মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী তৈরির জন্য মানুষের শ্রম এবং মাল-মসলা ও যন্ত্রপাতির সমাহারকে উৎপাদনের উপায় বা উৎপাদনের উপকরণ (ইংরেজি: Means of Production) বলা যায়। ‘উৎপাদনের উপায়’ বলতে তাই মানুষের শ্রমশক্তি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ উভয়কে বুঝায়। মানুষের শ্রম যার উপর প্রয়োগ করা হয় তাকে বলা যায় শ্রমের মাধ্যম বা শ্রমের উপায়। এই অর্থে শ্রমের উপায় বলতে যে সমস্ত বস্তু এবং যন্ত্রপাতির দ্বারা মানুষ তার প্রয়োজনীয় কোনো কিছু উৎপাদন করে সে সমস্ত বস্তু এবং যন্ত্রপাতিকে বুঝায়।
প্রাচীনকালে মানুষ প্রধানত লাঠি এবং ঘর্ষিত পাথরের অস্ত্র ব্যবহার করে তার জীবনের প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ এবং তৈরি করত। তাই প্রাচীনকালের মানুষের কাছে তার শ্রমের উপায় বা মাধ্যম ছিল লাঠি এবং পাথরের অস্ত্র। আধুনিক মানুষের কাছে তার শ্রম প্রয়োগের হাতিয়ার হচ্ছে বিবিধ রকম যন্ত্রপাতি। শ্রমের মাধ্যমের মধ্যে জমি, শ্রমের স্থান বা ঘর, রাস্তা ঘাট, খাল, নদী, পরিবহনের গাড়ি, জাহাজ প্রভৃতিকেও অন্তুর্ভুক্ত করতে হয়। অর্থাৎ উৎপাদনের জন্য শ্রমের কার্য্কর প্রয়োগের যাবতীয় উপকরণই শ্রমের উপায় বা মাধ্যম।
প্রাচীনকাল হতে শুরু করে মানুষের শ্রমের প্রয়োগে উৎপাদনের উপকরণ ক্রমান্বয়ে উন্নত এবং পরিবর্তিত হয়েছে। মানুষের শ্রমই যে কেবল উৎপাদনের উপকরণ পরিবর্তন করেছে তাই নয়। উৎপাদনের উপকরণও আবার শ্রমের ক্ষেত্রে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্দিষ্ট করেছে। এক জোড়া গরু এবং একখানি লাঙ্গল যখন উৎপাদন বা শ্রমের উপকরণ ছিল তখন শ্রমের ক্ষেত্রে মানুষের সম্পর্ক ছিল প্রধানত ব্যক্তিগত এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন। কিন্তু আধুনিককালে জটিল এবং বৃহৎ যন্ত্রপাতি যেখানে উৎপাদনের প্রধান উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে শ্রমের ক্ষেত্রে মানুষের সম্পর্ক অপরিহার্যরূপে যৌথ এবং সম্মিলিত সম্পর্কের রূপ গ্রহণ করেছে।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৮৩-২৮৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।