152 (1789). ইংরেজি নাম: Zinnia. স্থানীয় নাম: জিনিয়া। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. বর্গ: Asterales. পরিবার: Asteraceae. গণ: Zinnia  প্রজাতির নাম: Zinnia elegans

জিনিয়া গাছের বর্ণনা:

জিনিয়া ঋজু, রোমশ, একবর্ষজীবী বীরুৎ। এই উদ্ভিদ অনূর্ধ্ব ৫৪ সেমি বা ততোধিক লম্বা হয়। পত্র স্পষ্টতঃ বল্লমাকার, অখন্ড, সামান্য রোমশ। পুষ্পবিন্যাস শিরমঞ্জরী, অসম জননকোষী, একল, পুষ্পদন্ডবিশিষ্ট, ব্যাস ৯ সেমি বা ততোধিক, দ্বিতয় বা একক, মঞ্জরী পত্রাবরণ অর্ধবেলনাকার। মঞ্জরীপত্র বহু-স্তরে বিন্যস্ত, স্থূলা, শুষ্ক, প্রশস্ত, অভ্যন্তর থেকে বাইরের দিক ক্রমান্বয়ে খাটো, পুষ্পধার দীর্ঘ, শল্কবৰ্মীয়, শল্কবৰ্ম বর্ণিল, রোমশ।

প্রান্ত পুষ্পিকা দেখতে জিহ্বা-আকৃতি, ১ বা বহু-স্তরে বিন্যস্ত ও স্ত্রীলিঙ্গ। মধ্য পুষ্পিকা সমাঙ্গ, নলাকার, বহু-স্তরে বিন্যস্ত ও উভলিঙ্গ। স্ত্রী পুষ্পিকার দলমণ্ডল অখন্ড পরিব্যাপ্ত দলফলক বিশিষ্ট লাল, হলুদ বা বেগুনি, মধ্য পুষ্পিকার দলমণ্ডল ৫-খন্ডিত দলফলক বিশিষ্ট হলুদ।

পরাগধানী উপাঙ্গবিশিষ্ট, নিচের অংশ অখন্ড, পুংদন্ড দীর্ঘ হয়। উভলিঙ্গ পুষ্পিকার গর্ভদন্ডীয় বাহু রোমশ, শীর্ষ উপরিভাগে রোমযুক্ত মুকুটসহ স্থূলা। জিনিয়ার ফল সিপসেলা, প্রান্ত পুষ্পিকার সিপসেলা পৃষ্ঠীয়ভাবে চাপা, দৈর্ঘ্য ১০ ও প্রস্থ ১৫ মিমি। মধ্য পুষ্পিকার সিপসেলা ৪-কৌণিক, রোমশ, ৯.০×২.৩ মিমি, ৪ শূকবিশিষ্ট খাঁজকাটা। [১]

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

২n = ২৪ (Fedorov, 1969)।

জিনিয়া ফুলের বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

মৌসুমী ফুলের মধ্যে জিনিয়া অনেকের কাছেই পরিচিত। দো-আঁশ বা বেলে দোআঁশ উর্বর উচু ও রোদযুক্ত জমিতে বা টবে জিনিয়ার চাষ করা যায়। জিনিয়াকে মূলত শীতকালীন ফুল ধরা হলেও উভয় ঋতুতেই এর চাষ হয়ে থাকে। বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিতে পাতা কুকড়ে যায় এবং ফুল ছোট হয়। কিন্তু শীতকালে এ সমস্যা থাকেনা। কোনো জায়গায় একবার জিনিয়ার চাষ করা হলে এমনিতে সেখানে পরবর্তীতে বীজ পড়ে চারা উৎপন্ন হয়ে থাকে। সমতল ও পার্বত্য অঞ্চলে জুন মাসের মাঝামাঝি এবং টবে বা গামলায় অক্টোবর মাসে বীজ বপন করতে হয়। প্রস্তুত করা বীজতলায় জুন মাসের মাঝামাঝি এবং টবে অক্টোবর মাসে বীজ বপনের ব্যবস্থা নিতে হবে।[২]

বিস্তৃতি:

মেক্সিকোতে স্থানীয়ভাবে জন্মে। বাংলাদেশে এটি বাগানে আবাদ করা হয়।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

জিনিয়া রঙিন ফুল হওয়ার কারনে শীতকালে বাগানে সর্বজনীনভাবে আবাদ করা হয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)  জিনিয়া প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে জিনিয়া প্রজাতিটি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। তবে বাগানে চাষাবাদ করে এর বিস্তার ঘটানো দরকার।[১]

তথ্যসূত্র:

১ এ বি এম এনায়েত হোসেন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ষ্ঠ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৮৮-৮৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. সিরাজুল করিম আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের চাষ প্রথম প্রকাশ ২০০১ ঢাকা, গতিধারা, পৃষ্ঠা ১০১-১০৩। আইএসবিএন 984-461-128-7

বি.দ্র: ছবিটি নেওয়া হয়েছে উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে। আলোকচিত্রী: Narek75

আরো পড়ুন:  সন্ধ্যামালতী বাগানের জনপ্রিয় আলংকারিক ফুল

Leave a Comment

error: Content is protected !!