প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়াতে বাহারি ফুলের ভূমিকা

প্রকৃতির মোহময় অফুরন্ত সৌন্দর্য সম্ভার ফুলে ফুলে চারদিক ভরে আছে। ফুল সুন্দরের প্রতীক, সুন্দরই আবার চিরন্তন আনন্দের উৎস। সৌন্দর্য, শান্তি এবং প্রীতির মাধ্যম হ’ল বাহারী ফুল। মানুষের অন্তরের রমণীয় সুকুমারবৃত্তি সমূহের নয়ন শোভন প্রতিভাত রূপই হ’ল সুন্দর আর সৃষ্টির শক্তি। উপনিষদে তাই বলা হয়েছে— “আনন্দ-রূপ মতং যদ, বিভাতি”, যা প্রকাশমান, তা তাঁর আনন্দস্বরুপ, অমতস্বরপে। স্রষ্টার সৃষ্টিতে আনন্দই তার প্রেরণা, দার্শনিক সক্রেটিস (Socrates) তাই বলেছেন— “I pray there, 0 God that I may be beautiful within”. কবি কীটস বলেছেন—“A thing of beauty is a joy for ever”, বর্ষার রজনীগন্ধা, শরতের শিউলি ও দোপাটি এবং বসন্তের কৃষ্ণচড়া (গুলমোহর ) প্রাকৃতিক শোভা বর্ধন করে, চারদিক সমধুর গন্ধে ভরে তোলে। ফুল তাই মানুষের মনের সক্ষ্মবৃত্তি, অনুভূতি এবং কোমলতার বিকাশ ঘটায়, মনের জানালায় নৈসর্গিক শোভা বৃদ্ধি করে।

মানুষের সৌন্দর্য চেতনায় ফুল অনুপমা, অপরাজিতা। নন্দনতত্ত্বের রসিকজনের ফুলের রূপে তাই বোধ হয় সতত বিমোহিত। দেবতার উদ্দেশে পুষ্পাঞ্জলি তাই বোধ হয় মনের গ্লানিকে দূর করে, মনকে সুন্দরভাবে ফুলের মতো প্রস্ফুটিত করতে সাহায্য করে। শিশুর সৌন্দর্য ও পবিত্রতার সাথে একমাত্র ফুলই তুলনীয়। ক্ষণিকের জন্য হলেও মানুষের হৃদয় ফুলের বাহারী সৌন্দর্যে আনন্দে ভরে ওঠে, প্রেমিক-প্রেমিকার মনে দোলা জাগে। জীবনের পরিপূর্ণতায় সৌন্দর্য অনুধাবনে ফুলের তাই এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে। পৃথিবীর এক পরাক্রমশালী পুরুষকারবাদী বীর ইতিহাসের এক বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব নেপোলিয়ানও একসময় বলেছিলেন-— ফুল যাকে আকৃষ্ট করে না, তার বাঁচার কোন অর্থই নেই।” প্রকৃতির এই অযাচিত গল্প সম্ভার মনের ক্ষুধা দূর করে। রসিক কবি তাই বলেন— “ভিক্ষুক এক পয়সা জটলে কিনিও খাদ্য। দ’ পয়সা পেলে কিনিও ফুল।” কবি, দার্শনিক, রাষ্ট্রনায়ক, সাধুসন্ত এমনকি নিষ্ঠরতম ঘাতকও তাই একগুচ্ছ ফুলের স্পর্শে নিজেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও সুন্দর সহজভাবে ফিরে পায়। কবি ওয়ার্ডস ওয়ার্থ (Wordsworth)-এর ডাফোডিল (Daffodil) তাই সোহাগিনী ফুল, সকালে ফোটে, বিকালের অস্তাচলে ঝরে যায়।

আরো পড়ুন:  নারকাটা সপুষ্পক আরোহী লতা

প্রাজ্ঞজনের কথায়—“A lily of a day is more fairer than an oak of three hundred years’ ফুলের স্বর্গীয় সৌন্দর্য প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধে শ্রান্ত, ক্লান্ত, ক্ষুব্ধ মানুষের মুখে ক্ষণিকের জন্য হলেও তাই হাসি ফোটায়। Francis Bacon তাই বলেছেন—“God Abmightie first planted a garden, And indeed, it is the purest of Humane pleasure”

প্রখ্যাত রুশ ঔপন্যাসিক ডষ্টোয়েভস্কি (Dostoyevski) বলেছেন“.beauty will save the the world”। বর্ণলাবণ্য অমরার সুরভিত কুসুমকলির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাই সারা বিশ্বকে রক্ষা করুক।

মানুষের সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য খাদ্য-ফসলের চাষের সাথে ফুলচাষের ব্যাপকতা ও প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রাম ও নগর সভ্যতায় ফুলচাষ আজ অপরিহার্য। বাড়ীর আঙ্গিনায়, উঠানের চারপাশে প্রত্যেক গৃহস্থই কিছু না কিছু দু’চারটি ফুলের গাছ স্বভাবতই না লাগিয়ে পারে না। সারাদিনের ক্ষুন্নিবৃত্তির তাগিদে নিরলস পরিশ্রমের পর ফুলের বাগানে যে কোনো মানুষই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। একটি চীনা প্রবাদবাক্য,  “Habits and Customs differ, but all people have the love of flowers in common”, অর্থাৎ স্বভাব ও রীতি ভিন্ন হলেও সব মানুষই ফুল ভালবাসে।

তথ্যসূত্রঃ

১. বালাইলাল জানা: ক্যাকটাস ও ফুলচাষ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তকপর্ষৎ, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ মার্চ ১৯৮৮, পৃষ্ঠা, ৩০-৩২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!