ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি (Kohlrabi) শীতকালীন তরকারির। তরকারির অন্যান্য মধ্যে কপির সমাদর এসময় খুবই বেশি। প্রাচীনকালে গ্রিক ও রোমানরা কপি খেতেন। কপি সেইজন্যে অতি প্রাচীন তরকারি। ইংরেজরা ভারতে প্রথম কপি নিয়ে এসেছিলেন। বলা হয়ে থাকে উইলিয়াম কেরি ১৮২০ সালে প্রথম ফুলকপি, বাঁধাকপি প্রভৃতি এনে বাংলায় এই সবজির চাষ করিয়েছিলেন। ভারতে প্রচলিত কপি সাধারণত তিন রকমের ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ওলকপি (ওলকপিকে গট কপিও বলা হয়)।
সুস্থ থাকতে ফুলকপি, বাধাকপি ও ওলকপির ব্যবহার:
১. কপি স্তন্যের দুধ বাড়িয়ে দেয়, মধুর, বীর্যবর্ধক, শীতল, গরিষ্ঠ। দীপন (কর্মপ্রেরণা দেয় উদ্দীপ্ত করে), সহজে হজম হয়, বাত সৃষ্টি করে এবং পিস্তু ও কফ নাশ করে।
২. ফুলকপি ও বাঁধাকপি রুলে মধুর, বিপাকে তিক্ত, শরীর শীতল করে, লঘু, দীপন (উদ্দীপ্ত করে), পাচন (সহজে হজম হয়), কামোত্তেজক, হার্টের পক্ষে ভাল, মলমূত্র প্রবর্তক এবং বাতকারক।
৩. কপি কফ, পিত্ত, জ্বর, প্রমেহ (যৌনব্যাধি), মূত্রকৃচ্ছ (প্রস্রাব কম হওয়া), কুষ্ঠ, কাশি, শ্বাসকষ্ট, রক্তের দোষ (রক্তবিকার), লিভার বেড়ে যাওয়ার রোগ, পিত্তের প্রকোপ শরীরের ভেতরের ফোঁড়া বা দুষ্ট ব্রণ নাশ করে।
৪. গর্ভাশয়ের বল বৃদ্ধি করে।
৫. গাঁটকপি বা ওলকপি ইংরেজিতে যাকে নলকুল বলা হয় রসে মধুর, উষ্ণবীর্য (উগ্র সম্পন্ন-কর), সারক (মলমূত্র বায়ু নিষ্কাষণ করে), রুচিকর, গুরু (হজম দেরিতে হা), কফ নাশক, বাতকারক, এবং পিও প্রকোপক।
৬. ওলকপি প্রমেহ, খাসের অসুখ, কফ ও কাশিতে উপকার দেয়।
৭. কপির বীজ সারক (বায়ু মল মূত্র নিষ্কাশনে সাহায্য করে), কর্মে উদ্দীপ্ত করে (দীপন), পাচন (সহজে হজম হয়) এবং কৃমিনাশক।
৮. যাঁরা রক্তপিত্ত (স্কাভি) রোগে ভুগছেন তাঁদের কপি খাওয়া ভাল।
৯. কুষ্ঠ রোগের ফোড়ার ওপর বাঁধাকপির পাতা বেঁধে রাখা হয়।[১]
খাওয়া-দাওয়ায় তিনকপির গুরুত্ব:
বাঁধাকপির কচি পাতা কুচিয়ে ও ফুলকপির টাটকা ফুল ছোট ছোট করে ভেঙে স্যালাড তৈরি করা হয়। তিন রকমের কপিই বাঙালি রায় প্রিয়। ফুলকপির ডালনা, ছেচকি, দম, স্টু, ভাজা ও বেসন-ভাজার তুলনা নেই। ফুলকপির ডালনায় টোমাটো ও মটরশুটি যোগ করলে স্বাদ আরও বাড়ে। বাঁধাকপির ক্ষেত্রেও সেই একই কথা। ঘি গরম মশলা দিয়ে ওলকপির দম ও স্বাদে কিছু খাটো নয়। বাঁধাকপিতে পাতার পরে পাতা মোড়া থাকে বলে একে শতপদও বলা হয়।
বৈজ্ঞানিক মতে : কপিতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটস, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস ও লোহা আছে। ভিটামিন এ বি আর সি আছে। আছে অল্পমাত্রায় তামা, আয়োডিন, পাটাশিয়াম থাকে।
তথ্যসূত্রঃ
১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা,১১৯-১২০।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Jeremy Keith
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।