মালতী লতা বাংলাদেশে জন্মানো আলংকারিক ও ভেষজ উদ্ভিদ

ভূমিকা:  মালতীলতা, মালতী (বৈজ্ঞানিক নাম: Aganosma dichotoma ইংরেজি : Garlic Vine) এটি এ্যাপোসিয়েনাসি পরিবারের এ্যাগানসমা গণের লতা জাতীয় উদ্ভিদ। বাড়িতে বা বাগানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো হয়।  

বৈজ্ঞানিক নাম: Aganosma dichotoma (Roth) K. Schum. in Engler & Prantl, Nat. Pflanzenfam. 4(2): 173 (1895). সমনাম: Echites dichotoma Roth (1819), Echites heynii Spreng. (1824), Aganosma caryophyllata G. Don (1837), Chonemorpha dichotoma G. Don (1837). স্থানীয় নাম: মালতীলতা, মালতী। জীববৈজ্ঞানিকশ্রেণীবিন্যাসজগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Tracheophyta. শ্রেণী: Magnoliopsida. বর্গ: Gentianales. পরিবার: Apocynaceae. গণ: Aganosma.প্রজাতি: Aganosma dichotoma.     

বর্ণনা:

মালতী বৃহৎ কাষ্ঠল, পেঁচানো লতা জাতীয় গুল্ম। তরুণ লতায় প্রচুর দুগ্ধ মতো ক্ষীর বের হয়। পাতা প্রতিমুখ, পত্রবৃন্ত দেড় সেমি লম্বা, পত্রফলকের দৈর্ঘ্য ৮-১০ সেমি ও প্রস্থ ২.৫-৬.০ সেমি, ডিম্বাকার বা উপবৃত্তাকার, স্থূলাগ্র, অল্প দীর্ঘায়ু, নিম্নাংশ গোলাকার স্থূলাগ্র, পার্শ্ব শিরাসমূহ ৩-৫ জোড়া, মসৃণ বা অঙ্কীয় পৃষ্ঠ ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, সাইম প্রান্তীয়, করিম্বের ন্যায়, শিথিল, রোমশ।

মালতীর ফুল ছোট, সাদা। বৃতি অভ্যন্তরে গ্রন্থিল, খন্ডসমূহ রৈখিক-বল্লমাকার, পরিব্যাপ্ত, বাইরের দিক ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত। দলনল সভঙ্গ, কণ্ঠদেশ রোমশ, দৈর্ঘ্যে বৃতি খন্ডের সমান, দলখন্ড অনূর্ধ্ব ৪ সেমি লম্বা। পুংকেশর অর্ন্তভুক্ত, পরাগধানী অবৃন্তক ও সূচ্যগ্র । চক্র অর্থাৎ ফলক বৃহৎ, গর্ভাশয় লুকায়িত করে রাখে। ফলিক্যাল ২টি, দূরাপসারী, ঘন পশমী, ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত।[১]

অন্যান্য নাম: মালতী ছাড়াও এর আর একটি নাম বাংলায় পরিচিত, তা হলো গন্ধমালতী। অন্যান্য ভাষায় এর নাম হলো, উড়িষ্যায়- গন্ধ মালতী, তেলেগুতে- মধুমালতী, পালামালে। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Aganosma dichotoma (Roth) K. Schum. (এর পূর্বের নাম (synonym)- A. caryophyllata (G. Don) গোত্র- এপোসাইন্যাসী।[২]

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

২n = ২২ (Kumar and Subramaniam, 1986)

বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

বীজ দ্বারা সহজেই বংশ বিস্তার করা যায়; তবে প্রয়োজনে দাবাকলমও ব্যবহার করা হয়। বনাঞ্চল পরিবেশে জন্মে কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ পেলে বাড়ির বাগানেও বেচে থাকতে পারে। ফুল ও ফল ধারণ মে থেকে জানুয়ারি।  মালতীর মূলের ক্বাথ জ্বর উপশমে বলবর্ধক এবং মূত্র সংক্রান্ত অসুবিধা প্রশমনের জন্য ব্যবহার করা হয় (Nayer et al., 1989)।

বিস্তৃতি:

বাংলাদেশে ও ভারতের আঞ্চলিক প্রজাতি। ১৯৫৩ সালে ঢাকা থেকে Datta and Mitra কর্তৃক নথিভূক্ত করার পর বাংলাদেশের আর কোথাও থেকে ইহার সংগ্রহের বিবরণ পাওয়া যায়নি (Rahman et al., 2000)।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)  মালতী লতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের আবাসস্থান ধ্বংসের কারনে সংকটাপন্ন।বাংলাদেশে মালতী লতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে ইন-সিটু ও এক্স-সিটু উভয় প্রকারে সংরক্ষণের প্রয়োজন।   

তথ্যসূত্র:

১. এম আতিকুর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ০৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৮৩-১৮৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. ড. সামসুদ্দিন আহমদ: ওষুধি উদ্ভিদ (পরিচিতি, উপযোগিতা ও ব্যবহার),  দিব্যপ্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, জানুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা, ৭৮-৭৯

বি.দ্র: ছবিটি নেওয়া হয়েছে উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে। আলোকচিত্রী: Dinesh Valke

আরো পড়ুন:  পলাশ ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলের দৃষ্টিনন্দন আলংকারিক ফুল

Leave a Comment

error: Content is protected !!